শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় আবাসিক হোটেলে ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় আদালতে প্রেমিকা তানিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

খুলনা অফিস : খুলনা মহানগরীর আবাসিক হোটেল আজমল হোসেন ইন্টারন্যাশনালের কক্ষে ব্যবসায়ী ইনসান মোল্লা হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রেমিকা মোসা. মরিয়ম খাতুন ওরফে তানিয়া (২২) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে দুই দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে সোপর্দ করা হলে সে এ জবানবন্দি দেয়। খুলনার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুমি আহমেদ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
আসামী তানিয়া নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার নাঙ্গুলিয়া গ্রামের দ্বীনো শেখের স্ত্রী। তার পিতা একই এলাকার আবুল কালাম বিশ্বাস। ইনসান মোল্লার হত্যাকান্ডে গত ২৫ জুন গভীর রাতেই তানিয়কে তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তানিয়ার সাথে ইনসানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে সে স্বীকার করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আশরাফুল আলম জানান, একই সাথে হোটেলে উঠে হত্যাকান্ডের পর তানিয়া পালিয়ে যায় বলে স্বীকার করেছে। তার সাথে অন্য কোন সহযোগী ছিল না বলেও জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে। তবে আদালতে সে কি ধরনের বক্তব্য দিয়েছে তা এখনো পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত ২৫ জুন তানিয়াকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন ইনসানের বড় ভাই তৌরুত মোল্লা (নং-৫৩)। মামলায় অজ্ঞাত আরও ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত ইনসান মোল্লার (২৭) বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি গ্রামে। তিনি ওই এলাকার ইঞ্জিল মোল্লার ছেলে। প্রায় ৭ মাস আগে বিয়ে করেন ইনসান। তবে তিনি দেড় বছর ধরে পরকীয়ায় আসক্ত ছিলেন। গত ২১ জুন বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় তিনি। ২২ জুন ওই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ২৫ জুন দুপুরে ওই হোটেলের পঞ্চম তলায় ৫০২ নম্বর কক্ষ থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় ইনসানের লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। লাশটি উলঙ্গ অবস্থায় কক্ষের বক্স খাটের নিচে লুকানো ছিল। তার মুখ ও যৌনাঙ্গ আগুন দিয়ে পোড়ানো অবস্থায় ছিল। হাত-পা ছিল বাঁধা। খুলনায় একটি লাশ পাওয়া গেছে শুনে ইনসানের ভাই এসে লাশটি সনাক্ত করেন।
মামলার বাদী ও নিহতের ভাই তৌরুত মোল্লা জানান, ‘আমার ভাইয়ের মোবাইলফোন বিক্রি ও সার্ভিসিং’র দোকান রয়েছে। ওই মেয়ে (মরিয়ম) দীর্ঘদিন ধরে বোম্বে থাকতো। বোম্বে থেকে ফিরে এসে নানাভাবে আমার ভাইকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। গত আট মাস আগে ইনছানকে বিয়ে দিলে ওই মেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ওই মেয়ে ও তার সহযোগিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করেছে বলে মনে হচ্ছে।
হোটেলের কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে ইনছান মোল্লা একজন বোরকা পরিহিত মেয়েকে নিয়ে ওই হোটেলে দুই ঘন্টার জন্য কক্ষটি ভাড়া নেয়। হোটেলবয় সবুর গাজী দুপুর ১২টার দিকে ওই রুম তাদেরকে ভাড়া দিয়েছিল। এরপর বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে এসে সে ওই কক্ষটি ফাঁকা দেখতে পায়। কিন্তু খাটের নীচে থাকা লাশ সে লক্ষ্য করেনি। একদিন পর ওই কক্ষ অন্য বোর্ডারকে ভাড়া দিলে তিনি কক্ষের ভেতরে দুর্গন্ধ পান। এ বিষয়ে জানালে কর্মচারীরা গন্ধের উৎস খুঁজতে লাশের সন্ধান পায়।
এদিকে লাশ উদ্ধারের দিন সোমবার সকালে চাঁদা চেয়ে এক ব্যক্তি ফোন দেয় নিহতের ভাই তৌরুত মোল্লাকে। মোবাইলফোনে সে জানায় ৬০ হাজার টাকা না দিলে তার ভাইকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হবে। হত্যাকান্ডের সাথে এই চাঁদা দাবির কোন সম্পৃক্ততা আছে কিনা জানা যায়নি। তবে পুলিশ মোবাইলফোনের কললিস্ট যাচাই বাছাই করছে বলে জানা গেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ