শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খালেদা জিয়ার বিচার হবে প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই

 

স্টাফ রিপোর্টার : খালেদা জিয়ার মামলার রায় কি পূর্বেই নির্ধারিত এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত কয়েক দিনে সরকারের মন্ত্রী, জাতীয় পার্টির সদস্য এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সরকারের বিশেষ দূত হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বক্তব্যেও মনে হচ্ছে এই সরকার পূর্বেই রায় লিখে রেখেছে ? কারণ তারা বলছেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে। তাতে মনে হচ্ছে দেশনেত্রীর মামলার রায় পূর্বেই নির্ধারিত। যদি তাই হয় তবে এই বিচারের প্রহসনের কোনও প্রয়োজন ছিল না। দেশে যে আইনের শাসন নেই-ন্যায়বিচার সুদুর পরাহত এমন বক্তব্যে সেটাই প্রমাণিত হলো। তিনি বলেন, দেশনেত্রীর বিচার হবে প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 

প্রসঙ্গত, গতকাল বিকালে বকশিবাজারের অস্থায়ী আদালতে খালেদা জিয়ার একটি মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার রায় ঘোষণা করার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। 

মির্জা ফখরুল বলেন, বিচারাধীন মামলা নিয়ে এমন বক্তব্য আদালত অবমাননার সামিল হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। দেশনেত্রীর বিচার হবে প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বলপূর্বক দেশ থেকে বহিষ্কার ও পদত্যাগে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শেষবারের মতো নিঃশেষ হয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের আচরণবিধি সরকারের ইচ্ছামতোই হয়েছে। এর নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার মিথ্যা মামলায় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনে স্বঘোষিত সরকার আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনের পূর্বেই বিরোধী দলকে মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার হীন চক্রান্ত করছে।

খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য ২৪টি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তার মধ্যে দুটো মিথ্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। সপ্তাহে তিন দিন দেশনেত্রীর আদালতে হাজির হওয়া নজীরবিহীন। এই সরকার বেগম জিয়াকে ভয় করে বলেই তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়।

এটা এখন স্পষ্ট- নজিরবিহীন দ্রুততার সাথে মামলা শেষ করার প্রচেষ্টা প্রমাণ করে এই সরকার বেগম জিয়াকে ভয় পায়। ভয় পায় বলেই তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়। আমরা সরকারের এহেন প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। নির্বাচনী মাঠ সমান্তরাল করতে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৫০ হাজার মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

ফখরুল বলেন, ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলার সংখ্যা ৫০ হাজার ৭৪টি। আসামির সংখ্যা ১১ লাখ ৯১ হাজার ৪৪৯ জন। খুন হয়েছেন ৭৭৩ জন।

গতবছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সাত বিভাগে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, একমাস দুইদিনে মোট মামলা হয়েছে ৫২৮টি, আসামির সংখ্যা ২৪ হাজার ৭০৭ জন। গ্রেপ্তার ১৫১৯, গুম একজন, খুন একজন।

আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এই অবস্থার প্রেক্ষিতে নির্বাচনের সমান্তরাল মাঠ হতে পারে না। সুতরাং নির্বাচন করতে হলে, অবশ্যই মাঠকে সমান্তরাল করতে হলে, বিরোধীদলের সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অবিলম্বে গ্রেপ্তার, ক্রসফায়ার, হত্যা-গুম বন্ধ করতে বলছি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। অজ্ঞাতনামা আসামির নাম দিয়ে পুলিশের গ্রেপ্তার বাণিজ্য চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ