শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বিদেশী নাবিক ও শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে হাহাকার

খুলনা অফিস : মংলা বন্দরে অবস্থানরত বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহে চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাণিজ্যিক জাহাজসমূহে খাবার পানির যোগান দিতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে জাহাজের নাবিক ও বন্দর শ্রমিকদের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং ও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। মংলা কর্তৃপক্ষ বলছে-শুধু বাণিজ্যিক জাহাজই নয়, বন্দর ভবন ও আবাসিক এলাকাজুড়েই বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট চলছে।

মংলা বন্দর সূত্র জানায়, মংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী বন্দরের আগত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজসমূহে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে আসছে। বন্দরের বিধি অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের টোকেন ও নির্ধারিত মূল্য দিয়ে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করে থাকে বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিকরা। সমুদ্র এলাকার পানি লবণাক্ত থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহৃত পানি সংগ্রহ করতে হয় তাদের। এ ছাড়া জাহাজের পণ্য খালাস বোঝাই কাজে অংশগ্রহণকারী শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্যও প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। বন্দর চ্যানেল ভেড়ার পর প্রতিটি জাহাজে (মাদর ভ্যাসেল) অন্তত ১৫০ থেকে দুইশ’ টন বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু মংলা বন্দরে ভেড়ার পর গত এক সপ্তাহ ধরে বাণিজ্যিক জাহাজসমূহে বিশুদ্ধ পানির যোগান দিতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বন্দরে থাকা বাণিজ্যিক জাহাজসমূহের নাবিক ও শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির হাহাকার বিরাজ করছে।

বন্দর সূত্র আরও জানায়, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের নিজস্ব কোন উৎস নেই। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় মংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে রামপালের ফয়লা নামক স্থান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে তা বাণিজ্যিক জাহাজ, বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা, আবাসিক এলাকা, ইপিজেড ও শিল্প এলাকাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

বন্দরের হারবার বিভাগ জানায়, এ বন্দরের বহির্নোঙর ও জেটিতে শনিবার ১০টি বাণিজ্যিক জাহাজ (মাদার ভ্যাসেল) অবস্থান করছে। প্রতিটি জাহাজে অন্তত ১২০ থেকে ১৩০ জন বিদেশি নাবিক, শ্রমিক-কর্মচারী ও নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছে। সেই আনুয়ায়ী প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কর্মচারী ও বিদেশি নাবিক বিশুদ্ধ খাবার পানি পাচ্ছে না। 

তবে, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার এম ওয়ালিউল্লহ জানান, মংলার অদূরে ফয়লা নামক স্থান থেকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিপ্তরের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ বিশুদ্ধ বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করে বাণিজ্যিক জাহাজ এবং বন্দর এলাকায় সরবরাহ করা হয়। বেশ কয়েকদিন ধরে চাহিদার তুলনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না। আর এ কারণে বাণিজ্যিক জাহাজের চাহিদার তুলনায় কর্তৃপক্ষ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছে না। তবে, তিনি জানান, গত তিন দিনে কয়েকটি বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে চারশ’ মেট্রিক টন বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা পাঠানো হলেও তারা মাত্র ২০ মেট্রিক টন পানি সরবরাহ করতে পেরেছেন। তবে এ সঙ্কট দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলেও জানান তিনি।

মংলা শ্রমিক-কর্মচারী নেতা মো. ফিরোজ আহম্মেদ জানান, বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় হাজারও শ্রমিক-কর্মচারীর বসবাস। এ ছাড়া ইপিজেড ও শিল্প এলাকাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে এসব এলাকায় খুবই অপ্রতুল পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বন্দর ও শিল্প এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির ভয়াবহ সঙ্কট চলছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে খাওয়া, রান্নাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কার্যক্রম দারুনভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মংলা বন্দর এলাকার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বিশুদ্ধ পানি সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমান গ্রীষ্মকালীন সময় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় পানি উত্তোলন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণেও পর্যাপ্ত পানি ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, বন্দরের অদূরে রামপালের ফয়লা এলাকায় পাঁচটি গভীর নলকূপ দিয়ে বর্তমান সময় চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইতোমধ্যে নতুন করে আরও দু’টি গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে শিগগিরই বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ