বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বজ্রপাত বাড়ছে ॥ এপ্রিলেই প্রাণহানি ৩০ জনের

সংগ্রাম ডেস্ক : গত কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতের হার যেমন বেড়েছে, তেমনই বজ্রাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণের কারণে বজ্রপাত বাড়ছে। আর যাপিত জীবনে ধাতব বস্তুর ব্যবহার বেড়ে যাওয়া এবং বজ্রপাত নিরোধক গাছের অভাবের কারণে মৃত্যুর হার বেড়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণের কোনও উপায় নেই। কিন্তু কিছু পদক্ষেপ নিয়ে নিরাপদ থাকা যেতে পারে।
বর্তমান সময়ে বজ্রাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ২০১০ সাল থেকে বজ্রপাতকে আলাদাভাবে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বজ্রাঘাতে একদিনে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে গড়ে ৮০ থেকে ১২০ দিন বজ্রপাত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব জিওগ্রাফির অধ্যাপক ড টমাস ডব্লিউ স্মিডলিনের ‘রিস্ক ফ্যাক্টরস অ্যান্ড সোশ্যাল ভালনারেবিলিটি’ শীর্ষক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, প্রতিবছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৪০টি বজ্রপাত হয়।
বাংলাদেশ দুর্যোগ ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বজ্রপাতে ২৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও মৃতের সংখ্যা দুই শতাধিক ছিল। এ বছর কেবল এপ্রিলেই মারা গেছেন ৩০ জন। ২০১০ থেকে গত ছয় বছরের হিসাব বলছে, একেবারেই নজর না দেওয়া এই দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিবছর এ সময় অনেক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এর কারণ সুনিন্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে বায়ুদূষণ, বাতাসে কার্বনের পরিমাণ, লেডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া একটি বড় কারণ। যা কিনা বায়ুকে উত্তপ্ত রাখে।’
তিনি বলেন, ‘কার্বন লেডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য আরও যেসব উপাদানগুলো মেঘ তৈরিতে সহায়ক, সেগুলো সক্রিয় থাকে এবং বজ্রপাত বেশি হয়।’ তাহলে বায়ুদূষণ কম হলে বজ্রপাত কম হবে কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। তবে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’
দুর্যোগ ফোরামের সমন্বয়ক মেহেরুন ঝুমুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বায়ুদূষণের সঙ্গে বজ্রপাতের সম্পর্ক আছে। বাতাসে যত কার্বন যাবে, বজ্রপাতের সংখ্যা তত বাড়বে। আর বাংলাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এছাড়া, রয়েছে গাছ ও বনাঞ্চল ধ্বংস করে ফেলা।’ বড় গাছের অভাব একটা বড় কারণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘শহরে ঘরবাড়ির সংখ্যা বেশি ও বজ্রনিরোধক থাকায়, বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা কম হয়। কিন্তু গ্রামে এই নিরোধক হিসেবে কাজ করতো যেসব গাছ, তার সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে গ্রামাঞ্চলে বজ্রপাতে প্রাণহানি বেশি ঘটছে।’
গ্রামে বজ্রাঘাতে বেশি মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ঝুমুর বলেন, ‘আগে কৃষিতে ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। কৃষকের কাছে বড়জোড় কাস্তে থাকতো। কিন্তু এখন ট্রাক্টরসহ নানা কৃষি যন্ত্রাংশ বা মুঠোফোনের মতো ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে গেছে। এসব ধাতব বস্তুর ব্যবহার বজ্রপাতে বেশির ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করছে’।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ