মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রিয়াদের ছক্কায় শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

সংক্ষিপ্ত স্কোর : 

শ্রীলংকা--------১৫৯/৭ (২০ ওভার)

বাংলাদেশ-----১৬০/৮(১৯.৫ ওভার)

বাংরাদেশ ২ উইকেটে জয়ী। 

ম্যাচ সেরা : মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ)।

স্পোর্টস রিপোর্টার : দেশের মাটিতে ব্যর্থ হলেও শ্রীলংকার নিদাহাস ট্রফিকে ভালোই ঘুরে দাড়িয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিক শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে টাইগাররা। নিদাহাস ট্রফি শুরুর আগে বাংলাদেশ ফাইনালে খেলবে এটা কেই ভাবেনি। তবে শ্রীলংকাকে দর্শক বানিয়ে ভারতের সাখে ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশই। প্রথম ম্যাচে ভারদের কাছে হারা দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশের ফাইনাল খেরতে হলে শেষ ম্যাচে শ্রীলংকাকে হারানো বিকল্প ছিলনা। আর সেটাই করেছে টাইগাররা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের একটি ছক্কাই কাদিয়েছে লংকানদের। আর আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়ে টাইগারদের নিয়েছে বাংলাদেশকে। ম্যাচ জিততে ও ফাইনালে উঠতে শেষ ২ বলে ৬ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। স্ট্রাইকে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাই শেষ পর্যন্ত আশাটাও বেছে ছিল বাংলাদেশের।  শ্রীলংকার বাঁ-হাতি পেসার ইসুরু উদানার করা শেষ ওভারের পঞ্চম বলটি মাঠের বাইরে পাঠিয়ে ছক্কা আদায় করে নেন মাহমুদুল্লাহ। আর এ ছক্কাতেই শ্রীলংকাকে ২ উইকেটে হারিয়ে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। উভয় দলের জন্য জীবন-মরন এই ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান করে শ্রীলংকা। জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ছিল ১৬০ রান। টার্গেটটা বড় না হরেও ম্যাচটা কঠিন করেই জিততে হয়েছে বাংলাদেশকে।  ব্যাট করতে নেমে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১৮ বলে অপরাজিত ৪৩ রানে ১ বল ও ২ উইকেট হাতে রেখেই অবিস্মরণীয় জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ফলে চার খেলায় চার পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থেকে ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টাইগাররা। জয়ের জন্য বাংলাদেশে সামনে ১৬০ রানের টার্গেটটা সহজই ছিল। আর ওভার প্রতি ৮ রান করার লক্ষ্যে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। প্রথম ওভার থেকেই ১০ রান তুলে নেন তামিম ও লিটন। তবে পরের ওভারে আউট হন লিটন। অফ-স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার করা বেশ বাইরের ডেলিভারি মিড-অফ দিয়ে মারতে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরেন তিনি। তার বিদায়ে ক্রিজে আসেন সাব্বির রহমান। ভালোই শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু বেশিক্ষণ নিজেকে ক্রিজে রাখতে পারেননি সাব্বির। ধনঞ্জয়ার একটি লাইনের ডেলিভারি মিস করে স্টাম্পড হন সাব্বির। ৮ বলে ১৩ রান করেন তিনি। ৩৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে গেছেন তামিম ও আগের দু’ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা মুশফিকুর রহিম। পাওয়ার প্লের শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৫০ রানে নিয়ে যান তারা। পরবর্তীতেও রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন তামিম ও মুশফিকুর। এ জুটির কল্যাণে ১২তম ওভার শেষে শতরানের কোটা স্পর্শ করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে আউটন হন মুশফিক। এবার ২৫ বলে ২৮ রান করেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে তামিমের সাথে ৫২ বল মোকাবেলা করে ৬৪ রান যোগ করেন তিনি। এরপর ১২ রান যোগ হলে আরও ২ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জয়ের পথে বড় ধরনের ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। টি-২০ ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া তামিম থামেন ৫০ রানেই। তার ইনিংসে ৪টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি। পাঁচ নম্বরে নামা সৌম্য এবার করেন ১১ বলে ১০ রান। ১০৯ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোয় শেষ ৩১ বলে ৫১ রান প্রয়োজন পড়ে বাংলাদেশের। তবে ১৮তম ওভারের শেষ বলে বিদায় ঘটে সাকিবের। ৭ রান করে ফিরেন সাকিব। তাই শেষ ২ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ২৩ রান।

টেল-এন্ডার মিরাজকে নিয়ে একাই ১১ রান যোগ করেন রিয়াদ। ওই ওভারের শেষ বলে রান আউটের ফাঁদে পড়েন মিরাজ। শূন্য হাতে ফিরেন তিনি। এরপর শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার পড়ে ১২ রান। পেসার উদানার করা ম্যাচের শেষ ওভারের প্রথম বলে কোন রান নিতে পারেননি  মোস্তাফিজুর। পরের ডেলিভারিতে রান নিতে গিয়ে আউট হন তিনি। ফলে স্ট্রাইক পান রিয়াদ। তৃতীয় বলে বাউন্ডারি ও চতুর্থ বলে ২ রান নেন তিনি। ফলে শেষ দুই বলে ৬ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। পঞ্চম বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে ফ্লিকড করে ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে ফাইনালে নিয়ে যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৮ বলে অপরাজিত ৪৩ রান করেন তিনি। এর আগে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অধিনায়ক হিসেবে টস লড়াইয়ে নামেন সাকিব। আর টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেন তিনি। আর বল হাতে নিয়ে বোলিংয়ের প্রথমেই সফল আক্রমণ তার। নিজের প্রথম ওভারে মাত্র ৩ রান দেন সাকিব। তবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে শ্রীলংকার দুই ওপেনারকে ফেলেন বিপদে। নিজের প্রথম  ডেলিভারিতেই গুনাথিলাকাকে বিদায় দেন সাকিব। প্রায় দেড় মাস পর দলে ফিরেই নিজের সপ্তম  ডেলিভারিতেই উইকেট শিকারের আনন্দে মাতলেন সাকিব। ৪ রান করেন গুনাথিলাকা। প্রথম ওভারে রুবেল ব্যয়বহুল হওয়ায় তাকে সরিয়ে আনেন মোস্তাফিজকে। সাকিবের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তিনি। শেষ ডেলিভারিতে আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিজকে থামান মোস্তাফিজ। তার ওভারটি ছিলো উইকেট মেডেন। মেন্ডিজকে ব্যক্তিগত ১১ রানে থামানোর পর নিজের পরের ওভারের চতুর্থ  ডেলিভারিতে দাসুন শানাকার উইকেটটিও তুলে দেন ফিজ। এর আগে ওই ওভারের দ্বিতীয়  ডেলিভারিতে রান আউট হন উপুল থারাঙ্গা। থারাঙ্গা ৫ ও শানাক শূন্য রানে ফিরেন। ৩২ রানে চতুর্থ উইকেট হারানো শ্রীলংকাকে আরো চাপে ফেলে দেন বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ছয় নম্বরে নামা জীবন মেন্ডিজকে থামান মিরাজ। মাত্র ৩ রান করেন মেন্ডিজ। ফলে মাত্র ৪১ রানে প্রথম ৫ উইকেট হারায় শ্রীলংকা। এই অবস্থায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবেই নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। তবে চাপে পড়েও দমে যায়নি ওই সময় ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরা ও অধিনায়ক থিসারা পেরেরা। ব্যাট হাতে পাল্টা আক্রমণ চালান তারা। উইকেটে চারপাশে চার-ছক্কা মেরে ১৬তম ওভারের প্রথম বলেই দলকে নিয়ে যায় তিন অংকে।  শেষ পর্যন্ত দলীয় ১৩৮ রানে বিচ্ছিন্ন হন দুই পেরেরা। মাত্র ৬১ বলে ৯৭ রান  যোগ করেন তারা। টি-২০ ক্যারিয়ারের দশম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেয়া কুশলকে শিকার করেন সৌম্য। ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪০ বলে ৬১ রান করেন কুশল। কুশলের মত হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন পেরেরাও। শেষ পর্যন্ত ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩৭ বলে ৫৮ রান করেন তিনি। এ ছাড়া ইসুরু উদানা অপরাজিত ৭ ও আকিলা ধনঞ্জয়া অপরাজিত ১ রান করেন। ফলে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান করে শ্রীলংকা। বাংলাদেশের মোস্তাফিজ ২টি, সাকিব-রুবেল-মিরাজ ও সৌম্য ১টি করে উইকেট নেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ