শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

গেইল ঝড়ে খুলনা টাইটান্সকে বিদায় করে টিকে রইল রংপুর

 

স্পোর্টস রিপোর্টার : গেইল ঝড়ে বিপিএলের ফাইনালের আগেই বিদায় নিতে হলো খুলনা টাইটান্সকে। গতকাল এলিমিনেটর ম্যাচে খুলনা টাইটান্সকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের দৌড়ে টিকে গেল রংপুর রাইডার্স। পুরো স্টেয়িায়ামের দর্শক মাতিয়ে গেইল একাই জয় এনে দিলেন রংপুরকে। সেই সাথে বিপিএলে ইতিহাসে ব্যাক্তিগর সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও গড়লেন ক্রিস গেইল। গতকাল গেইল খেলেছেন সেঞ্চুরিসহ ১২৬ রানের অপরাজিত এক ইনিংস। আর এতেই ফাইনালে খেলার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল খুলনা টাইটান্সের। ফলে খুলনাকে বিদায় করে টিকে রইল রংপুর। গতকাল টস জিতে রংপুর রাইডার্স আগে ব্যাট করতে পাঠায় খুলনা টাইটান্সকে। আগে ব্যাট করতে নেমে খুলনা টাইটান্স ৬ উইকেটে করে ১৬৭ রান। ফাইনালের রেসে টিকে থাকার জন্য স্কোরটা মোটেও নিরাপদ ছিলনা দলটির। তার উপর প্রতিপক্ষ দলে গেইলের মতো বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান থাকায় ভয়টা আহেই ছিল। তবুর ম্যাচে লড়াই করার মনোভাব নিয়েই বোলিং শুরু করেছিল খুলনা। কিন্তু দিনটা যে গেইল নিজের মতো করে সাজাবেন তা হয়তো কেই ভাবেননি। কিন্তু জয়ের জন্য ১৬৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার গেইল মারমুখি হলেই ম্যাচে চিত্র পুরো পাল্টে যায়। মাত্র ৫১ বলে গেইল ১৪ ছক্কা আর ৬ চারের মারে সেঞ্চুরিসহ ১২৬ রানের ইনিংস খেলে দলকে বড় ব্যবধানে জয় এনে দেন রংপুর রাইডার্সকে। গেইল ঝড়ে মাত্র ১৫.২ ওভারে ২ উইকেটে ১৭১ রান করে খুলনা জয় পায় ৮ উইকেটে। এই জয়ের ফলে বিপিএলের ফাইনাল থেকে খুলনাকে বিদায় করে টিকে রইল রংপুর রাইডার্স। জয়ের জন্য ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২৪ রানে প্রথম উইকেট হারায় রংপুর রাইডার্স। গেইলের সাথে ওপেন করতে নেমে সোহাগ গাজী বিদায় নেন মাত্র ১ রান করে। ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন ম্যাককালাম। দলীয় ২৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় রংপুর। ফলে ২৫ রানে প্রথম দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে টিকে থাকতে চেয়েছিল খুলনা। কিন্তু দলটির সে আশা শেষ করে দেন গেইল। মোহাম্মদ মিথুনকে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলকে জয়ী করেই মাঠ ছাড়েন গেইল। মোহাম্ম মিথুন ৩০ রানে অপরাজিত থাকলেও গেইল ২৩ বলে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করার পর ৪৫ বলে সেঞ্চুরি করার পর ৫১ বলে ১৪ ছক্কা আর ৬ বাউন্ডারিতে ১২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। গতকাল দলীয় ২৫ রানে প্রথম দুই উইকেট হারানোর পরই নিজের বিধ্বংসী রূপ ধারণ করেন গেইল। নিজের ২৩তম বলে হাফ-সেঞ্চুরির করেন গেইল। এ সময় ৪টি ছক্কা ও ৪টি চার মারেন টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের মালিক গেইল। শেষ পর্যন্ত ১৪তম ওভারের প্রথম বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ১৯তম, চলমান বিপিএলে নিজের প্রথম এবং টুর্নামেন্ট ইতিহাসে চতুর্থ সেঞ্চুরির তুলে নেন গেইল। ৬টি চার ও ১০টি ছক্কায় ৪৫ বলে সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। ১৬তম ওভারের প্রথম দুই বলে খুলনার নাজমুলকে পর পর দু’টি ছক্কা হাকিয়ে ২৮ বল বাকী রেখেই রংপুরের জয় নিশ্চিত করেন গেইল। আর ম্যাচ সেরাও হন তিনি। এর আগে, মিরপুর স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৬৭ রান করে খুলনা টাইটান্স। ইনিংস ওপেন করতে নেমে সাবধানী শুরু করেছিলেন খুলনার দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লিঞ্জারের। তবে চতুর্থ ওভারের শেষ বলে এই দু’ওপেনারকে বিচ্ছিন্ন করেন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ৮ রান দেয়া রংপুরের অফ-স্পিনার সোহাগ গাজী। ৩টি চারে ১৬ বলে ১৫ রান করা শান্তকে নিজের বলেই ক্যাচ নেন গাজী। 

এরপর ক্রিজে গিয়ে মারমুখী মেজাজেই শুরু করেছিলেন তরুণ আফিফ হোসেন। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ১টি করে চার ও ছক্কায় ৯ বলে ১১ রান করে শ্রীলংকার লাসিথ মালিঙ্গার প্রথম শিকার হন আফিফ। আফিফের বিদায়ে উইকেটে যাবার সুযোগ হয় খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুুল্লাহ রিয়াদের। মালিঙ্গার বিপক্ষে মুখোমুখি হওয়া প্রথম দু’বলে ছক্কা ও চার হাঁকান রিয়াদ। এতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় খুলনার অধিনায়কের। তাই পরের ওভারের মারমুখী মেজাজেই ছিলেন তিনি। পরের ওভারে রংপুরের বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলামের দ্বিতীয় বলে ছক্কা ও তৃতীয় ডেলিভারিতে বাউন্ডারি মারেন রিয়াদ। তাই অধিনায়কের ব্যাটে চড়ে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে খুলনা। কিন্তু ছক্কা ও চার হজমের পরের ডেলিভারিতে রিয়াদকে বিদায় দেন নাজমুল ইসলাম। ২টি করে চার ও ছক্কায় মাত্র ৬ বলে ২০ রান করেন রিয়াদ। দলীয় ৫৬ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে রিয়াদের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন ক্লিঞ্জার ও আরিফুল হক। দু’জনে উইকেট বাচিয়ে খেলার পরিকল্পনা করেন তারা। তাই ৭ ওভার শেষে যেখানে ৩ উইকেটে রান ছিলো ৫৭ রান, সেখানে ১১ ওভার শেষে ৩ উইকেটে রান হয় ৭৬। ওপেনার হিসেবে নেমে ১১ ওভার ক্রিজে থেকে ২২ বল মোকাবেলা করে মাত্র ১৫ রান করতে সক্ষম হন ক্লিঞ্জার। তবে ১২তম ওভারে থেমে যায় তার ধীর গতির ইনিংস। নামের পাশে ২১ রান রেখে রংপুরের ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় রবি বোপারার ইয়রকার এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরেন ক্লিঞ্জার। দলীয় ৮২ রানে ক্লিনজারের বিদায়ের পর আরিফুলের ৩০ বলে ২৯, ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই খেলোয়াড় নিকোলাস পুরানের ২২ বলে ২৮ ও কালোর্স ব্র্যাথওয়েটের মাত্র ৯ বলে অপরাজিত ২৫ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬৭ রানের লড়াকু স্কোর পায় খুলনা টাইটান্স। ব্র্যাথওয়েটের ইনিংসে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। পুরান ২টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান। রংপুরের মালিঙ্গা ২টি, গাজী-নাজমুল-রুবেল-বোপারা ১টি করে উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

খুলনা টাইটান্স : ১৬৭/৬, ২০ ওভার (আরিফুল ২৯, পুরান ২৮, বার্থওয়েট ২৫*, মালিঙ্গা ২/৪৯)।

ওংপুর রাইডার্স : ১৭১/২, ১৫.২ ওভার গেইল ১২৬, মিথুন ৩০, আর্চার ২/৩০।

ফল : রংপুর রাইডার্স ৮ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : ক্রিস গেইল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ