শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খুলনার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শাহজাহান ও তার জামাতাসহ ৭ জন গ্রেফতার

বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ খুলনার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শাহজাহান ও তার সিন্ডিকেডের ৭ সদস্য গ্রেফতার

 

 

খুলনা অফিস : খুলনার শীর্ষ স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী শাহজাহান হাওলাদার ও তার জামাতাসহ সিন্ডিকেটের সাতসদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় ২৬৩টি বিয়ারের ক্যান ও ১৫৭ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলো-সাগর বিশ্বাস (৩০), সুশীল জয়ধর (৪৬), মেহেদী হাসান (২৬), রুস্তম গাজী (৩৯), রাসেল কবির (৩৬) ও পলি ইসলাম (৩০)। গত বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব-৬ এর সদস্যরা নগরীর মজিদ সরণীস্থ আল আকসা গলির প্রবেশ মুখে শাহজাহানের মালিকানাধীন সোনালী এন্টারপ্রাইজ নামক ওয়ার্কশপে অভিযানে চালায়। এখান থেকে সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর বটিয়াঘাটার সাচিবুনিয়া ও দারুস সালাম মহল্লার কয়েকটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে মজুদকৃত মদ ও বিয়ারসহ আরো কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় সোনাডাঙ্গা থানায় মাদক দ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার খুলনায় র‌্যাব-৬ এর কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে নগরীর সোনাডাঙ্গা মজিদ স্মরণির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সিন্ডিকেটটি বিদেশী মদ ও বিয়ার বিক্রির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন মজিদ সরণী বটতলা সোনালী এন্টারপ্রাইজ গ্রিল ওয়ার্কশপ এর ভেতর থেকে এবং এম এ বারি সড়কের দারুস সালাম মহল্লার ২৮/৬ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে ২৬৩টি বিয়ারের ক্যান ও ১৫৭ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়। এ সময় নগরীর লবণচরা থানাধীন সাচিবুনিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ হাওলাদারের ছেলে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান হাওলাদার (৫৩), চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানার হরিয়ান নগরের মো. আসাদুলের ছেলে মো. সাগর বিশ্বাস (৩০), নগরীর দক্ষিণ টুটপাড়ার পাকুন জয়ধরের ছেলে সুশীল জয়ধর (৪৬), দক্ষিণ বাগমারার হাজী খলিলুল্লাহ লেনের মো. নিজাম উদ্দিনের ছেলে মেহেদী হাসান (২৬), পশ্চিম বানিয়া খামারের শেখ জাহাঙ্গীর কবিরের ছেলে শেখ রাসেল কবির (৩৬), দারুস সালাম মহল্লার বায়তুল ইসলামের মেয়ে মোছা. পলি ইসলাম (৩০) ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের সোনাখালী গ্রামের মৃত মজিদ গাজীর ছেলে মো. রুস্তম গাজী (৩৯) কে গ্রেফতার করা হয়। 

প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য তার ৩০ জন বেতনভুক্ত লাইনম্যান রয়েছেন। শুধুমাত্র মোবাইলে ফোন করলেই লাইনম্যানরা নির্দিষ্ট স্থানে মাদক পৌঁছে দিয়ে টাকা বুঝে নেয়। সম্প্রতি তিনি তার ব্যবসাকে আরও ডিজিটালাইজড করেছেন। এক্ষেত্রে বিকাশের মাধ্যমে আগে টাকা পাঠালে দ্রুত মাদক পৌঁছে যায়। এছাড়াও তার অধীনে রয়েছে প্রায় এক ডজন নারী সদস্য। এ পর্যন্ত তার কয়েকজন স্ত্রীর সন্ধান পেয়েছে প্রশাসন। যার মধ্যে মুন্নী আক্তার, পারুল ও ফরিদা পারভিন উল্লেখযোগ্য।

পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, এর আগে ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশী মদ ও বিয়ার উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় মাদক ব্যবসায়ী শাহাজাহান হাওলাদারের স্ত্রী ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মুন্নি আকতারকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় ওই বাড়ি থেকে বাংলাদেশের কেরু এন্ড কোম্পানি এবং স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নানা ব্রান্ডের ৪৫৫ বোতল মদ ও ৭৩৬ ক্যান বিয়ার এবং দু’টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা মাদকদ্রব্যের মূল্য ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। তবে এ সময়ও শাহজাহানকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে। 

২০১৫ সালের ৫ নবেম্বর বেলা ১১টায় নগরীর খুলনা ক্লাব সংলগ্ন পুলিশ লাইনের সামনের সড়ক থেকে ১৮ বোতল মদসহ তাকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। ২০১১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে ১৪৫ বোতল বিদেশী মদ ও ৭২ ক্যান বিয়ারসহ খানজাহান আলী (র.) সেতু এলাকা থেকে পুলিশ একটি প্রাইভেটকারসহ শাহজানের দু’জন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। একই বছরের ২৭ মার্চ নগরীর ৩ নম্বর মির্জাপুরে শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৬৪০ বোতল দেশী-বিদেশী মদ, এক হাজার ৬০৮ ক্যান বিয়ার, একটি একনলা বন্দুক ও ৮ রাউন্ড বন্দুকের কার্তুজ ও নগদ ৯০ হাজার ৭৫০ টাকা, একটি বৌদ্ধমূর্তি, একটি স্বর্ণের সাদা পাথর সম্বলিত আংটি, বিভিন্ন মডেলের ৯টি মোবাইল সেট, একছড়া চাবি ও ৮টি ৫শ’ টাকার জাল নোটও উদ্ধার করে পুলিশ। ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল পুলিশ নগরীর সিমেট্রি রোডের একটি আবাসিক ভবনে অভিযান চালিয়ে শাহজাহানের ২২ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের প্রায় পাঁচশ’ বোতল দেশী-বিদেশী মদ ও বিয়ার উদ্ধার করে। নগরীর সিমেট্রি রোডে শাহজাহানের ভাড়া বাড়িতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ২৬৬ ক্যান বিয়ার, ২২১ বোতল দেশী-বিদেশী মদ এবং মদ বিক্রির ১২ হাজার ৮শ’ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। তবে পুলিশ সেবারও শাহজাহানকে ধরতে পারেনি। এমনকি এ মামলায় শাহজাহানকে আসামী পর্যন্ত করা হয়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ