বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণে যেতে না পারায় সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ

 

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ করতে না পারায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো মিল না থাকলেও সেখানে যেতে না পেরে কমিটির সদস্যরা এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যেভাবেই হোক সেখানে তাদের ‘শিক্ষা সফরে’ নেয়ার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি করেছেন তারা।

বর্তমানে সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী ‘কৌশলী’ ও ‘সাধারণ’ হয়। আর ওই দুই দেশে এখনও শিক্ষা সফরে যেতে না পারায় সেই কার্যবিবরণীর ভাষায় যেভাবে কমিটির সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সেটাকে নজিরবিহীন বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে শিক্ষা সফর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, প্রয়োজনীয় ব্যয় বরাদ্দ ও কতিপয় সীমাবদ্ধতার কারণে এ সফর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি এবং ভবিষ্যতে হবে কিনা তা বলতে পারছি না। কিন্তু সংসদীয় কমিটির সদস্যরা তা নাকচ করে দিয়ে, মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের ‘ইতিবাচক’ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

শিক্ষাবিদরা এই সফরকে আমোদপ্রমোদ ভ্রমণ হিসেবে উল্লেখ করলেও সংসদীয় কমিটির সভাপতি এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন- এটা আমাদের অধিকার।

গত রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, কমিটির সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন এমপি স্থায়ী কমিটির তরফ থেকে উক্ত সফর অনুষ্ঠানে বিলম্ব হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি স্থায়ী কমিটির নির্ধারিত সফর অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ইতিবাচক হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কমিটির সদস্য সামশুল হক চৌধুরী এমপি স্থায়ী কমিটির তরফ থেকে ইতোপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উক্ত শিক্ষা সফর অনুষ্ঠানে পদ্ধতিগত জটিলতা ও বিলম্বের কারণে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অন্যান্য স্থায়ী কমিটি যথারীতি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করছে। তিনি স্থায়ী কমিটির তরফ থেকে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে যথাশিগগির সম্ভব অস্টেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের পূর্ব নির্ধারিত শিক্ষা সফর সম্পন্ন করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন এমপি উল্লিখিত সফর অনুষ্ঠানের দীর্ঘসূত্রতা ও পদ্ধতিগত জটিলতা সৃষ্টির জন্য অনির্ধারিত বিলম্ব হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে নিয়মিত এবং অব্যাহতভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে বিদেশ ভ্রমণ কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে। অথচ স্থায়ী কমিটির পূর্ব নির্ধারিত এবং গুরুত্বপূর্ণ এ শিক্ষা সফর অনুষ্ঠানে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি না হওয়া দুঃখজনক। তিনি মন্ত্রণালয়ের সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন।

ওই বৈঠকে উপস্থিত সংসদের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশ সফরে যেতে না পেরে কমিটির সদস্যরা অনেককে ধমকাধমকি করেন। তারা কর্মকর্তাদের বদলির হুমকি দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফর বাংলাদেশের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। সফরকারীদের জন্য এটি শুধুই আমোদ-প্রমোদ হিসেবে গণ্য হবে, এতে দেশের মানুষের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।

তিনি বলেন, এ দেশের প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে থাইল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থার কিছুটা মিল রয়েছে। বর্তমানে এ দেশটি শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক অগ্রসর হয়েছে। প্রয়োজনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় বিষয়ক কমিটির সদস্যদের এ দেশটিতে সফর করার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের জন্য বিদেশ সফর প্রয়োজন রয়েছে। সেটি শুধু অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নয়, বিশ্বের যেকোনো দেশ হতে পারে। যেহেতু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই সফরকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তাই বলা যেতে পারে এ সফরের উদ্দেশ্য যথাযথ নয়। সে কারণে কর্তৃপক্ষ সেটির জন্য অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী নয়।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নকারীদের উন্নত দেশগুলোতে সফর করা প্রয়োজন রয়েছে। তবে তার উদ্দেশ্য হতে হবে যথাযথ। যদি তা না হয় তবে সে সফরের মাধ্যমে দেশের অর্থব্যয় ছাড়া আর কিছু বয়ে আনবে না।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন বলেন, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আমরা বিদেশ যেতেই পারি। এটা আমাদের অধিকার। কারণ আমরা জনপ্রতিনিধি।

কিন্তু ওই দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার মিল আছে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেসব দেখার জন্যই তো আমরা সেখানে যেতে চাই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ