শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

কাশ্মীরে ভারত সরকারের দমননীতি ব্যর্থ

২৩ ফেব্রুয়ারি, আলজাজিরা: কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সাথে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। সাম্প্রতিক সময়ে অঞ্চলটিতে অস্থিরতার কারণেই তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন। কাশ্মিরে বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টির সাথে জোট সরকার পরিচালনা করছে মেহবুবার দল পিপলস ডেমোক্রাটিক পার্টি। তার মতে, কাশ্মীরের রক্তপাত বন্ধ করার আর কোনো পথ খোলা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে বেশ কিছু সামরিক স্থাপনায় গেরিলা হামলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাজ্য পার্লামেন্টে মেহবুবা বলেন, ‘আমরা তাদের সাথে তিনটি যুদ্ধ করেছি, তিনবারই জিতেছি। এমনকি ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধেও। কিন্তু আমাদের মৌলিক সমস্যার সমাধান হয়নি। সংলাপ ছাড়া এখানে বিকল্প কোনো সমাধানের পথ নেই।’

তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই আহ্বান উড়িয়ে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। দলটি কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের অস্ত্র দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করে পাকিস্তানকে। স্থানীয় বিজেপি নেতা সুনীল শেঠি আলজাজিরাকে বলেন, ‘যখন পাকিস্তান প্রাকাশ্যে মিলিশিয়া হামলায় সমর্থন দিচ্ছে, তেমন একটি সময়ে এই প্রস্তাব মানায় না। আমার মনে হয় শুধু সংলাপের মাধ্যমে এই হত্যাকা- বন্ধ করা যাবে না। সীমান্তে কঠোর সামরিক পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এই নেতা আরো বলেন, ‘কাশ্মীরে অনেক মিলিশিয়া পাঠাচ্ছে পাকিস্তান। এখন সংলাপের কোনো সম্ভাবনার অর্থ হবে তাদের কর্মকা-কে উৎসাহিত করা’। সংলাপের বিষয়ে মেহবুবা মুফতির আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কাশ্মীরের শিক্ষবিদ শেখ শওকত হোসেন। তিনি বলেন, ‘মুফতি জোট সরকারের অংশ। বক্তৃতা, বিবৃতি না দিয়ে তার উচিত কেন্দ্রীয় সরকারকে সংলাপের জন্য চাপ দেয়া। আসলে ভোটারদের খুশি রাখতে তিনি এসব বলছেন।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা কাশ্মীরে যে দমনমূলক নীতি গ্রহণ করেছে তা ব্যর্থ হয়েছে। কাশ্মিরের জোট সরকার অঞ্চলটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর হামলা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। গত তিন বছরে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যসহ প্রায় এক শ’ লোক নিহত হয়েছে, সীমান্তে দুই দেশের গুলীবিনিময়ের কারণে নিয়ন্ত্রণ রেখার পাশের এলাকার হাজারো লোক পালাতে বাধ্য হয়েছে। ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে।

২০১৬ সালে ভারতীয় বাহিনীর হাতে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর কাশ্মিরের জনগণ সরকারের ওপর ুব্ধ হয়ে ওঠে, এই বিক্ষোভ দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। এরপর ২০১৭ সালে ‘অপারেশন অল আউট’ নামের এক অভিযানে হত্যা করা হয় কাশ্মিরের দুই শতাধিক স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাকে। এর প্রতিক্রিয়ায় কাশ্মীরিদের মধ্যে ক্ষোভ আরো বেড়েছে। রাজ্য সরকারের তথ্য মতে একই বছর ১২৬ স্থানীয় যুবক যোগ দিয়েছে সশস্ত্র গ্রুপে।

দক্ষিণ কাশ্মীরের বাসিন্দা ফিরোজ আহমদ বলেন, ‘ অব্যাহত নির্যাতন-হত্যা যুবক ও শিক্ষিত তরুণদের অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য করছে। তারা এই পরিস্থিতিতে কোনো আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না।’ দক্ষিণ কাশ্মীরের গ্রামগুলোই মূলত ভারতবিরোধী বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ছিা গত দুই বছরে। এই অঞ্চলের বাসিন্দা ফিরোজ আরো বলেন, ‘আমরা এই রক্তপাতের অবসান চাই, এখনো বাবার কাঁধে ওঠে সন্তানের কফিন’। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মকা-ে বিরোধিতা করেন, যার কারণে প্রায় তাদের সাথে সংঘর্ষ হয় সেনা ও পুলিশের। ৫০ বছর বয়সী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘কেন যোদ্ধাদের বাঁচাতে গিয়ে সাধারণ লোকরা নিজেদের গুলীর মুখে সঁপে দেবে। এর অর্থ কঠোর নীতিতে কোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সরকার প্রকৃত বিষয়টিকে গ্রহণ করতে রাজি নয়। এখানে জনগণ চাকরি কিংবা উন্নয়নের জন্য জীবন দিচ্ছে না।’

বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর কাশ্মির উত্তাল ছিল টানা পাঁচ মাস। এ সময় এক শ’র বেশি বেসামিরক লোক নিহত হয়েছে। পেলেটগানে চোখ হারিয়েছে হাজারের বেশি নিরীহ কাশ্মিরি; কিন্তু তাতেও তাদের এতটুকু দমানো যায়নি। এখনো কাশ্মীরে যে অস্থিতিশীলতা চলছে তা ওই আন্দোলনেরই রেশ। তবে দিল্লিভিত্তিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাকেশ সিনহা মনে করেন, সেনাবাহিনীকে অবাধ স্বাধীনতা দেয়া উচিত, সেটাই হবে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সাথে সংলাপের প্রশ্ন আসতে পারে না। আগে তাদেরকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে’।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ