শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রমাণ করে খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে সরকার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার : দলের চেয়ারপার্সন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক সমস্যা আরো বেড়েছে এবং কারাগারে তাকে অবর্ণনীয় কষ্টে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বর্তমানে তিনি চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। এমতাবস্থায় তাকে অবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার দাবি দলটির। গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, প্রতিহিংসায় কান্ডজ্ঞানহীন সরকার দেশনেত্রীকে নির্যাতন করাটাই ছিল যেন মূল টার্গেট। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা বারবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করছে না।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার শারীরিকভাবে অসুস্থ দেশনেত্রীর সাথে দেখা করার জন্য দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র নিয়ে কারাফটকে গেলেও তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়নি কারাকর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাঁটু ও পায়ের ব্যথা আরো বেড়ে গেছে। পুরাতন ভবনের স্যাঁতস্যাঁতে কক্ষে তাকে অন্তহীন নানাবিধ সমস্যার দ্বারা আক্রান্ত হতে হচ্ছে। সেখানে একদিকে মশার তীব্র উপদ্রব, অন্যদিকে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে তাকে এক অবর্ণনীয় কষ্টে রাখা হয়েছে। প্রতিহিংসায় কান্ডজ্ঞানহীন সরকার দেশনেত্রীকে নির্যাতন করাটাই ছিল যেন মূল টার্গেট, আর সেজন্যই আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাজা দিয়ে দেশনেত্রীকে বন্দী করে রেখেছে।
তিনি বলেন, আমি আগেও দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছি। বর্তমানে তিনি চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। ‘হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে, এখানে কারো হাত নেই।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য আরো ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত বহন করে। তার বক্তব্যে আমরা দেশনেত্রীর জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আরো বেশি উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করছি। তার বক্তব্যে প্রমাণিত হলো যে, সত্যি সত্যি তারা বিএনপি চেয়ারপার্সনের জীবন নিয়ে একটা গভীর চক্রান্তে লিপ্ত।
রিজভী বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- অবিলম্বে দেশনেত্রীর ইচ্ছানুযায়ী রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক, অন্যথায় জনগণের রুদ্ররোষ থেকে কেউই রেহাই পাবে না। দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষের গড়িমসি সহ্য করা হবে না। আমি আবারো অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে তাকে তার পছন্দানুযায়ী চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ প্রদানের জন্য জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, লন্ডনে সরকার প্রধানদের ২৫তম কমনওয়েলথ সম্মেলনে এক্সিকিউটিভ সেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ‘টেকসই শান্তি এবং স্থিতিশীলতার ভিত্তি হচ্ছে গণতন্ত্রের উন্নয়ন, সুশাসন ও আইনের শাসন’। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কমনওয়েলথে যোগ দেয়া বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা নিশ্চয়ই বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন।
কারণ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে  স্বৈরাচারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ তো দূরে থাক, ন্যূনতম গণতন্ত্র, সুশাসন ও আইনের শাসন সম্পূর্ণরূপে উধাও হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য যেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি চরম উপহাস ও মশকরা করা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন কমনওয়েলথ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন তখন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরকে গভীর রাতে হল থেকে সম্পূর্ণ অমানবিক আচরণের মাধ্যমে বের করে দেয়া হয়। যা দেশের ইতিহাসে একটি অন্যতম ন্যক্কারজনক ও কলঙ্কজনক ঘটনা।
ছাত্রীদের প্রতি ছাত্রলীগের নির্যাতনকে জারি রাখার ছাড়পত্র দিয়েছে বর্তমান সরকার। ছাত্রলীগের অপকর্মসমূহের মদদদাতা আওয়ামী সমর্থিত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে এতো নীচে নামতে পারে সেটি দেখে বিবেকবান মানুষেরা আজ বিস্মিত, হতভম্ব। আওয়ামী ক্ষমতার বলয়ে ঢুকে এরা শিক্ষার মূল আদর্শকেই জলাঞ্জলি দিয়েছেন। আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষক ও ছাত্রলীগ যেন একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।
একই সময়ে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রনি পূর্বেও একজন অধ্যক্ষকে এবং গতকাল এক কোচিং সেন্টার মালিককে চাঁদার দাবিতে যে অমানবিক নির্যাতন করেছে সেই ভিডিওটিও দেশ-বিদেশের সর্বত্র ভাইরাল হয়ে গেছে। এর আগেও এই ছাত্রলীগ নেতা অবৈধ অস্ত্রসহ ধরা পড়ে কিন্তু থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেখা যাবে সেও ছাত্রলীগের রগকাটা নেত্রী এশার মতো তিরস্কারের পরিবর্তে পুরস্কৃত হবে।
অবৈধ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত অবৈধ টাকা অর্জনে লিপ্ত হতে গিয়ে চর্চিত হিংসার বাড়-বাড়ন্ত ক্রমবর্ধমান মাত্রায় সংঘটিত হচ্ছে ছাত্রলীগের দ্বারা। এটাই হলো শেখ হাসিনার আইনের শাসন, সুশাসন, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের নমুনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে তিনি বলেন, এসবের দায় কী আপনাদের ওপর বর্তায় না?
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের হুমকিসর্বস্ব নেতারা প্রতিদিন বিএনপিসহ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অবিরামভাবে অভব্য গালিগালাজ করছেন, হুমকি দিচ্ছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে আক্রমণ করানো যেন রুটিন ওয়ার্কে পরিণত করেছে।
অথচ ছাত্রলীগের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে যেভাবে জনজীবনে  নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমে এসেছে, সে বিষয়ে তারা চোখ ও মুখ দুটিই বন্ধ রেখে কেবলমাত্র তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন। সভ্য-ভব্য সাধারণ মানুষের আজ যেন আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপির নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মুহাম্মদ মুনির হোসেন, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ