শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রাজপথের রাজনৈতিক আন্দোলনই হতে পারে জবাব

জিবলু রহমান : [দুই]
বিএনপি চেয়ারপার্সন প্রসঙ্গে সম্প্রতি ‘হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে’ বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন মির্জা আলমগীর। তিনি বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য ভয়ঙ্কর অশনি সংকেত। তিনি বলেন, ১৮ এপ্রিল চেয়ারপার্সনের সঙ্গে আমিসহ দলের তিনজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ বাতিল করে আমাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। ২০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও সাক্ষাৎ করতে পারেনি। অথচ সুস্পষ্টভাবে কোনো কারণও দেখানো হয়নি। জেলের ভেতর থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে মির্জা আব্বাসকে জানান, ‘আজ সম্ভব হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এই দেশের গণমানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। মিথ্যা সাজানো মামলায় তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকে এবং তার দলকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। গণবিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া সরকারের ২০১৪ এর মতো একতরফা নির্বাচনের প্রহসনের মধ্য দিয়ে আবারো ক্ষমতা দখলই মূল উদ্দেশ্য। আইনের বিধানকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে দেশনেত্রীকে জামিন না দেয়া, কারাগারে তাকে প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা, সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা-এটা অমানবিক। মির্জা আলমগীর বলেন, যে কারাগারে, যে কক্ষে তাকে রাখা হয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থি। সরকারি ডাক্তারদের সুপারিশকৃত অর্থোপেডিক বেড খালেদাকে সরবরাহ না করা, ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে তার চিকিৎসার সুযোগ না দেয়া এবং দলের নেতৃবৃন্দ ও পরিবারের সদস্যদের তার সঙ্গে দেখা করতে না দেয়া অত্যন্ত হীনউদ্দেশ্যমূলক।
মির্জা আলমগীর বলেছেন, রাজনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাহস সরকারের নেই। তারা এখন জনগণ থেকে একারণেই বিচ্ছিন্ন। তাই দেশনেত্রীর ওপর বলপ্রয়োগ করে এবং দেশনেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে ২০১৪-এর মতো একতরফা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। ক্ষমতা দখল করে রাখতে চান। বাংলাদেশের সচেতন গণতন্ত্রকামী মানুষ তাদের সে সুযোগ দেবে না। এখনো সময় আছে অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাকে তার পছন্দনীয় চিকিৎসকের মাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন। বিএনপি মহাসচিব সরকারের উদ্দেশে বলেন, এত ভয় কেন? দেশনেত্রীকে মাঠে নামতে দিন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে সকল রাজনৈতিক কর্মকা- করতে দিন, যথেচ্ছ পুলিশ ব্যবহার বন্ধ করুন। দেখুন আপনারা কোথায় দাঁড়াতে পারেন। রাজনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সাহস আপনাদের নেই। (সূত্র: দৈনিক মানব জমিন ২২ এপ্রিল ২০১৮)
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন দেশের ১০১ জন বিশিষ্ট চিকিৎসক এক বিবৃতিতে বলেছেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকার পরও সুচিকিৎসা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। একজন ৭৩ বছর বয়স্কা মহিলা, যিনি বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও কারাগারে সুচিকিৎসা না পাওয়া মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। চিকিৎসকরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আর্থাইটিসজনিত রোগের কারণে খালেদা জিয়ার দুই হাঁটুই প্রতিস্থাপন করা হয়। তিনি বহুদিন যাবত উচ্চরক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন।
এছাড়া তার চোখের সমস্যাজনিত কারণে অপারেশন করানো হয়। এসব জটিল রোগের জন্য তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ও নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন। কিন্তু মিথ্যা সাজানো ও প্রহসনের মামলায় রাজনীতি হতে দূরে রাখার জন্য সাজা দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পুরনো জরাজীর্ণ কারাগারে একাকী রাখা হয়। এতে সুচিকিৎসা না হওয়ায় ধীরে ধীরে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেন, সরকার কিন্তু খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে গা-ছাড়াভাবে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে নামমাত্র চিকিৎসা করছে। খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে এনে শুধু এক্সরে করানো হয়। কোনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ড বা তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি। তার কোনো ধরনের চিকিৎসা না দিয়ে শুধু এক্সরে করানো প্রহসনের নামান্তর। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ দেশবরেণ্য চিকিৎসকরা তার অবনতিশীল স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে অবহিত করেছেন। তারা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্যারালাইসিস, অন্ধত্বসহ তার শারীরিক অবস্থার অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। চিকিৎসকরা বলেন, আমরা চিকিৎসকদের পক্ষ হতে দাবি জানাচ্ছি, খালেদা জিয়াকে নিজের ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে সুচিকিৎসা দেয়া হোক। অন্যথায় অবহেলার কারণে খালেদা জিয়ার কোনো ধরনের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে এর দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন-প্রফেসর ডা. এ কে এম আজিজুল হক, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ডা. রফিকুল কবির লাবু, ডা. আবদুস সালাম, ডা. হারুন-অর-রশীদ, ডা. শহীদ হাসান, ডা. শহীদুল আলম, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. এ কে এম মহিউদ্দিন ভূইয়া মাসুম, প্রফেসর ডা. মোস্তাক আহমেদ, ডা. সাহাদাত হোসেন, ডা. হারুন-উর-রশিদ, ডা. এএমএসএম সারফুজ্জামান, ডা. মাহযহারুল ইসলাম দোলন, ডা. সাইফুল ইসলাম, ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরী, ডা. ফজলুল হক, ডা. সেলিম শাকুর, ডা. মলিহা রশিদ, ডা. জিন্নাত আরা, ডা. নিশাত বেগম, ডা. শাহীদুর রহমান, ডা. গাজী আব্দুল হক, ডা. আবদুল মান্নান মিয়া, ডা. সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, ডা. মঈনুল হাসান সাদিক প্রমুখ। (সূত্র : দৈনিক মানব জমিন ১ মে ২০১৮)
৫ জুন ২০১৮ খালেদা জিয়া কারাগারে মাথা ঘুরে পড়ে যান বলে জানিয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসকরা। এখন সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছে। অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ- চার মাসের বেশি কারাবন্দি খালেদার চিকিৎসা নিয়ে সরকার ‘দুরভিসন্ধিমূলক নীলনকশা’ করছে। চিকিৎসা নিয়ে পানি ঘোলা করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাঁকে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া।
২৯ এপ্রিল ২০১৮ নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা কারাগারে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর তার সর্বশেষ শারীরিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। তারা বলেছেন, আমি আবারও অতি দ্রুত দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তার পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। (সূত্র: দৈনিক মানব জমিন ৩০ এপ্রিল ২০১৮)
সরকার কারা হাসপাতালে কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা যে সম্ভব নয়, তা তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করতে রাজি হয়ে প্রমাণ করেছে। বিএনপির দাবি, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ইউনাইটেড হাসপাতালেই হতে হবে।
ঈদের দিন আবেদন করেও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি। সেদিন তার পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাতের সময় দেখেছেন দু’জনের কাঁধে ভর করে কারাগারের ওয়েটিং রুমে আসেন খালেদা জিয়া। এ ঘটনায় ঈদের পর দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বজনদের বরাত দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যেকোনো সময় প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারেন খালেদা জিয়া। তিনি নিজে হাঁটতে পারছেন না। আগে দেখা করতে গেলে তিনি নিজে হেঁটে এসে দেখা করতে পারতেন।
খালেদা জিয়াকে সিএমএইচে চিকিৎসা দেয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রস্তাবের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আগেই বলেছি, খালেদা জিয়া সিএমএইচে যাবেন না। আমাদের কাছে তার জীবনের মূল্য অনেক বেশি। ইউনাইটেড হাসাপাতালের প্রতিই খালেদা জিয়ার আস্থা রয়েছে। অন্য জায়গায় তার আস্থা নেই। তিনি অন্য কোথাও চিকিৎসা নেবেন না।
মির্জা আলমগীর বলেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলা হচ্ছে পিজিতে পাঠানো হবে, সেখানে ভালো ভালো ডাক্তার আছে। আবার বলছেন সিএমএইচে পাঠানো হবে। সরকারের মনোভাব খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দেয়া। কালবিলম্ব না করে যে হাসপাতালে তিনি ভর্তি হতে চাইছেন, সেখানে তাকে ভর্তি এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত।
মির্জা আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে যেভাবে নিঃসঙ্গ রাখা হয়েছে, এটা মানবাধিকারের বিপক্ষে, জেল কোডের বিপক্ষে। একজন বন্দীকে নির্জনভাবে রাখতে পারেন না। এটা বেআইনি। জেল কোডে কোথাও বলা নেই যে আমি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারব না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ