বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

জাতীয় প্রেস ক্লাবে অস্ত্রের মহড়া

গত ৬ মার্চ প্রকাশ্যে ভয়ংকর ধরনের অস্ত্রের মহড়া হয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সেদিন প্রেস ক্লাবের সামনে তখন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির মানব বন্ধন কর্মসূচি চলছিল। বক্তৃতা করছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শ্রোতা ছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। কর্মসূচি পালিত হচ্ছিল শান্তিপূর্ণভাবে। এমন এক সময়ে বেলা ১২টার দিকে প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গইে হঠাতই শুরু হয়েছিল অস্ত্রের মহড়া। এতে অংশ নিয়েছিল চার থেকে ছয়জন যুবক। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল অত্যাধুনিক পিস্তল ও রিভলবার। প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে তারা মারমুখী মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়ে ছুটোছুটি করছিল।
পরে জানা গেছে, তারা আসলে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারীকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছিল। তাদের ধাওয়ার মুখে ভীত হয়ে শফিউল বারী প্রেস ক্লাবের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন। সশস্ত্র যুবকেরাও তার পিছু নিয়ে প্রেস ক্লাবের ভেতরে গেছে। সঙ্গত কারণেই সেখানে উপস্থিত ক্লাব সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে ভীতি ও আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল। মুহূর্তেই পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছিল। সকলে আত্মরক্ষার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। পরিস্থিতি নিজেদের বিরুদ্ধেও চলে যেতে পারে এবং সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা গুন্ডা-সন্ত্রাসী মনে করে উল্টো তাদের আটক করতে পারেনÑ এমনটি আঁচ করতে পেরে সশস্ত্র যুবকেরা চিৎকার করে বলেছিল, ‘আমরা পুলিশ, আমরা পুলিশ’। এই চিৎকার তারা বেশ কয়েকবার দিয়েছে। সে কারণে উপস্থিত সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেননি। সশস্ত্র যুবকরাও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারীকে আটক করে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে চলে গেছে। পরের খবর হলো, শফিউল বারীকে প্রেস ক্লাব থেকে গোয়েন্দা সদর দফতরে নেয়া হয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রাঙ্গণে এবং ভেতরে চালানো এই সশস্ত্র মহড়া দেশের সকল মহলেই তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটিয়েছে। অস্ত্র হাতে তৎপর যুবকদের ছবি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। এতে দেখা গেছে, নিজেদের পুলিশ বলে পরিচয় দিলেও যুবকদের কারো পরণেই পুলিশের পোশাক ছিল না। তারা বরং জিন্স প্যান্ট, টি শার্ট এবং রঙিন জামা-কাপড় পরা ছিল। তাদের পায়ে ছিল কেডস। ফলে নিজেরা পরিচয় না দিলে বোঝার উপায় ছিল না যে, তারা সত্যি পুলিশ তথা ডিবি বা গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য। আপত্তি ও প্রতিবাদও উঠেছে একই কারণে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ জানাতে গিয়ে বলেছেন, উচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, সাদা পোশাকে অর্থাৎ পুলিশের পোশাক ছাড়া অন্য কোনো পোশাক পরা অবস্থায় কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। তাছাড়া গ্রেফতারের সময় ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে হবে। অন্যদিকে মঙ্গলবারের ঘটনার সময় ডিবির সদস্যরা কেবল সাদা পোশাকেই ছুটোছুটি করেনি, প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখিয়ে ভীতি ও আতংকও ছড়িয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, যুবকদের দেখে বোঝারই উপায় ছিল না যে, তারা ডিবি বা পুলিশের সদস্য। দেশজুড়ে চলমান হত্যা-সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে বরং সকলেই ধরে নিয়েছিল, ওই যুবকরা গুন্ডা-সন্ত্রাসী এবং প্রেস ক্লাবে তারা মাস্তানি করতে এবং কাউকে না কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে এসেছিল।
আপত্তি ও প্রতিবাদের দ্বিতীয় কারণ হিসেবে এসেছে ঘটনাস্থল তথা জাতীয় প্রেস ক্লাব। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, জাতীয় প্রেস ক্লাব দেশের সবচেয়ে নিরপেক্ষ ও নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিচিত। সকল রাজনৈতিক দল তো বটেই, ছাত্র সংগঠনগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠনও প্রেস ক্লাবে সভা-সেমিনার ও সংবাদ সম্মেলন করে থাকে। শিক্ষক, আইনজীবী ও শ্রমিকসহ পেশাজীবী সকল সংগঠনেরও সমাবেশ করার এবং দাবি ও বক্তব্য তুলে ধরার প্রধান স্থান প্রেস ক্লাব। বিপন্ন ও অসহায় অনেকের জন্য একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবেও প্রেস ক্লাবের অবদান রয়েছে। সমাবেশ-মানব বন্ধন শুধু নয়, দাবি আদায়ের জন্য অনশনের মতো কর্মসূচিও প্রেস ক্লাবে এবং এর সামনের রাজপথে করা হয়। বড় কথা, জাতীয় প্রেস ক্লাব সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। তাদের মিলনকেন্দ্র। ক্লাবের ভেতরে ক্লাব সদস্য ছাড়া অন্যদের প্রবেশে নিষিদ্ধ। এমনকি সদস্য না হলে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীরাও প্রেস ক্লাবের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন না।
অন্যদিকে ৬ মার্চের ঘটনার সময় ডিবির সদস্য হিসেবে পরিচয়দানকারী সশস্ত্র যুবকেরা সরাসরি প্রেস ক্লাবের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। এরই পাশাপাশি ক্লাব সদস্যদের অস্ত্র দেখিয়ে ভীত ও সন্ত্রস্ত করার মধ্য দিয়েও তারা আইন লংঘন করেছে। সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত একটি দেশের জাতীয় প্রেস ক্লাবের মর্যাদা ও গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা এবং এমন একটি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া।   

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ