মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

উন্নয়নশীল দেশ হলে কমবে রফতানি ও সহজ শর্তে ঋণ

গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডির উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েশন অব দ্য এলডিসি গ্রুপ’ শীর্ষক পাবলিক ডায়ালগের আয়োজন করা হয় -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে রফতানি এবং সহজ শর্তে ঋণ কমবে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তবে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়াকে সাম্প্রতিক উন্নয়নের ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা বলে মনে করছে সংস্থাটি। এজন্য বেশ কয়েকটি প্ররিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। আর পরিস্থিতি মোকাবেলা করাই বড় চ্যালেঞ্জ।
গতকাল শনিবার গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে সিপিডি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েশন অব দ্য এলডিসি গ্রুপ’ শীর্ষক পাবলিক ডায়ালগে সংস্থাটির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, অর্থনীতিবিদ মির্জা আজিজুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হাসান প্রমুখ।
 দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এর আগে যেসব দেশ এলডিসি থেকে বের হয়েছে তারা ছোট ছোট দেশ। তাদের উন্নয়ন ও জনসংখ্যা খুবই কম। ওই সময় তাদের প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক বিনিয়োগে পতন ঘটেছে, রেমিটেন্সও কমেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন এলডিসি থেকে বের হচ্ছে তখন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি অনুকূলে নয়। এজন্য বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণকালীন টেকসই অর্থনীতি ধরে রাখতে উত্তরণকালীন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উৎপাদনও বাড়াতে হবে এবং একই পণ্যে নির্ভর না করে পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, এলডিসি থেকে বের হলে রেয়াতি সুদের সুযোগ হারাবে বাংলাদেশ। এজন্য নতুন উচ্চ সুদ মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে হবে। রফতানি বহুমুখীকরণ, শ্রমিকের দক্ষতা উন্নয়ন, শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা ধরে রাখা সংক্রান্ত কৌশল সরকারকে নিতে হবে। এ ছাড়া দেশের ভিতরে গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ঐক্য এবং সুশাসন ধরে রাখতে না পারলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুফল পাবে না।
তিনি বলেন,  তবে যারা এলডিসি থেকে বের হয়েছে তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার উপর চাপ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কর আদায়ের পরিমাণ যদি না বাড়ে। তবে এসব দেশগুলো পর্যাপ্ত বৈদেশিক বিনিয়োগ পেয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ পাবে কিনা-সেটা চিন্তা করতে হবে।
ড. গওহর রিজভী বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি থাকলেও প্রতি বছরই প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। তবে দুর্নীতি ছাড়া পৃথিবীতে কোনো দেশ নেই। এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, বিদেশী বিনিয়োগ, নতুন শিল্প ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। এ অবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হয়ে আসা বাংলাদেশকে  নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।
তিনি আরও বলেন,সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি আমাদের থাকতে হবে। এ জন্য সরকার সজাগও রয়েছে। এসডিজি প্রস্তবায়নে আমরা এগিয়ে রয়েছি। এগিয়ে যাওয়ার এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এ জন্য সরকারের পাশাপশি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে উন্নতি এ কঠিন পথে আমরা হয়তো হোচট খেতে পারি।
অর্থনীতিবিদ মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অর্থনীতিতে এগিয়ে নিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। উৎপাদন ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বাড়াতে হবে। নতুন শিল্পায়ণ ও নারী উদ্যোক্তা  সৃষ্টি করতে হবে। পণ্যের বহুমূখিকরণ করতে হবে। প্রাইমারি ও মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে। সবচেয়ে জরুরি সুশাসন নিশ্চিত করা। না হলে সুযোগ ব্যাহত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদিও প্রক্রিয়াকরণ খাতকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, রফতানি বাড়ছে। প্রক্রিয়াকরণ খাতে শ্রমের উৎপাদনশীলতা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়াগত কারণে বিরুপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেগুলোকে মোকাবেলার বিষয়টি উঠবে। রোহিঙ্গাদের আগামীতে কিভাবে নেওয়া হবে সেটি সামনে আসবে। সবচেয়ে বড় বিষয় বাংলাদেশ যখন এলডিসি থেকে বের হচ্ছে তখন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বলেও জানান তিনি।
এজন্য বাংলাদেশকে সপ্তম-পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা মাথায় রেখেই টেকসই অর্থনীতি ধরে রাখতে উত্তরণকালীন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। কৃষিখাতের নবায়ন দরকার হবে। মানবসম্পদের উন্নয়ন ধারা জোরদার করতে হবে। জলবায়ু প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হবে। নৃ-গোষ্ঠী ও নারীর প্রতি বৈষম্য কমাতে হবে। নতুন অর্থায়ণ খুঁজতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঐক্যমত না থাকলে বাংলাদেশ এ উত্তরণের সুফল থেকে পিছিয়ে পড়বে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ