শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পাচারের সাড়ে আট মাসেও উদ্ধার হয়নি ২২ মাসের শিশু

খুলনা অফিস: পাচারের সাড়ে ৮ মাস অতিবাহিত হলেও ২২ মাস বয়সী শিশু মওসুম গাইন নীলকে পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। পাচার মামলায় শিশুর কাকা রিপন গ্রেফতার হলেও বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। সিআইডি পুলিশ আবেদন করেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিতে পারেনি। শিশুপুত্রকে উদ্ধারে মা ফরিদা ইয়াসমিন মনি খুলনা-ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
নীলের মা ফরিদা ইয়াসমিন জানান, গত বছরের ১৭ এপ্রিল লিটনসহ ৩/৪ জন নীলকে ঢাকার বাসা থেকে নিয়ে যায়। এরপর ওই বছরের ২৩ এপ্রিল মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে নীলকে আনা হয়নি। এরপর গত ১০ অক্টোবর খুলনা মহানগরীর গল্লামারী এলাকায় নীলের কাকা রিপনের সাথে নীলকে দেখা যায়। সেখানে রিপনের মা ও স্ত্রী ছিল। এরপর খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় মানব পাচার আইনে ওই তিন জনের নামে মামলা দয়ের করা হয়। মামলাটি শুরুতে পুলিশ তদন্ত করে। গত ৩১ অক্টোবর সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তদন্তে কোন অগ্রগতি না হওয়ায় ডিসেম্বর মাসে ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে লিটনসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় শিশুকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ জারী হয়। কিন্তু ৭ জানুয়ারি শুনানি শেষে আদালতে হাজিরের আদেশ এক সপ্তাহের জন্য স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) করেছেন হাইকোর্ট।
সিআইডি খুলনার পরিদর্শক আবু মুসা খন্দকার জানান, ৩১ অক্টোবর মামলার তদন্তভার গ্রহণ করার পর ১ নবেম্বর প্রধান আসামী রিপনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ঘটনাস্থল ঢাকায় হওয়ার কারণে খুলনার আদালত রিপনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেনি। রিপন ২০ দিন জেলে থাকার পর আদালত থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হয়। মামলার অপর দুইজন নারী আসামীকে গ্রেফতার করার জন্য আদালত থেকে রিক্যুইজিশন বের করে দাকোপ থানায় প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, নীলের পিতা সনাতন ধর্মাবলম্বী ও মা মুসলিম। স্বামী লিটন দাকোপ উপজেলার পোদ্দারগঞ্জ এলাকার সাহেবের আবাদ গ্রামের নিবাসী বিনয় গাইনের ছেলে। পুলিশ ওই বাড়িতেও অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু শিশু নীলের সন্ধান পায়নি। খুলনায় লিটনের বোনসহ আত্মীয় স্বজনের বাসা-বাড়িতেও তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু শিশুর সন্ধান পাওয়া যায়নি। সিআইডি পুলিশ বিভাগ শিশুটিকে উদ্ধারে তৎপর রয়েছে।
নীলের মা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘২০১৫ সালের ১০ মার্চ ধর্মান্তরিত হওয়ার পর ৩০ মার্চ লিটনকে বিয়ে করেন। প্রাথমিকভাবে লিটনের পরিবার এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। নীলের জন্ম হওয়ার পরও নানা ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে শিশু পুত্রকে নিয়ে লুকিয়ে রাখা হয়। তিনি ধারণা করছেন শিশু নীলকে ভারতে তাদের আত্মীয় বাড়ি নিয়ে রাখা হতে পারে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেবর রিপন জামিনে বের হয়ে এসে তাকে হেনস্তা করতে শুরু করে। তার (মনি) প্রথম পক্ষের মেয়েকে জড়িয়েও নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি মমতাজুল ইসলাম বলেন, শিশু পাচার আইনে মামলাটি দায়ের হওয়ার পর পুলিশ গুরুত্বের সাথে তদন্ত শুরু করে। হঠাৎ করেই মামলাটি সিআইডিতে বদলি হয়। এরপরও পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ