শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খুলনায় ফুটপাতে হাঁটার অধিকার নেই পথচারীদের

খুলনা অফিস : খুলনা মহানগরীর ফুটপাতগুলোর অধিকাংশই নানাভাবে দখলে চলে গেছে। নিরাপদে হাঁটার এই জায়গাটুকু আর পথচারীদের অধিকারে নেই। ঝুঁকি নিয়েই তাই রাস্তা দিয়ে চলতে-ফিরতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তার বড় একটা অংশও হকারদের দখলে। সব মিলিয়ে শহরে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে হাঁটার জায়গা। বেশির ভাগ এলাকায় ফুটপাত থেকে নামতেই রাস্তার পাশজুড়ে সারি সারি ইজিবাইক, বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল। কোথাও কোথাও গাড়ি পার্ক করা। সেই সাথে ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়ক দখল করে বেড়েছে হকারদের ব্যবসার তৎপরতা।
খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার। পাকা সড়ক আছে ৬৪১ কিলোমিটার। ফুটপাতের সঠিক হিসাব না থাকলেও প্রায় ২৫ কিলোমিটার ফুটপাত দখল হয়ে আছে। সূত্র জানায়, বছরের বেশির ভাগ সময় করপোরেশনের নির্বাহী হাকিমের পদটি শূন্য থাকে। এ কারণে সড়ক ও ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু পরে ফুটপাত আবার দখল হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাওয়ার হাউস মোড় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার ফুটপাতের পুরোটাই হকারদের দখলে। সেখানে পা ফেলার জো নেই। ফুটপাতজুড়ে দোকানের সারি। কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তার অর্ধেক পর্যন্ত চলে এসেছে দোকানপাট। খুলনা ওয়াসার সামনে ও পিকচার প্যালেস মোড়ের ফুটপাতে ছোট ছোট দোকানের পাশাপাশি রয়েছে ফলের দোকান। শামসুর রহমান রোড ও পিটিআই মোড়ের অদূরেও সবজি বিক্রির ভ্রাম্যমাণ গাড়ির সারি।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা পুরোনো যশোর রোডের খুলনা শপিং কমপেক্সের বিপরীতে রাস্তার অর্ধেকজুড়ে সাইকেল সাজানো। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দেয়ালসংলগ্ন ফুটপাত ও জেলা আইনজীবী সমিতির সামনের ফুটপাতও কাপড় ও চা দোকানীদের দখলে।
খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দেয়ালসংলগ্ন কাপড় বিক্রেতা মো. রফিক বলেন, ‘এখানে মাঝে মধ্যে ব্যবসা করি। সব সময় করি না। ফুটপাত আটকে দোকান বসানো ঠিক না জানি। কিন্তু আমাদের তো বাঁচতে হবে।’ এদিন ডাকবাংলো মোড়ে কথা হয় পথচারি ফেরদাউস আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, নগরীর ফুটপাত সারা বছরই দখল হয়ে থাকে। আগে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা গেলেও এখন ব্যবসায়ীরা অনেক স্থানে রাস্তার মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে এসেছেন। এতে ভোগান্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁচেছে। খালিশপুর কদমতলা হতে নতুন রাস্তা পর্যন্ত ৫/৬ কিলোমিটার ফুটপথ ব্যবসায়ীদের দখলে। কেসিসি কোটি, কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করলেও তা জনগণ ব্যবহার করতে পারছেন না।
রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ফুটপাতের পুরোটাই দখল করে রেখেছেন কাঠের আসবাবের দোকানিরা। কলেজিয়েট স্কুলের পর থেকে টুটপাড়া কবরখানা মোড় পর্যন্ত ফুটপাত জুড়ে গাড়ি মেরামতের দোকান।  রয়েল মোড় থেকে ডাকবাংলো ফেরিঘাট পর্যন্ত ফুটপাত দখল করে আছে স্যানিটারিসামগ্রীর দোকান।
গাক্সো মোড় এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা মুক্তারুন নাহার বলেন, এখানকার ফুটপাত ধরে হাঁটা সম্ভব না। দিন দিন হাঁটার জায়গা কমছে। বিষয়টি চোখ সওয়া হয়ে গেছে। মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় দেখি না!
ময়লাপোতা মোড় থেকে গল্লামারী পর্যন্ত ফুটপাত লেপ তোশক, খাবার ও ভাঙারির দোকানের দখলে। ময়লাপোতায় সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত সান্ধ্য বাজারের বাইরের অংশে অস্থায়ী দোকান বসায় সন্ধ্যার পর থেকে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সেখানকার এক পথচারী রুমা মল্লিক বলেন, ‘সন্ধ্যায় গাড়ির চাপে আমাদের রাস্তার এপার থেকে ওপার যেতে ১৫-২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে তো বুক কাঁপে।’ সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বয়রা বাজার পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাতও নির্মাণসামগ্রীর দখলে। সেখানে এখন ইট, খোয়া, পাথর, বালু ও রডের সমাহার। পথচারিদের মধ্যে অনেকেইে অভিযোগের সুরে বলেন, যারা আইন রক্ষা করবেন তারাই তো আইন ভাঙতে সহযোগিতা করেন। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনেকেই অনৈতিক সুবিধাও নিয়ে থাকেন। তাহলে নাগরিক সেবা কিভাবে সম্ভব? তারা বলেন, নগর ভবনের সামনের ফুটপাতও দখলমুক্ত নয়।
এ ব্যাপারে খুলনা সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিষয়ক (এস্টেট) কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, এর আগেও আমরা ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু তারা আবারও বসে। স্থায়িভাবে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা দরকার। কিন্তু কেসিসিতে গত দেড় মাস ধরে ম্যাজিস্ট্রেট নেই। আগামী সপ্তাহে ডিসি অফিসের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ