অঘোষিত জোট গড়েছে পাকিস্তান রাশিয়া ও চীন
১২ জুন, এশিয়ান মনিটর : কিংদাওয়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)’র সম্মেলনের ফাঁকে পাকিস্তান, রাশিয়া ও চীন অঘোষিত একটি জোট গঠন আগামী বছরগুলোতে একসাথে কাজ করার সংকল্প ব্যক্তি করেছে। কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এসসিও সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের নেতা রাষ্ট্রপতি মামনুন হোসাইন রোববার সম্মেলনের ফাঁকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সাক্ষাত করেন। এর আগে তিনি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে।
ওই বৈঠকের পর পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নেতৃবৃন্দ দ্বিপীক্ষীয়, সমসাময়িক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেছেন। উভয় নেতা সম্পর্ক জোরদার করতে সম্মত হন। ভবিষ্যতের সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্র হিসেবে বাণিজ্য, জ্বালানি, নিরাপত্তা, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগের কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, দুই নেতা একমত হন যে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তারা অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো বাড়াতে ও বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে একসাথে কাজ করতে সম্মত হন। শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকের পরও প্রায় একই ধরনের বিবৃতি ইস্যু করা হয়েছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা দি নেশনকে বলেন, এসসিওর অন্য নেতাদের সাথে মতবিনিময়ের পাশাপাশি এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ সভা ছিল ‘খুবই ইতিবাচক।’
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া ও চীন আমাদের শান্তি প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন দিয়েছে, আমাদের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই দুই দেশ দৃঢ়ভাবে আমাদের পাশে রয়েছে। তারা আফগানিস্তান প্রশ্নে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করছে।
তিনি বলেন, ভারতের সাথে অমীমাংসিত সমস্যাগুলো নিরসনে দুই শক্তি আমাদের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিযেছে। ভারতের ওপর রাশিয়া তার প্রভাব প্রয়োগ করবে।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তান, রাশিয়া ও চীনের মধ্যকার সর্বসম্মতির যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেছে তাকে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ‘অঘোষিত জোট’ হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। এই জোট আগামী দিনগুলোতে একসাথে কাজ করবে। এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে রাষ্ট্রপতি মামনুন হোসাইন এই অঞ্চলে কানেকটিভিটি সম্প্রসারণ, একসাথে সমৃদ্ধি, বাণিজ্য ও জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে টেকসই শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীরতার জন্য পাঁচ দফার রোডম্যাপের কথা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আস্থা সৃষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও এর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরসহ সব আঞ্চলিক উন্নয়ন ও কানেকটিভিটি প্রকল্পের প্রতি সব দেশের সর্বাত্মক সমর্থন থাকা উচিত।
অভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সাংহাই চেতনার মূলনীতি অনুসরণ করার আহ্বান জানান তিনি।
শীর্ষ সম্মেলনে মামনুন বলেন, আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এসসিও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য অভিন্ন উদ্বেগের বিষয়। এই সমস্যার সমাধান কেবল করা যেতে পারে আফগান-নেতৃত্বাধীন ও আফগানি-মালিকানার শান্তি-প্রক্রিয়া। এসসিওর আফগানিস্তানবিষয়ক কন্ট্যাক্ট গ্রুপকে আবার সক্রিয় করা একটি ভালো উদ্যোগ। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে শান্তি ও সমন্বয় প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তান পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট গনির যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ও তালেবানের সাথে শান্তি আলোচনার প্রস্তাবের প্রতি পাকিস্তান সমর্থন দেয়।
শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি মামনুন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে কথা বলেন। দুই নেতা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সংবাদ সম্মেলনের পর হাত মেলানো অবস্থায় ছবি তোলেন। এর আগে শি চিন পিং প্রথমবারের মতো এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য পাকিস্তান ও ভারতকে ‘বিশেষভাবে স্বাগত’ জানান। গত বছর দেশ দুটি এই সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। এর আগে প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সভাপতিত্বে সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা সম্মেলনে অংশ নেন। এদের মধ্যে ছিলেন পাকিস্তান, কাজাখস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া পর্যবেক্ষক হিসেবে সম্মেলনে আফগানিস্তান, বেলারুশ, ইরান ও মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রপতিরাও উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ২০টি নথিতে সই করা হয়। এতে দীর্ঘ মেয়াদি সুপ্রতিবেশী মনোভাব সৃষ্টি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও চরমপন্থা দমন, মাদকবিরোধী কৌশল গ্রহণ ইত্যাদি বিষয় স্থান পায়।