মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

প্রত্যয়দীপ্ত জীবনের খোঁজে সত্যপিয়াসু হৃদয়....

সিরাজুম মুনিরা : বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ণিল সময়টুকু অনেক আকাঙ্খিত ছিল সারা ট্রাসের। হাজার বর্ণের, ধর্মের মানুষের সাথে মেশার, জানার এ সুযোগের অপেক্ষায়ই তো ছিলেন এতদিন। ছোট্টবেলা থেকে সারা ট্রাস একটু আলাদা অন্য সবার চাইতে। সবকিছু সম্পর্কে জানার, বোঝার জন্য অফুরন্ত প্রশ্ন খেলা করে তার চোখে-মুখে। এমনকি নিজের বর্ণ, আনুষ্ঠানিকতা নিয়েও অজস্র জিজ্ঞাসা .......। সব ধর্ম সম্পর্কে মোটামুটি জানা থাকলেও ইসলাম সম্পর্কে ছিল নেতিবাচক ধারণা। মুসলিম সমাজে নারীরা দাসী-বাঁদীদের মতো, সেখানে কোন ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই এ সবই জানত সারা।
কিন্তু সারা তো অবাক! তার মুসলিম সহপাঠীদের সাথে মিশে কারো কাছে এসব ভুল ধারণার সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখতে পেলেন না। সবাইকে ছাপিয়ে এক সহপাঠির আচরণ, ব্যক্তিত্ব তার কাছে বিস্ময়কর মনে হলো। সেই সহপাঠি মুসলমান বলে সবাই সারাকে তার কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে বলতো। কিন্তু সারা তার প্রতি আরো বেশি বিমুগ্ধ হতে থাকলেন। সেই সহপাঠীকে যখন তার এই আকর্ষণীয় চরিত্র, জীবনবোধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো তখন সে আত্মপ্রত্যয়ীর সুরে বললো “ইসলামই তাকে উন্নত জীবনাদর্শের সন্ধান দিয়েছেন। তার এ উত্তরই সারাকে ইসলাম সম্পর্কে তার ভ্রান্ত ধারণার আমূল পরিবর্তন করে ইসলাম সম্পর্কে আরো আগ্রহী করে তোলে। সারা বুঝতে পারলেন প্রকৃতি ও জীবনের সাথে ইসলামের প্রাসঙ্গিকতা কতটা বেশি। সারা অত্যন্ত আবেগদীপ্ত ভাষায় সেই কথাই তুলে ধরেছেন এভাবে-
“আমার ও সব মানুষের প্রকৃতিই হলো তাই সব মানুষের মধ্যেই রয়েছে ধর্মের প্রতি আকর্ষণ। আসলে ধর্ম ও আল্লাহতে বিশ্বাস হচ্ছে মানুষের এমন চাহিদা যা মানুষকে দেয় নিরাপত্তা  ও প্রশান্তি। তাই প্রকৃতিগত এই চাহিদা পূরণের জন্য চেষ্টা করতাম। কিন্তু যতই জানার চেষ্টা করতাম ততই প্রশ্ন ও অস্পষ্টতা বাড়তেই থাকতো। অবশেষে ইসলামেই পেলাম আমার সব প্রশ্নের উত্তর।”
খৃস্টান বাবা আর ইহুদী মায়ের সন্তান সারা ট্রাস একজন চিকিৎসক। ছোটবেলা থেকেই নীতি-নৈতিকতার সম্পর্কে সচেতন সারা ট্রাস জীবন ও জগতের প্রকৃত মর্যাদা খুঁজে বেড়াতেন প্রতিনিয়ত। ধর্ম সম্পর্কে নানা প্রশ্ন ও অস্পষ্টতা তার জীবনে এক বড় উৎকণ্ঠা হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে তিনি পেয়ে গেলেন পরম সত্যের সন্ধান। ইসলামের জীবন ঘনিষ্ঠ ও যৌক্তিক বিধানগুলো সারার রুদ্ধ চেতনায় কুঠারাঘাত করে। আর সেই দ্বারপথে প্রবেশ করে দ্বীন ইসলামের প্রদীপ্ত আলোকচ্ছ্বটা। আলহামদুলিল্লাহ! যুগে যুগে এভাবেই সত্যপিয়াসু মানুষেরা খুঁজে পায় জীবনের পরম সত্যকে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এ সত্যপিয়াসুরা চেতনার বাতিঘরে পালিত হন। হৃদয়ের আঙ্গিকে তিল তিল করে গড়ে তোলে ঈমান নামক এক স্বপ্নসৌধের। প্রভুর কাছে ঐকান্তিক আত্মনিবেদনের মাধ্যমে খুঁজে পান হৃদয়ের প্রশান্তি।
সারা ট্রাস পরিপূর্ণভাবে শরয়ী পর্দা মেনে চলেন। তিনি মনে করেন হিজাব তার সামাজিক তৎপরতার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়নি বরং তার আত্মমর্যাদাকে সমুন্নত করেছে। সারা মনে করেন হিজাব মানুষের আত্মিক পবিত্রতা অর্জন ও সমাজকে অধ:পতন থেকে রক্ষার মাধ্যম। সারা ট্রাস ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে নবজন্মের অনুভূতি ও প্রশান্তি লাভ করেন। সারা ট্রাস তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেন এভাবে-
“আমি একজন মুসলিম হতে পেরে গর্বিত এবং আনন্দিত। এখন আল্লাহর অসন্তুষ্টির ভয় ছাড়া আর কোন ভয় আমার মধ্যে নেই। পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত আমার অন্তরকে প্রশান্ত করে। কারণ কুরআন আমার প্রশ্নের জবাব দেয় এবং সেই পরম সত্যকে আরো আপন করে ভাবতে শেখায়।”
আলহামদুলিল্লাহ! ইসলামের বিরুদ্ধে শত ষড়যন্ত্র, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা সত্ত্বেও সত্যপিয়াসু মানুষেরা ইসলামের দিকে ছুটে আসছেন প্রতিনিয়ত। ইসলামের শাশ্বত আহ্বানে সাড়া দিয়ে খুঁজে পেয়েছেন জীবনের আসল সত্যকে, বুঝে নিয়েছেন জীবনের প্রকৃত সফলতাকে।
তাদের আত্মোপলব্ধি, সত্যের প্রতি তৃষ্ণাবোধই ইসলামের সুশীতল ছায়ায় শরিক হওয়ার প্রধান কারণ। তাদের মতো আমাদের মুসলমানদেরও সঠিক উপলব্ধি আসুক। সত্যের মশালে প্রদীপ্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রভুর দরবারে হোক বিনীত সমর্পণ। রাব্বুল আলামীন এ বিশ্বাসীদের চিত্র কুরআনে এঁকেছেন এভাবে-
“যারা তওবা করবে ও নিজেদের কার্যাবলী ও কর্মনীতির সংশোধন করে নিবে, আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করবে এবং একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিজেদের দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, তারাই হবে বিশ্বাসীদের সঙ্গী। আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই বিরাট পুরস্কার দান করবেন।” (সূরা নিসা- ১৪৬)
নওমুসলিমদের অনেক মোবারকবাদ
এ প্রত্যয়দীপ্ত জীবনে তাদের স্বাগতম...!!

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ