বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

গুহার নাম আলুটিলা

শাহরীয়া : হাজার বছর পুরোনো অন্ধকারাচ্ছন্ন আদিম গুহা। গুহাতে প্রবেশ করতেই পিচ্ছিল মাটি, ভিজে স্যাঁত স্যাঁতে পরিবেশ। দেখতে আলুর মতো না হলেও, গুহার নাম আলুটিলা। এটি এখন খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমায় আলুটিলা গুহায়। বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা উপজেলায় মূল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে আলুটিলা গুহা অবস্থিত। স্থানীয়রা একে বলে মাতাইহাকবা দেবতার গুহা। এটি খাগড়াছড়ির খুব জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এই গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। কোনো প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ করে না বলে মশাল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। সুড়ঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল এবং পাথুরে। শুধু তাই নয় তলদেশে একটি ঝরনা প্রবাহমান। গুহাটি দেখতে অনেকটা ভূ-গর্ভস্থ টানেলের মতো, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহাটির এক পাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হতে আনুমানিক ১০ থেকে ১২ মিনিট সময় লাগে। গুহাটির উচ্চতা মাঝে মাঝে খুব কম হওয়ায় মাথা নিচু করে হেঁটে যেতে হয়।
আলুটিলা গুহার নাম করণ বিষয়ে উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, আলুটিলার পূর্বের নাম আরবারী পর্বত। আলুটিলায় প্রচুর পরিমাণে বুনো আলুজন্মে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খাগড়াছড়িতে খাদ্যাভাব দেখা দিলে, স্থানীয় জনগণ এই পর্বত থেকে বুনোআলু খেয়েই জীবন ধারণকরেছিল। এরপর থেকেই এই পর্বতটি আলুটিলা নামে পরিচিতি পায়।
আলুটিলা গুহা দেখতে আসা পর্যটকরা বলেন, আলুটিলার গুহাতে প্রবেশ করে এক অপার্থিব বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়। মাথার ওপর কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু ছাদ থেকে টুপটাপ পানি চুইয়ে পড়ে। হাতে মশাল- ভেতরে, সামনে, পিছনে আলো আঁধারির খেলা। পিচ্ছিল পথ। পেিয় জোঁক কামড়ে ধরে অথচ কিছু করার থাকেনা। এ এক অপার্থিব অনুভূতি যার প্রকাশ আসলেই সম্ভব না।
গুহার প্রবেশ মুখ পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ির নিচে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয় খুব সাবধানে। দর্শনার্থীরা সিঁড়ি বেয়ে নামেন আর উপভোগ করেন আশে পাশের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার এখান থেকে দাঁড়িয়ে দেখা যায় গোটা খাগড়াছড়ি শহর। পাহাড়ের পাদদেশে রহস্যময় সুড়ঙ্গে প্রবেশ করলে দর্শনার্থীদের মনে জাগবে অন্যরকম শিহরণ। আলুটিলায় প্রবেশ পথের পিচ্ছিল মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়, এই পিচ্ছিল জায়গায় একটা গুহার মধ্যে কীভাবে হাঁটা সম্ভব। কিন্তু একটু এগুতেই শীতল পানির ধারা আর পাথরের উঁচু-নিচু পথ শিহরিত করে তোলে। এটি প্রকৃতির হাজার বছর পুরোনো একটি গুহা। আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় করে দর্শনীয় স্থানটির কিছু সংস্কার প্রয়োজন। ভালো খাবার রেস্টুরেন্ট, পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা ও নারীদের নিরাপত্তা জোরদার করলে এই গুহারপ্রতি দর্শনার্থীদের আগ্রহ আরো বাড়তো।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ