শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ফের ক্ষমতায় আসার দেন দরবার করতেই শেখ হাসিনা ভারত সফর করেছেন -বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার : ফের ক্ষমতায় আসার দেন-দরবার করতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেছেন বলে অভিযোগ বিএনপির। গতকাল রোববার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ তুলেন। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে খবরে এটা পরিষ্কার যে, শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থে ভারত যাননি, তিস্তার পানির জন্য যাননি, সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে যাননি, তিনি গেছেন ক্ষমতায় টিকে থাকার দেনদরবারে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতা হারানোর ভয়ে নিজ দেশের জনগণকে বাদ দিয়ে এখন মুরুব্বীদের কাছে দেনদরবার শুরু করেছেন। কারণ তিনি(শেখ হাসিনা) বুঝতে পেরেছেন তাদের দুঃশাসনের জবাব দিতে মানুষ প্রস্তুত হয়ে আছে, তার বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে।  সেজন্য ক্ষমতাসীনদের চিরাচরিত আশ্রয়স্থল ভারতের শরনাপন্ন হয়েছেন। 
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচন নিশ্চিত করে অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে আবারো পরিষ্কার বলে দিতে চাই, মরুব্বীদের কাছে দেন-দরবার ও আকুতি-মিনতি করে কোনো লাভ নেই। জনগণই সকল ক্ষমতার ধারক।
রিজভী বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যায় সারাদেশকে লাশের মিছিলে পরিণত করে, দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধবংস করে, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি আর দলীয়করণের মাধ্যমে গোটা দেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এখন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি চেয়ারপার্সন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাগারে ঢুকিয়ে একটা অস্বাস্থ্যকর, জরাজীর্ণ, নানা অসুখ-বিসুখের উৎসস্থল অবাসযোগ্য কারাকক্ষের মধ্যে বাস করার পরও প্রধানমন্ত্রী একতরফা নির্বাচনের মনোবাসনা পূরণে নিরাপদ বোধ করছেন না। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও সকল দলের অংশগ্রহণে। দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচন হবে না। অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন, সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তিস্তা নদীর এক বালতি পানিও সরকার আনতে পারেনি। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী একেবারে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন- তিনি তিস্তার পানি দেবেন না। আরো যেসব অভিন্ন নদী রয়েছে সেখান থেকেও পানি প্রত্যাহার করছে একতরফাভাবেই। তিস্তার পানি ভারতের অংশ গজলডোবা থেকে তারা তো প্রত্যাহার করে নিয়েই যাচ্ছে। এখন এর একটা স্থায়ী সমাধানের জন্য যে প্রচেষ্টা বছরের পর বছর শুনছি আলোচনা, কম্পিউটারের টাইপ, কাগজের দিস্তার পর দিস্তা কাগজ খরচ হচ্ছে। কিছুই হচ্ছে না।  আমি বলেছি এরা(ভারত) দেবে না। প্রেম যদি ওয়ান ওয়েট্র্রাফিক হয় সেখান থেকে কখনো কিছু পাওয়া যাবে না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ায়নি ভারতের সরকার- এটাই স্বাভাবিক। তারা কখনো দাঁড়াবে না। সরকারের অনুগত পররাষ্ট্রনীতির কারণেই ভারত এক তরফাভাবে বাংলাদেশের ওপর হস্তক্ষেপ করছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে ভোটাররা সুষ্ঠু ভোটের শত্রুর পক্ষ মনে করে বলে মন্তব্য করেছেন  রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন হবার পর থেকেই আমরা বলে আসছি যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার  আওয়ামী সরকারের ভোট জালিয়াতির বৈধতার রাবার স্ট্যাম্প হিসেবে কাজ করছেন। ১৯৯৬ সালে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক থাকাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছবি যিনি ভাংচুর করেছিলেন সেই ব্যক্তি কী কখনো নিরপেক্ষ হতে পারেন? তিনি কখনোই নিরপেক্ষ হতে পারেন না।  দেশের ভোটাররা সিইসিকে সুষ্ঠু ভোটের শত্রু পক্ষ বলে মনে করে। এখন পর্যন্ত এই সিইসির সকল কার্যক্রম আওয়ামী লীগের স্বার্থের অনুকূলেই বাস্তবায়ন হয়েছে। তার অধীনে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসছে সিইসির অনুগত ভূমিকা ততোই স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। খুলনা সিটি নির্বাচনে অভিনব কায়দায় ভোট ডাকাতির পর আমরা তার পদত্যাগ দাবি করেছিলাম। তার পদত্যাগের দাবির যে যৌক্তিকতা তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সরকারের হুকুমে সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণায় সুযোগ করে দিতে তিনি (সিইসি) আইনের সংশোধনী এনেছেন সংবিধান লঙ্ঘন করে। এই সিইসির অধীনে বিষাক্ত প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসী নির্বাচন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
ঝিনাইদহের শৈলাকুপা উপজেলার তিরিপিনি ইউনিয়নের যুব দলের সহসাংগঠিক সম্পাদক লিটন মোল্লাকে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম  মহাসচিব।
সাংবাদিক সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, শামসুজ্জামান সুরুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ