শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মাগুরায় উচ্চ ফলনশীল সরিষা আবাদে ব্যাপক সাড়া

ওয়ালিয়র রহমান (মাগুরা) থেকে : মাগুরা জেলায় উচ্চ ফলনশীল বারি-৯ ও টোরি -৭, বারি-১৪ ও বারি-১৫ জাতের সবিষার আবাদ কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগালেও গত বছরের তুলনাই সরিষার চাষ এ বছর অর্ধেকে নেমে এসেছে। মওসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এই অধিক ফলনশীল সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করেই দায়িত্ব শেষ করে। এতে সরিষা আবাদে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ফিরে আসবে বলে আশা করেছিল কৃষি বিভাগ কিন্তু সে আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। ফলে  চলতি মওসুমে জেলার ৪টি  উপজেলায় সরিষার চাষ লক্ষ্য মাত্রা পূরণ হচ্ছে না।  মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ  বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রাজিব হাসান জানান, চলতি মওসুমে জেলার সদর, শালিখা, শ্রীপুর, ও মহাম্মপুর উপজেলায় মোট ৬৩৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। যেখানে গত বছর জমিতে সরিষা আবাদের পরিমাণ ছিলো ১০৮৬০ হেক্টর। সেখানে এ বছর মাগুরা সদরে ২১৫০, মহম্মদপুর ৬০৫, শ্রীপুর, ৫৫০ ও শালিখা উপজেলায় ৩০৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এ বছর জেলায়  ৭ হাজার  ৪৬৬ টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ যা গত বছরের চেয়ে অর্ধেক। এছাড়াও  সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করার কথা শতাধিক মধু চাষিদের। কিন্তু মাগুরা জেলার ৪টি উপজেলায় এ বছর সরিষা চাষ ভালো না হওয়ায় এলাকার মধু চাষিরা পার্শ্ববর্তী জেলাতে ভিড় জমিয়েছেন। সাধারণত মাগুরার কৃষকরা স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বারি-৯ ও টোরি -৭ জাতের সরিষার আবাদই বেশি করতেন। সময় বেশি লাগায় ও ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে উৎসাহ হারাচ্ছিল। এ দুটি জাতের সরিষা মাত্র ৬৫-৭৫ দিনে সরিষা ঘরে তোলা গেলেও  চলতি মওসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল জাতের বারি-১৪ ও বারি-১৫ সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করলেও পরবর্তীতে আর কোন খোঁজ না রাখায় মাগুরার কৃষকরা সরিষা আবাদে অনেকটা  নিরুউৎসাহ হয়ে পড়ে।  যেখানে প্রতি হেক্টরে দেড় হাজার কেজি সরিষার ফলন হয়। সেখানে সরিষা কেটে আবার ওই জমিতে বোরোর আবাদ করছে  কৃষকরা। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। আঠারখাদা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজির আহম্মদ জানান, আমন ধান কাটার পর পড়ে থাকা জমিতে রিলে পদ্ধতিতে ( জমি চাষ না করে) সরিষার চাষ মাগুরাতে এখন বেশ জনপ্রিয়। এ পদ্ধতিতে সরিষা চাষে উৎপাদন খরচ খুবই কম। এ বছরে অনেক কৃষকেরা মাগুরাতে এ পদ্ধতির  মাধ্যমে সরিষা চাষ করছেন। মাগুরা সদর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের সরিষা চাষি বিনয় সরকার, দিপক সরকার, লক্ষন বিশ্বাস, বিদ্যুৎ সরকার, নারায়ন বিশ্বাস, হাজীপুরের আবজাল, কুকনা গ্রামের পলাশ ঘোষ, শালিখার ভাটোয়াইল  গ্রামের রেজাউল  ইসলামসহ আরো  অনেক কৃষক বলেন, দেশী জাতের সরিষা আবাদ করে  একরে ৮-১০ মণ ফলন পাওয়া যেত। সেখানে উন্নত জাতের সরিষা আবাদে প্রতি একরে পাওয় যায় ১৪-১৫ মণ। উৎপাদন খরচও আগের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু সরিষা চাষ কম হওয়ায় তাদের সে আশা পূরণ হচ্ছে না।। মাগুরা সদর উপজেলার  আঠাখাদা  গ্রামের রণদা বিশ্বাষ বলেন,  চলতি মওসুমে ২ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল সরিষার আবাদ করে ৪০-৪৫ মণ সরিষা ঘরে তুলতে পারবে বলে জানান।।
মাগুরা সদর উপজেলা  কৃষি র্কমকর্তা  মোঃ রুহুল আমিন জানান, চলতি রবি মওসুমে জেলায় স্থানীয় জাতের তুলানায় উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বেশি চাষ  করছেন কৃষকরা। সরিষা চাষের জন্য কৃষি বিভাগ কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করবেন। এ ছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকলে সরিষার ভালো ফলন পাওয়ার পাশাপাশি ভালো দামও পাবেন বলে তিনি আশা করেন।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের জেলা কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম সাহা জানান, অসময়ে বৃষ্টি ও শীত আসতে দেরী হওয়ায় এ বছর মাগুরার কৃষকরা গত বছরের তুলনায় এবছর সরিষা চাষ খুব কম করেছেন, আবার অনেকে  অগ্রীম ধান চাষ করার জন্য জমি ফেলে রেখেছেন। শালিখা  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ  বিপুল হোসেন জানান, গত ১৯ থেকে ২১শে অক্টোবর হঠাৎ করে ভারী বৃষ্টি বাদলার কারণে সরিষা ও মশুরসহ অন্যান্য ফসলের জমিতে জো না আশার কারনে এবছর মশুরী ও সরিষার আবাদ খুব কম হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ