শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

চাপেই সেরা পারফরম্যান্স বেরিয়ে আসে ---অধিনায়ক মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার : আজ থেকে শুরু হচ্ছে ত্রিদেশীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। টুর্নামেনের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। তবে প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে থেকে অপর প্রতিপক্ষ শ্রীলংকার কোচ হাথুরুসিংহেকে নিয়েই বেশি কথা হলো সংবাদ সম্মেলনে। অবশ্য এর কারণও আছে। এই হাথুরুসিংহেই এর আগে কোচ ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। ফলে প্রতিপক্ষ শ্রীলংকার পাশাপাশি কোচ হাথুরুসিংহেও এখন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। সাড়ে তিন বছর জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তার হাত ধরে বাংলাদেশ পেয়েছে একাধিক সাফল্য। ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে জিতেছে ওয়ানডে সিরিজ। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালও খেলে বাংলাদেশ। হাথুরুসিংহেকে তাই কৃতিত্ব দিতে কার্পণ্য করেননি ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাকে নিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বলেন, ‘বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে যারা খেলোয়াড় আছে তারা অনেক বড় মানসিকতা নিয়ে ঘোরে। ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে আমি হাথুরুসিংহেকে স্যালুট জানাই। অবশ্যই তার অধীনে খেলে আমরা ভালো ফল পেয়েছি। তাকে কৃতিত্ব দিতে আমাদের বিন্দুমাত্র সংকোচ নেই। আমরা এমন না যে, তাকে কৃতিত্ব দিতে চাই না।’ তবে হাথুরুসিংহে না থাকলে বাংলাদেশের এমন সাফল্য পাওয়া হতো না এটা মানতে চান না মাশরাফি। নিজ দল ও ছেলেদের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখেই অধিনায়ক বলেন, ‘২২ গজের ক্রিজের কাজে কোচ তাদেরকে বিশেষ কিছু করে দেননি। তাদের নিজেদের এটা করে নিতে হয়েছে। মূল চাপটা তাদেরকেই নিতে হয়েছে। মাঠে প্রয়োগও করতে হয়েছে। আমাদের তামিমের রেকর্ড ও মুশফিকের রেকর্ড শেষ বছরে যদি দেখেন। আবার সাকিবের পুরো ক্যারিয়ার যদি দেখেন। মুস্তাফিজও আছে। মূল চাপটা ক্রিকেটারদের নিতে হয়েছে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করল, তখন কেউ ওখানে গিয়ে ওকে আলাদা করে ধরে খেলিয়ে দিয়ে আসেনি। সে তার সামর্থ্য অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছে। এবং পারফরম্যান্স করেছে।’ শ্রীলংকার কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহের প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন মাশরাফি। মাশরাফি বলেন,‘বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মাঠে পারফর্ম করায় এবং কোচকে সমর্থন করায় বড় সাফল্য পেতে সহায়তা করেছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে চান। কোচ যেই থাকুক, আমরা খেলোয়াড়রা তাকে শতভাগ সমর্থন করেছি। কোচের পাশাপাশি আমাদের ছেলেদেরও কৃতিত্ব দিতে হবে। আমাদের বর্তমান কোচিং স্টাফ যারা আছে, তাদেরকেও শতভাগ সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করব। অবশ্যই পেশাদারিত্ব দেখিয়ে সবকিছু চলছে এবং চলবে।’ ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি সৌম্য সরকারের। তাকে সরকারকে নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে সৌম্যকে আমি স্যালুট দিব, ও কোনো সময় স্বার্থপর ছিল না এবং কঠিন সময়ে সে দলের জন্য খেলেছে। যদি দেখেন, প্রথম দশ ওভারে কিভাবে খেলতে হবে সেটা ও মানিয়ে নিয়েছিল। এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে অনেক সময় অনেকে চিন্তা করে যে আমি আমার খেলাটা কিছুক্ষণ খেলি। ও কিন্তু এই ধরেণের ছিল না। দলের জন্য খেলতে গিয়ে পারফর্ম করতে পারেনি। এ কারণে বাইরে।’ একই অবস্থা পেসার তাসকিন আহমেদের। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের বাজে ফর্মের কারণে দল থেকে জায়গা হারিয়েছেন। ডানহাতি এ পেসারকে নিয়ে মাশরাফির বলেন,‘তাসকিনের উপর দিয়ে কঠিন সময় গিয়েছে। আমাদের অনান্য ফাস্ট বোলারদেরও যায়।’ দু’জনের কঠিন সময়ে পাশে থাকছে টিম ম্যানেজম্যান্ট ও খেলোয়াড়রা। মাশরাফি বলেছেন,‘সৌম্য এবং তাসকিনের জন্য কিছুটা হলেও খারাপ লাগছে। তারা দলের জন্য খেলতে গিয়ে পারফর্ম করতে পারেনি বলে আজ দলের বাইরে। আমাদের কোচিং স্টাফদের সাথে ওদের কথা হয়েছে। বিশেষ করে সুজন ভাই (টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন) ওদের সাথে কথা বলেছে বাদ পড়ার পর। ওরা এখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছে। প্রত্যাশা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখানে পারফর্ম করে আবার দলের সাথে আসতে পারে। ওদেরকে শতভাগ সমর্থন করতে হবে।’ কুয়াশার কারনে টস বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। তাই কুয়াশা ও দল নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বলেন, ‘কুয়াশার উপর নির্ভর করছে শুরুতে কি করা যাবে। ব্যাটিং নাকি বোলিং করা হবে। বেশি কুয়াশা থাকলে সিদ্ধান্ত একরকম হবে। আর না পড়লে অন্য রকম। আসলে এসব নিয়ে না ভেবে শুরুতে যা সামনে আসবে তা ভালোভাবে করতে হবে।’ কুয়াশা উইকেটের আচরনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তবে উইকেট নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারছেন না মাশরাফি, ‘উইকেট এখন পর্যন্ত ভালোই আছে। তবে দেখতে হবে ম্যাচের দিন আবহাওয়া কেমন হয়। আবহাওয়ার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।’ তিন বছরের বেশি সময় টানা ভালো খেলার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় খারাপ করা এবং তার রেশ না মিটতেই হেড কোচ হাথুরুসিংহের পদত্যাগে দলের ভিতরে চাপ বেড়ে গেছে। সেই চাপ কাটিয়ে ওঠে ভালো করতে পারবে তো মাশরাফির দল? মাশরাফি এ চাপ নিয়ে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, প্রত্যেকটা সিরিজ যায় আর তখন মনে হয় পরের সিরিজে বুঝি চাপ কম থাকবে। কিন্তু আমার মনে হয়, সেটা আর হয় না। চাপ থেকেই যায়। দেশের হয়ে খেলতে নামলে আপনি যার বিপক্ষে যেখানেই খেলেন না কেন, চাপ থাকবেই। প্রেসার অবশ্যই থাকবে। আমার কাছে মনে হয়, এটা থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ এবং ভালো। কারণ, চাপে ভালো খেলার তাড়া ও তাগিদ বেশি থাকে। সেরা পারফরম্যান্সটাও চাপে থাকলেই বের হয়।’ টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি মনে করেন না দল কোনোরকম চাপে আছে। তিনি বলেন, 'আমাদের ড্রেসিং রুম এখন অনেক বেশি নির্ভার। আমার মনে হয়, এখন যে প্রেসার আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি চাপ নিয়ে আমাদের ড্রেসিং রুমের বেশির ভাগ খেলোয়াড় আগে খেলেছে। এই সিরিজে সেটা হ্যান্ডেল করার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য আমাদের আছে।’ সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রসঙ্গ টেনে মাশরাফি বলেন, 'ওই সফরে আমরা যেটা চেয়েছি, সেটা হয়নি। আমরা আশা করছি, এ টুর্নামেন্টে সামর্থ্যের যথাযথ বাস্তবায়ন বা প্রয়োগ ঘটাতে পারবো। আসলে কমফোর্ট জোনটা নিজের উপর নির্ভও করে। মানসিক চাপ সব সময় থাকে। এটা স্বাভাবিক। অধিনায়ক হিসেবে এটা থাকবে। এখনও সেটা আছে। নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা থাকবে, যে ভিতরে কিভাবে বাস্তবায়ন করবো। আমার ওই জিনিসগুলো এখনও আছে। তবে আমি এটা চাই না, সবাই অনেক বেশি নির্ভার থাকুক। বেশি নির্ভার থাকলে মাঠে নেমে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আমি আশা করব, আমাদের মেইন জায়গাটা যাতে ঠিক থাকে। তারপর অন্য কিছু।'

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ