বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

প্রত্যাবাসনে এখনও প্রস্তুত নয় মিয়ানমার : জাতিসংঘ

সংগ্রাম ডেস্ক : মিয়ানমারে বহুল প্রতীক্ষিত ও বিরল সফর শেষে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এখনও তৈরি নয় রাখাইন। সরেজমিনে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখে, এবং সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল উরসুলা মুয়েলার এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। ৬ দিনের সফর শেষে উরসুলা মুয়েলার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা, নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আর অব্যাহত স্থানচুত্যির ঘটনা ঘটছে ধারাবাহিকভাবে। এই পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য সহায়ক নয় বলে মত দিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতেও প্রত্যাবাসন আদতে সম্ভব কিনা, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। কেবল গত বছর আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত কেবল ৩৮৮ জনকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া চালু রাখার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। এই অবস্থাতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালিয়ে আলামত নষ্ট, বিপুল সামরিকায়ন, উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকা, প্রত্যাবাসন নিয়ে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর হুমকির ধারাবাহিকতায় রাখাইনে বৌদ্ধদের মডেল গ্রাম গড়ে উঠছে বলে খবর পাওয়া যায়। 

গত নবেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির অনুসারে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য, মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমার তার সর্বোচ্চ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতোমধ্যে দেশটি সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের জন্য কয়েকশ’ রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাই করেছে। মিয়ানমারের এক কর্মকর্তা গত মাসে বলেছিলেন, এই দলটি মিয়ানমারে ফিরে আসা শরণার্থীদের প্রথম দল হবে। তারা নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে ফিরে আসবে।

মিয়ানমারে ঢোকার বিরল অনুমতি পেয়ে মুয়েলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি দেশটির ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি’র সঙ্গে দেখা করেন। এছাড়া সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য বেসামরিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও কথা বলেন। মুয়েলার বলেন, আমি (মিয়ানমার কর্মকর্তাদেরকে) এই সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছি ও টেকসই সমাধানের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও কথা বলেছি।

মিয়ানমার বলেছে, তাদের বাহিনী মুসলিম ‘সন্ত্রাসী’দের বিরুদ্ধে বৈধ অভিযান চালাচ্ছে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এর আগে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের আগ্রহ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আগামী দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে  সম্মত হয়।

মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে সীমান্তের মধ্যে দুটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র নির্মাণ করে যাকে তারা রোহিঙ্গাদের প্রথম দলের জন্য অস্থায়ী শিবির হিসেবে দাবি করে। জানুয়ারিতে মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী কিয়াও টিন বলেন,  যদি বাংলাদেশ তাদের আমাদের সীমান্তে নিয়ে আসে তাহলে আমরা তাদের সীমান্তে গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছি।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, সমস্যাগুলোর একটি হলো সহিংসতার সময় খালি হওয়া কমপক্ষে ৫৫টি গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী শিবিরে রাখার পর তাদের নিজেদের এলাকায় ফিরে যেতে দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করেন কিনা জানতে চাইলে মুয়েলার বলেন, ‘আমি সত্যি এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন’।  মুয়েলার বলেন, ‘আমি পুড়িয়ে দেয়ার পর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া গ্রামগুলো দেখেছি। লোকজনকে তাদের মূল জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কোনও প্রস্তুতি আমি দেখিওনি, শুনিওনি’।

মিয়ানমার কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, শরণার্থীদের জন্য আবাসন তৈরির জন্যই গ্রামগুলো বুলডোজার চালানো হয়েছে।  মিসেস মুয়েলার বলেন, তিনি দেশের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে মানবিক ত্রাণ সহায়তা পাঠানোয় সীমাবদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি সাহায্য সংস্থাগুলোকেও রাখাইনে প্রবেশ করতে দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

জানুয়ারিতে অ্যামনেস্টির সবশেষ গবেষণায় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বহু  গ্রাম জ্বালিয়ে ও  বুলডোজারে  গুঁড়িয়ে দেয়ার আলামত উঠে এসেছিল। ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অর্ধশতাধিক গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস। বলা হচ্ছিল, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক বাহিনীর নিধনযজ্ঞ আড়াল করতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালানো হচ্ছে। মার্চের শুরুতে নতুন করে অ্যামনেস্টির দেয়া বিবৃতি থেকে অন্তত  ৩টি সামরিক ঘাঁটি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ চলমান থাকার কথা জানা যায়। সবশেষ এএফপির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রাখাইন বৌদ্ধদের জন্য ‘আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম’ নির্মাণের কথা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ