ঐতিহ্য আছে জৌলুস নেই সাটুরিয়ার তাঁতপল্লীর
শিকদার শামীম আল মামুন, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) : আমাগো এহন আর শাড়িতে ভাত অয়না। কষ্ট বেশি আয় কম। যে কারণে মানুষ এহন অন্য কাম করে।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার সাভার গ্রামের তাঁতপল্লীর তাঁতী মো. সিরাজুল ইসলাম আক্ষেপ করে গতকাল রোববার সকালে এ প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।
হস্তচালিত তাঁতে শাড়ি বুনা অবস্থায় তিনি জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে শাড়ি বুনেন। আগে শাড়ির খুব কদর ছিল। দামও ভালো পাওয়া যেতো। একদিনে ২-৩টি শাড়ি বুনা যায়। তাতে যে কষ্ট হয় তার দাম পাওয়া যায় না। কিন্তু এই সময় অন্য কাজ করলে বেশি মজুরি পাওয়া যায়।
কলমাইদ গ্রামের তাঁতী মো. উমর ফারুক বলেন, সাটুরিয়ার বিভিন্ন গ্রাম নিয়ে এক সময় তাঁতপল্লী গড়ে উঠেছিল। বুননের ঐতিহ্য প্রায় তিন থেকে চারশত বছরের পুরোনো এ শিল্প। রঙ, নকশা ও মানবৈচিত্রে এখানকার শাড়ির সুনাম রয়েছে সারা দেশেই।
অন্য এলাকার চেয়ে এখানকার শাড়ির জমিন আর পাড়ের রঙ ও নকশার মধ্যে বৈশিষ্ট্য আছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় তাঁতীরা নিরুৎসাহিত হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, সাটুরিয়া উপজেলার সাভার, আগসাভার, হামজা, জালশুকা, চাচিতারা গ্রামে এক সময় ঢুকলেই কানে ভেসে আসতো তাঁতের ঠক ঠক শব্দ। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ছিল তাঁত। হাজারও তাঁতী সুনিপুণ হাতে তৈরি করতেন শাড়ি। কিন্তু এখন মাত্র সাভার ও চাচিতারা গ্রামের ৫০টি পরিবার শাড়ি তৈরি করেন।
তৈরি হওয়া শাড়ি কোথায় বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, টাঙ্গাইলের করটিয়া, পাথরাইল ও মানিকগঞ্জের শাকরাইল এলাকার মহাজনের নিকট শাড়ি বিক্রি করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার পেলে শাড়ি তৈরি করে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
চাচিতারা গ্রামের তাঁতীরা জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসংখ্য হস্তচালিত তাঁত শিল্প গড়ে ওঠে। গড়ে তোলা তাঁতে তৈরি করা হতো বিভিন্ন রং ও সাইজের আকর্ষণীয় শাড়ি। কিছু তাঁত শিল্পী গামছা ও লুঙ্গি তৈরি করতেন।
তাঁতীরা জানান, সবচেয়ে ভাল শাড়ি আটশত টাকা পিস। তবে অর্ডার পেলে এর চেয়েও দামী শাড়ি তৈরি করি।
এ শিল্পে টিকে থাকা তাঁতীরা জানান, এ শিল্পের ঐতিহ্য ও সুনাম এখনও রয়েছে। তবে হারিয়ে গেছে জৌলুস। কাঁচামাল ও উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি আর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ক্রমান্বয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। বন্ধ হয়েছে এলাকার ৯০ ভাগ তাঁত। শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সহায়তা চান তাঁরা।
বরাইদ ইউনিয়ন তাঁত শিল্পের সাধারণ সম্পাদক মো. দাউদ হাসান লাভলু জানান, বংশগত ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমরা এখনো এ পেশায় আছি। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমরা মহাজনের নিকট জিম্মি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ জানান, সাটুরিয়ার তাঁতীদের তৈরি করা শাড়ির কদর সারা দেশেই রয়েছে। এ শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁতীদের সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।