বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ঝিমিয়ে পড়েছে নওগাঁর জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম

আহাদ আলী, নওগাঁ : বর্তমানে বিশ্বের সিংহভাগ জায়গায় এখন নারীদের পদচারনা। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে নারীর স্পর্শ ও ছোঁয়া নেই। তেমনই এক ক্ষেত্র খেলাধূলা। বর্তমানে আমাদের দেশের নারীরা ফুটবল, ক্রিকেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকারের খেলার মাধ্যমে জয় করছে বিশ্ব। কিন্তু নওগাঁয় আর নতুন করে তৈরি হচ্ছে না নারী খেলোয়ার। কারণ ঝিমিয়ে পড়েছে জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম। আর্থিক সংকটের কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন সংস্থার কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা, আশির ও নব্বই দশকে নওগাঁ ক্রীড়াঙ্গন ছিলো মুখরিত। সেই সময়ে অনেক নারী ও পুরুষ খেলোয়ার তৈরি হয়েছে নওগাঁয়। সময়ের পরিবর্তন, নিয়মিত খেলার আয়োজন না করা, উদ্যোগ গ্রহণ না করাসহ বিভিন্ন কারণে বর্তমানে ঝিমিয়ে পড়েছে নওগাঁর মহিলা ক্রীড়াঙ্গন। এক সময় নওগাঁর নারী খেলোয়ারদের সুনাম ছিলো দেশজুড়ে। নওগাঁর নারীরাও খেলেছে দেশের জাতীয় পর্যায়ে। বর্তমানে নওগাঁর মেয়ে ডলি রানী বিকেএসপি’র নারী ক্রিকেট দলের কোচ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে। 
তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থের বরাদ্দ, উপযুক্ত পৃষ্টপোষকতা ও নারীদের জন্য আলাদা খেলার মাঠ পেলে আবার নওগাঁর নারী ক্রীড়াঙ্গন জেগে উঠবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গত ১৬ সালে ৪বছরের জন্য ১৭ সদস্য বিশিষ্ট জেলা নারী ক্রীড়া সংস্থার একটি পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু অর্থ সংকটসহ নানা কারণে এই কমিটি স্বতস্ফূর্ত ভাবে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। বর্তমানে জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়ের অবস্থা খুবই নাজুক। মাঝে মধ্যে খোলা হয় এই অফিস। মুছে গেছে নাম ফলক।
স্থানীয় অনেকেই জানান, পূর্বে নারীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন খেলা চোখে পড়তো। কিন্তু বর্তমান সময়ে নওগাঁর মহিলা ক্রীড়াঙ্গন ও জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে। নওগাঁয় নতুন করে আর তৈরি হচ্ছে না কোন নারী খেলোয়ার। নিয়মিত আয়োজন করা হয় না স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে মেয়েদের নিয়ে কোন খেলার। যার কারণে দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে নওগাঁ জেলা মেয়েদের খেলার দিকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই সমস্যা থেকে উত্তোরণ পেতে হলে জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্থিক ভাবে সহায়তাসহ সরকারি ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিকেএসপি’র নারী ক্রিকেট দলের কোচ নওগাঁর মেয়ে ডলি রানী বলেন, খেলার বিষয়ে নওগাঁর মেয়েরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। নওগাঁ থেকে নতুন করে মেয়ে খেলোয়ার বের হয়ে আসছে না। যদি জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা উদ্যোগ গ্রহণ করে ও মেয়েদের জন্য নিয়মিত খেলার আয়োজন করে তাহলে নওগাঁ থেকেও অনেক মেধাবী মেয়ে খেলোয়ার তৈরি করা সম্ভব। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে জেলার মহিলা ক্রীড়া সংস্থাকে আবার সচল করে তোলার জন্য। না হলে খেলার জগত থেকে নওগাঁর নারীদের নাম একদিন মুছে যাবে বলে আশংকা করছেন নওগাঁর মেয়ে ডলি রানী। 
নওগাঁর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো: শরিফুল ইসলাম খাঁন, মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়ের সাইনবোর্ডের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায় যে নওগাঁ জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান কি অবস্থা। যে দেশের অর্ধেক নারী সেই দেশে মেয়েদের পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। বর্তমানে আমাদের দেশের সকল স্থানে নারীদের স্পর্শ রয়েছে। তাই নারীদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন একেবারেই অলিক। বর্তমান ডিজিটাল সময়ে ক্রীড়াঙ্গন থেকে নওগাঁর নারীদের নীরব ভ’মিকা পালন করা শুভকর নয়। এই ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য সরকারসহ আমাদের সকলের সুদৃষ্টি দিতে হবে ঝিমিয়ে পড়া এই মহিলা ক্রীড়া সংস্থার দিকে।
জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সদস্য ও নারী ক্রীড়াবিদ রাবেয়া খাতুন বেলী বলেন, আমি এই খেলাধূলা  ছাড়তে পারব না বলে আমার জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে সংসারধর্ম। খেলাধূলার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে সংসারের প্রতি সময় দিতে পারনি বলে আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই থেকে এক মেয়েকে নিয়ে আলাদা ভাবে জীবনধারন করেছি তবুও কোন বাধাই আমাকে খেলার জগত থেকে দুরে লাখতে পারেনি। এই জীবনে অনেক মেয়েকে খেলোয়ার হিসাবে তৈরি করেছি। মূলত অর্থই আমাদেরকে সব কিছু থেকে পিছিয়ে রেখেছে। একজন মহিলা ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে তার পেছনে অনেক মেহনত করতে হয়। অনেক অর্থের প্রয়োজন হয় কিন্তু সরকার থেকে আমাদের সংস্থায় আধুনিক চাহিদা মতো তেমন কোন অর্থ দেয়া হয় না। যার কারণে আমরা ানেক পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের ইচ্ছে আছে কিন্তু পেছনে নেই উপযুক্ত যোগান।
জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, মুর্শেদা ইফেৎ বানু হাসি বলেন, মূলত আর্থিক সংকটের কারণে আমাদের জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। অর্থের অভাবের কারণে আমরা সংস্থার পক্ষ থেকে কোন খেলার আয়োজন করতে পারি না। এমনও হয়েছে অর্থের অভাবে আমরা শুরু হওয়া টূর্ণামেন্টে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। বছরে যেটুকু অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও আমরা অনেক কিছুই করতে পারি না। আমাদের খরচ বেড়েছে কিন্তু বরাদ্দ ২০বছর আগে যা ছিলো এখনও তাই রয়েছে। যদি সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠক আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আবার আমরা নওগাঁর নারী খেলার জগতটাকে প্রাণবন্তর করে তুলতে পারবো। সরকার নওগাঁর মহিলা ক্রীড়াঙ্গনকে আবার মুখরিত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তার জন্য অচিরেই সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে মনে করছেন নওগাঁর সচেতন মহল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ