বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিএনপি নেতা গয়েশ্বর কারাগারে ৫৫ নেতা-কর্মী রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীতে মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও প্রিজন ভ্যানের তালা ভেঙে দুই কর্মীকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পৃথক চার মামলায় বিএনপির ৫৫ জন নেতা-কর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাহমুদুল হাসান এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে কারাগারে পাঠিয়েছেন একই আদালত। রমনা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়নি। আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন বলেই গয়েশ্বর চন্দ্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আনিসুর রহমান ও সাবেক মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলামকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

শাহবাগ ও রমনা থানায় দায়ের হওয়া পৃথক চার মামলার অন্য আসামীদের পক্ষে বিএনপির আইন সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়াসহ বিএনপিপন্থী চারজন আইনজীবী আদালতকে বলেন, পুলিশের ওপর বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা চালাননি। বরং পুলিশ নিজের লোক দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। যাদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে, তাদের কারও বিরুদ্ধেই সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি পুলিশ।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, আসামীদের মধ্যে কয়েকজন আছেন, যারা বৃদ্ধ। গতকালের হামলার ঘটনার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন থানা ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করছে। তারই অংশ হিসেবে দুতিন দিন আগে এসব আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গতকাল এ ঘটনা ঘটিয়ে তাদের এই মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষে সরকারি কৌঁসুলি সাজ্জাদুল হক আদালতে বলেন, আসামীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ইটপাটকেল ছুড়ে আক্রমণ করেছে। নাশকতা চালিয়েছে। কেন পুলিশের ওপর এই আক্রমণ এবং কোন নেতারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে ,তা খুঁজে বের করার জন্য এই আসামীদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামীদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। আদালত সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের ওপর আক্রমণের ঘটনায় শাহবাগ থানায় পৃথক দুই মামলায় ১৮ জনকে দুই দিন করে এবং রমনা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ৩৫ জনকে দুই দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন আদালত। সাবেক মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলামকে তিন দিন এবং কেন্দ্রীয় নেতা আনিসুর রহমানকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

বিএনপিপন্থী আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ইকবাল হোসেন ও মোসলেম উদ্দিন জসিম বারবারই আদালতকে বলেন, এ মামলার আসামী পেয়ারা মোস্তফার বয়স ৬০। তার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। অন্তত তার রিমান্ড আবেদন নাকচ করে জামিন দেওয়া হোক। শুনানি শেষে আদালত পেয়ারা মোস্তফারও দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় হাইকোর্টের কদম ফোয়ারার মোড়ে বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও প্রিজন ভ্যানের তালা ভেঙে আটক দুই কর্মীকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে। পুলিশ দাবি করে, মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল থেকে অতর্কিতে হামলা চালান। প্রিজন ভ্যান ভাঙচুর করে বিএনপির আটক দুই কর্মীকে ছিনিয়ে নেন। এতে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আশরাফুল আজিমসহ কয়েকজন আহত হন।

গতকাল দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে রমনা থানার পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম এই মামলার আসামী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ ৩৮ জনকে আদালতে হাজির করেন। মামলার আসামীদের ১০ দিনের জন্য রিমান্ড আবেদন করেন পুলিশের এই তদন্ত কর্মকর্তা।

এদিকে, একই ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়ের করা দুই মামলায় ১৮ জন আসামীর সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন শাহবাগ থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিদার হোসেন।

আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মাহমুদ জানান, শাহবাগ থানার দুই মামলায় ১৮ জন আসামীর প্রত্যেককে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার রাতে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে গয়েশ্বরকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে গতকাল বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে বিএনপি কর্মীদের ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন পুলিশ। 

তিন নেতাকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলা করা হয়। রমনা ও শাহবাগ থানায় মামলাগুলো দায়ের হয়। মঙ্গলবার মধ্যরাতে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রহিদুল ইসলাম ও এসআই চম্পক বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় পৃথক দুটি এবং রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিবুল্লাহ রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

থানা সূত্রে জানা গেছে, মামলায় সরকারি কাজে বাধা দেয়া, পুলিশের ওপর হামলা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘœসহ বেশ কয়েকটি ধারা জুড়ে দেয়া হয়েছে।

রমনা থানার মামলায় গয়েশ্বর ও মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ শীর্ষ ৪৪ বিএনপি নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের নির্দেশক্রমে সাত-আটশ’জন হামলা চালায়। রমনা থানার মামলার বাদী এসআই মহিবুল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে শাহবাগ থানায় দুটি মামলায় রিজভীসহ শীর্ষ নেতাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি আবুল হাসান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ