বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় আইন অমান্য করে গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা

খুলনা অফিস: খুলনায় শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন করে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা নিম্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই’র জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে অভিভাবকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এ সুবাদে শিক্ষক নেতা ও শিক্ষকরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মূল জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ এ বিষয়ে নীরব রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকার দেশের শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং অভিভাবকের ব্যয় কমানোর জন্য মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে বই সরবরাহ করছে। বছরের প্রথম মাসে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই পৌঁছে গেছে। কিন্তু অসাধু শিক্ষকদের কারণে বিনামূল্যের বই’র সুফল বঞ্চিত হয়ে অভিভাবকদের কিনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকার নোট ও গাইড বই।

সূত্র মতে, খুলনা মহানগরীর বড়বাজার, খালিশপুর, দৌলতপুর বাজার, ফুলবাড়ীগেট বাজার এবং ৯টি উপজেলার বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে মাঠে নেমে পড়েছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা। বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে শিক্ষক নেতারা নোট ও গাইড বইয়ের কথিত গুণাবলী তুলে ধরেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানের কাছে। সঙ্গে চুক্তি হয় নির্দিষ্ট হারের কমিশনের। আর এ নিয়ে শিক্ষক নেতা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে চলে দরকষাকষি। আর যে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যত বেশি সে বিদ্যালয়ের সঙ্গে আর্থিক চুক্তিও হয় বড় ধরনের। এ তালিকায় খুলনার নামি দামি বিদ্যালয়গুলো শীর্ষে রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, যেখানে একটি বোর্ডের বইয়ের দাম একশ’ টাকা। সেখানে নোট-গাইড নি¤œমানের বইয়ের দাম ধরা হয়েছে তিনশ’ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে তিনশ’ টাকা পর্যন্ত। আর কমিশনের এ অর্থ সুকৌশলে উসুল করা হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে। প্রতিষ্ঠানের দেয়া চিরকুটের (বিকল্প সিলেবাস) নির্দেশনা অনুযায়ী মোটা অঙ্কের বিনিময়ে এসব নি¤œমানের নোট-গাইড কিনতে বাধ্য হন তারা। এমনকি দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এসব নোট-গাইড কেনা সম্ভব না হলেও স্কুলে গেলে তাদের শাসানো হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, নোট ও গাইড বইয়ের মান যাই হোক সেটা বড় কথা না, যে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বেশি কমিশন দেবে তাদের বই আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দেই এবং বাজার থেকেও কেনার পরামর্শ দেয়া হয়।

অভিভাবক মফিজুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, জামিলুর রহমান, আসাদুজ্জামান ও আব্দুল গণি জানান, বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বাজারে পাওয়া সংগ্রাম, যমুনা, জুপিটার, পাঞ্জেরি ও জননীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নোট ও গাইড বইয়ে রয়েছে অসংখ্য ভুল। এমনকি মূল বইয়ের সাথে যার কোন মিলও নেই। এসব গাইড ও নোট বইয়ের কাগজ নি¤œমানের হলেও রয়েছে আকর্ষণীয় কভার। ফলে তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বই ব্যবসায়ী জানান, একটি নোট বা গাইড তৈরি করে বাজারজাত করতে যা খরচ হয়, তার দিগুণ মূল্যে বিক্রি করা হয়। এর কারণ হচ্ছে শিক্ষক নেতা ও প্রধান শিক্ষকের কমিশনসহ মূল্য লেখা থাকে।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর টি.এম. জাকির হোসেন বলেন, নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বইয়ের ব্যাপারে নগরীর দোকানগুলোতে জেলা প্রশাসনকে অভিযান পরিচালনা এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হবে। একই সঙ্গে উপজেলা থেকে কোন শিক্ষক নেতা এবং কোন শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে নোট গাইডের প্রচারণার তথ্য পাওয়া গেলে বেতন বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ