বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ট্র্যাজিডির অপর নাম নজরুল

তাসনীম মাহমুদ: নজরুলের বন্ধু-বান্ধব, তৎকালিন সুশীল সমাজ-সভাসদ-কবি সমাজ, রাজনীতিবিদ, ভারত রাষ্ট্র ইত্যাদি’র অধিকাংশ তাকে গ্রহণ করেনি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা এবং জাতীয় কবির মর্যাদা দেয়ার পূর্ব-মুহূর্ত পর্যন্ত কবিকে কি দুর্বিসহ জীবনই না পার করতে হয়েছে ভারতে- অস্বাস্থ্যকর একটি বাড়ীতে! তাছাড়া তখনকার গোড়া সমাজে একচেটিয়াভাবে ফজিলাতুন্নেসার একার পক্ষেই বা কি করার ছিল? তাকেও তো সমাজ-সামাজিকতা নিয়ে চলতে হত। তথাপী নজরুল তখন দু’সন্তানের জনক। আজকের সমাজের কোনো নারীর পক্ষে কি এমন একজনকে গ্রহণ করা সম্ভবপর?

অস্বীকার করা যাবে না, নজরুলের ব্যক্তি সিদ্ধান্তেরও কিছু দ্বান্ধিকতা ছিল; অবশ্য পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মঝেই কোনো না কোনো আত্ম-দ্বন্দ্ব থাকে। সব মিলিয়ে তাকে কেউ গ্রহণ করেনি। তার কারুকার্যকে ব্যবহার করেছে মাত্র!!! পাওনা টাকার জন্য হাহাকার করেছেন কবি-ঋজু হয়েছেন! সবায় কেবল ঠকিয়েছে। আজ আমাদের দেশে জাতিয় কবি হিসাবে নজরুলের মূল্যায়ণই বা কতটুকু? যেখানে যেদিকে তাকাই কেবল (পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বলছি) রবীন্দ্র বন্দনা! আসলে নজরুলের জীবনটাই একটি ট্র্যাজিডিক ড্রামা/নোবেল/ পোয়েম।

কবি ছিলেন ভাগ্য বিড়ম্বিত ক্ষণজন্মা কালোত্তীর্ণ পুরুষ। তথাকথিত কেউ তাকে চিনতে পারেনি। যার কাছে গেছেন সেই তাকে অবজ্ঞা করেছে-দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তাই তিনি ১৯৪১ সালের ৬ই এপ্রিল মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি’র রজত জয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠানে সভাপতি রূপে অভিভাষণ কালে বেদনার্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, “বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি আমি নেতা হতে আসিনি, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম। সেই প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরব পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম। যেদিন আমি চলে যাব সেদিন হয়তো-বা বড় বড় সভা হবে। কত প্রশংসা কত কবিতা হয়ত বেরুবে আমার নামে-দেশপ্রেমিক-ত্যাগী, বীর-বিদ্রোহী-বিশেষনের পর বিশেষন, টেবিল ভেঙ্গে ফেলবে থাপ্পর মেরে,বক্তার পর বক্তা! “অবশেষে কবি ঠিকই চির নীরব হয়ে গেলেন। একটুখানি দরদ, একটুখানি প্রেমের জন্য এতবড় প্রতিভা হারিয়ে গেল!

কবিকে কেউ আগলাতে আসেনি। এতবড় প্রতিভাকে আগলে রাখার মতো যোগ্যতা আসলে তৎকালীন সমাজের কারো ছিল বলে মনে হয় না! কেননা কবি ছিলেন কালোত্তীর্ণ, --“কবিদের কবি!” যার ইঙ্গিত সে নিজেই তাঁর বিদ্রোহী কবিতার শেষ দু’চরণে উদ্ধ্বৃত করেছেন, -- “আমি চির-বিদ্রোহী বীর- আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!” এ জায়গাতে আর কোনো কবি-সাহিত্যিক উঠতে পারেনি-অবস্থান করতে পারেনি । ফলে কবিকে গ্রহণ করা, আগলে রাখা, প্রেম নিবেদন করা তথাকথিত কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না।

--শুধুমাত্র/একমাত্র মহান আল্লাহ্ তাঁর ফরিয়াদ শুনেছেন;- তাকে ভালোবেসে মসজিদের পাশে জায়গা করে দিয়েছেন। এটাই তাঁর চরম-পরম প্রাপ্তি!!!

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ