শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ভেজাল গুড়-পাটালিতে যশোরের বাজার সয়লাব

মোস্তফা রুহুল কুদ্দুস যশোর থেকে : ভেজাল গুড়-পাটালিতে সয়লাব যশোরের হাট-বাজার। খেজুর রসের সাথে কম দামের চিনি মিশিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি করা হচ্ছে। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা শীত মওসুমের শুরু থেকে চুটিয়ে  এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাচীন জনপদ যশোর খেজুর গুড়ের জন্যে বিখ্যাত। ‘যশোরের যশ খেজুরের রস’ প্রবাদটি সেই আদিকাল থেকে দেশ-বিদেশে উচ্চারিত হয়ে আসছে। যার সুবাদে এখানকার গুড়-পাটালির কদর রয়েছে সর্বত্র। শীত আসলেই পিঠা-পায়েশের স্বাদ নিতে ভিন্ন জনপদের মানুষের নজর যায় যশোরের দিকে। কাচারস কিংবা নলেন গুড়ের পাটালি ছাড়া যেন শীতকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করা যায় না। মানুষের এ আকর্ষণকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী ভেজাল পাটালি বাজারজাত করে আর্থিক ফায়দা লুটছে।
 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই  রস-গুড়ের দাম  বাড়ানো হয়েছে। কয়েক গ্লাস রস ধরে এমন এক ভাড় রস দুইশ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। তাও রস মিলছে না। উৎপাদন কমে যাওয়ায় শীতের  সুস্বাদু পানীয় রসের আকাল দেখা দিয়েছে। এ বছর রস বিক্রি কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে গুড় ও পাটালি। যশোর ও পার্শ্ববর্তী  এলাকায় যে রস উৎপাদিত হচ্ছে তা দিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। কারণ, এতে দুইগুণ লাভ। রসের সাথে চিনি মিশিয়ে গুড় কিংবা পাটালি তৈরি করা যায় সহজে। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি সাদা চিনির দাম ৫৪ টাকা। এটি পাটালিতে রূপান্তরিত করে একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার যশোর বড়বাজারের স্থায়ী দোকান ও মওসুমি বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক কেজি  পাটালি একশ’ টাকা থেকে একশ’ আশি টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। গুড়ের দামও অনুরূপ। বেশি দামের গুড়-পাটালিকে তারা এক নম্বর বলে বিক্রি করছেন। এর অর্থ হচ্ছে তাতে চিনি নেই। খাঁটি রস দিয়ে তৈরি। আর একটু কম দাম হলেই ভেজাল। চিনি-রসের সংমিশ্রণে তৈরি গুড়-পাটালি। বিক্রেতারা এটা স্বীকারও করেন। তবে কী পরিমাণ রসে কতটুকু চিনি মেশানো হচ্ছে তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। অনেকের মতে, পঞ্চাশ শতাংশ চিনি মিশিয়ে তা গুড় পাটালিতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে।  ফুটপাতের বিক্রেতা রাজশাহীর বাঘা থেকে আসা আজমত আলী জানান, প্রতিমণ গুড়ে ৭/৮ কেজি চিনি মেশানো হয়। এদিকে,  চিনি মেশানোর কারণে কাঁচারস পিঠা-পায়েস উপযোগী ঝোলা গুড় বা খাজুরার রসালো পাটালি পাওয়া যাচ্ছে না। জানা গেছে, গুড়ে চিনি মেশালে তা দানা হয়ে যায় এবং  পাটালিতে রস থাকে না। বাজারে খাজুরার পাটালির নামে যা বিক্রি হচ্ছে তা  কেবল সাইজ ও আকৃতির দিক দিয়ে খাজুরা মার্কা। দামও কম। যেখানে একনম্বর পাটালি একশ’ আশি টাকা, সেখানে কথিত  খাজুরার পাটালি সর্বোচ্চ দেড়শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গুড়-পাটালিতে চিনি মেশানোর প্রধান কারণ হচ্ছে, অধিক মুনাফা। অর্থাৎ এককেজি চিনি দ্বিগুণ দামে বিক্রির মানসিকতা। অবশ্য, গুড়পট্টির একজন ব্যবসায়ী বলেন, চিনি ছাড়া পাটালি শক্ত হয় না।
যশোরের বাজারে শুধু অভ্যন্তরীণ নয়। রাজশাহী এবং দর্শনার আনসারবাড়িয়া এলাকার গুড় পাটালি আসছে। রসের  দেখা না মিললেও চিনি মিশ্রিত গুড়-পাটালিতে সয়লাব বাজার।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ