শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সরষের ভেতর ভুত?

তরুণসমাজ নানাভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। গাঁজা, ভাং, ফেনসিডিল, আফিম, হেরোইনসহ নানা প্রকারের মাদক ছড়িয়ে পড়েছে সমাজে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী মাদকাসক্ত। এক শ্রেণির শিক্ষকও নাকি মাদকের মরণনেশার কবলে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের অনেক যুবক মাদকগ্রহণ করে। ভবঘুরে ও টোকাইদের মধ্যেও অনেকে মাদকসেবনে অভ্যস্ত। মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করতে বাবার পকেট ও মায়ের আঁচল খালি করে অনেক মাদকাসক্ত চুরি-ছিনতাই, রাহাজানিসহ ডাকাতি পর্যন্ত করতে শুরু করে। অপরাধকর্ম সর্বত্র বেড়ে যায়। আগে নিজের ঘর ভাঙে মাদকাসক্তরা। এরপর অন্যত্র হাত দেয়। এমনকি নেশার অর্থে টান পড়লে খুনখারাবি করতেও দ্বিধাবোধ করে না ওরা। একসময় পরিবার ও সমাজের কাছে এরা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। 

গত ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এনটিভি’র ক্রাইম ওয়াচ অনুষ্ঠানে সম্প্রচারিত এক অনুসন্ধানি রিপোর্টে দেখানো হয় দেশের সরকারি ও বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর নিদারুণ দুর্দশা। বেসরকারি এক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের দুরবস্থা তুলে ধরা হয় রিপোর্টে। দেখানো হয় ওই কেন্দ্রে ভর্তি হওয়া মাদকাসক্তরা নানা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার। সুস্থ হবার পরিবর্তে তারা আরও মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ঠিকমতো খাবার দেয়া হয় না। চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। চিকিৎসক এবং পরিচর্যাকারীর অভাব। কাউন্সেলিং নেই। অথচ প্রত্যেক মাদকাসক্তের জন্য অভিভাবকদের কাছ থেকে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোতে মাসে নেয়া হয় ১০ হাজার করে টাকা। কী কাজে ব্যয় হয় এ অর্থ? কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা। তাই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের দায়িত্বশীলকে পুলিশ গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করে। বিশেষজ্ঞরা জানান, একজন মাদকাসক্তকে পুরোপুরি সেরে তুলতে কমপক্ষে তিন মাস সময় দরকার। অথচ সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে রোগীদের রাখা হয় মাত্র আটাশ দিন। এতে মাদকাসক্তদের কোনও উপকারই হয় না। কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে ওরা আবারও মাদকাসক্ত হয়।

মাদকের দাপট যেমন ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে আছে, তেমনই বেশকিছু সরকারি ও বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। এগুলোর জন্য যেমন সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয়, তেমনই বেসরকারি সহায়তাও রয়েছে। এরপরও রোগীর অভিভাবকদের কাছ থেকে কেন মোটা অঙ্কের অর্থ নেয়া হয়? আলোচ্য টিভি রিপোর্ট অনুসারে সারাদেশের মাদকাসকক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর অবস্থা কমবেশ একই। তবে কোনও কোনওটায় অব্যবস্থাপনার সমস্যা থাকলেও আন্তরিকতা নেই তা হয়তো বলা যাবে না। বিষয়টি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দেখভাল করতে পারে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, কোনও কোনও কেন্দ্রের পরিচালক বা কেয়ারটেকারদের সঙ্গে নাকি মাদকব্যবসায়ীদের রহস্যজনক যোগাযোগ রয়েছে। অভিযোগ যদি সত্যই হয়, তাহলে সরষের ভেতর যে ভুত নেই তা  নিশ্চিত হবার উপায় কী? অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পারেন সংশ্লিষ্টরা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ