শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

যশোরে ছাদবাগান করে জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী ফারহানার স্বপ্ন সবুজকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া

মোস্তফা রুহুল কুদ্দুস, যশোর থেকে : বাড়ির ছাদে দৃষ্টিনন্দন বাগান করে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন যশোরের গৃহবধূ ফারহানা ইয়াসমিন। সবুজের প্রতি অগাধ ভলোবাসা ও কঠোর পরিশ্রম তার জীবনে এ সাফল্য এনে দিয়েছে। এখন ফারহানার স্বপ্ন সবুজকে নগর জীবনের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের বিস্তর ব্যবধানের কারণে তার স্বপ্ন পাখা মেলতে পারছে না। পুরস্কার বিজয়ের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন ফারহানা ইয়াসমিন।
যশোর শহরের বকচর মসজিদপাড়ায় ফারহানার বাড়ি। স্বামী আকরাম হোসেন একজন ব্যবসায়ী। ৩ শতক জমির ওপর স্থাপিত একতলা ভবনের মাত্র ৯৫০ বর্গফুট ছাদের ওপর তিনি গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন বাগান। নাম দিয়েছেন ফারহানা ফুটস এন্ড ফ্লাওয়ার গার্ডেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, ক্ষুদ্র পরিসরের ছাদে ছোট বড় টবের ভেতর তিনি বিভিন্ন প্রজাতির ২৪০টি গাছ লাগিয়েছেন। এর মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, তেঁতুল, আমড়া, কদবেল, ছবেদা, কমলা, মাল্টা, বেদনাসহ ৬২ প্রকার ফলের গাছ রয়েছে। কাঁঠাল ছাড়া অধিকাংশ গাছেই ফল হচ্ছে। যার স্বাদ ও সাইজ জমিতে লাগানো গাছের ফলের চেয়ে কম নয়। এদেশের আবহাওয়ায় মিষ্টি কমলা হয় না বলে শোনা গেলেও ফারহানার ছাদে লাগানো ছোট আকৃতির চায়না কমলা বেশ মিষ্টি। বেদানা রঙে চাপা, তবে রসালো। মাল্টাসহ বিভিন্ন প্রকার লেবু হচ্ছে প্রচুর। হচ্ছে থাই পেয়ারা, কদবেল, সুইট বেল। ফারহানা ইয়াসমিনের বাগানে ৩৫ রকমের ফুল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ইরানি গোলাপ, জবা বকুল। রয়েছে ৬ প্রকারের ক্যাকটাস। ঘৃত কুমারী, পাথরকুচি, পুদিনা পাতাসহ ৮ প্রকার ঔষধি গাছ রয়েছে। মশলা জাতীয় গাছের মধ্যে রয়েছে থাই সুপ, পোলাও পাতা, তেজপাতা, শোভাবর্ধনকারী গাছ রয়েছে ২৩ প্রকার। দৃষ্টি কাড়ে ঝাউপাতা বাহার, ক্রিসমাস ট্রি। ফলে, ফুল ঔষধি গাছের পাশাপাশি কাঁচা মরিচ, উচ্চে, শাকসবজি হচ্ছে ছাদে। ক্ষুদ্র পরিসরে এতো গাছের সমারোহে সবুজ অরণ্যে পরিণত হয়েছে ছাদটি। যে কোন প্রকৃতিপ্রেমির নজর কাড়ে ফারহানা ইয়াসমিনের ছাদ বাগানটি। ছোট্ট একটা ছাদকে ঘিরে মাত্র ৬ বছরে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে গেছেন তিনি। ২০১২ সালে মাত্র ৫টি গাছ নিয়ে তার এই অভিযাত্রা। হাঁটি হাঁটি পা পা করে নিরবে নিভৃতে পথ চলে এবার জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছেন। নারী হয়ে ছাদ কৃষিতে বিশেষ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১ মার্চ উসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে ব্রঞ্জপদক, নগদ টাকা ও সনদ প্রদান করেন। ফারহানা ইয়াসমিন একজন গৃহিনী। লেখাপড়া করেছেন এমএসসি পর্যন্ত। দুই মেয়ে বৃষ্টি ও বন্যা কলেজের ছাত্রী। স্বামী থাকেন ব্যবসা নিয়ে। তাদের দেখাশোনা ও ঘর গৃহস্থালির কাজ করেও একটি সফল ছাদ বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি। নিজের একতলা বাড়িটিও ছবির মত পরিপাটি করে সাজিয়েছেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি নিজ হাতে গাছ পরিচর্যা করেন। সার, কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা পরিস্কার, রোগ বালাই নির্মূল সব কিছুই করেন নিজ হাতে। এতো কিছু সম্ভব হয়েছে সবুজের প্রতি তার অদম্য আগ্রহের কারণে। ফারহানা ইয়াসমিন এখন সবুজ বৃক্ষরাজি মানুষের ছাদে ছাদে ছড়িয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তার প্রত্যাশা, শহরের যান্ত্রিক জীবন ও আলো ঝলমলে পরিবেশ সবুজে ভরে উঠুক। দৃষ্টি নন্দন বাগান হোক প্রতিটা বাড়ির ছাদে। কিন্তু ফারহানা সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। আছে নানা সীমাবদ্ধতা। তারপরও বসে নেই তিনি। পুরস্কার নিয়ে বাড়ি ফেরার পর এলাকার মহিলাদের ডেকে তার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। উদ্বুদ্ধ করেছেন ছাদ বাগান গড়ে তুলতে। অনেকে সাড়াও দিয়েছেন। শত বাধার মুখেও তিনি এগিয়ে যেতে চান। ফারহানা ইয়াসমিন জানান, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। কোন প্রতিকূলতা উদ্যমী মানুষের পথ রোধ করতে পারে না। ছাদ বাগান করে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে তারই প্রমাণ রেখেছেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ফারহানা জানান, সবুজের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় মনোবল তার সাফল্য এনে দিয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ