বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

শাহবাগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর ছাত্রলীগের ॥ রাবিতে হামলা শাবিতে বাধা

* ৩ নেতাকে তুলে নেয়ার অভিযোগ
* আজ বিক্ষোভ ও পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা
স্টাফ রিপোর্টার : কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন নিয়ে কোন অগ্রগতি না থাকলেও আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। গতকাল  রোববার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানসহ ৩ নেতাকে তুলে নেয়ার অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রাশেদকে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগ নেতার দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শনিবারের পর গতকাল রোববারও শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করে ছাত্রলীগ। হামলার ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়েও। এ দিকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি ছাত্রলীগ। শনিবার ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূরের অবস্থা আরো অবনতি হয়েছে। তার রক্ত বমি হয়েছে। এ দিকে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ও পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগ শাহবাগ মোড় দখলে নেয়। আন্দোলনকারীদের কাউকে দেখলেই ধাওয়া করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই তারা মাঠে নেমেছেন বলে দাবি ছাত্রলীগের।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গতকাল রোববার দুপুরে শাহবাগে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দেয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। এ ঘোষণার পরপরই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল।
দুপুরে শাহবাগে গিয়ে দেখা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের কাউকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করতে দেয়া হয়নি। তবে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ছাত্রলীগ ও পুলিশ শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করে। পাবলিক লাইব্রেরির সামনে একটি এপিসি (সাঁজোয়া) গাড়ি ও একটি জলকামান রাখা হয়। শাহবাগের চারপাশজুড়ে শতাধিক পুলিশও অবস্থান নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজসহ রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা শাহবাগে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দেন তাদের ফেসবুক গ্রুপে। এর পরপরই শাহবাগ মোড়ে অব্স্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এরপর বিকাল সাড়ে ৪টার পর আন্দোলনকারী সন্দেহে কয়েকজনকে শাহবাগ মোড়েই মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মারতে মারতে তাদের শাহবাগ থানার ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের থানায় সোপর্দ করা হয়। আহতদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার এস আই সুজন বলেন, ‘ বেশ কয়েকজনকে থানায় আনা হয়েছে। কী কারণে–তা আমি বলতে পারছি না, ওসি স্যার থানায় নেই।’
শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের কয়েকজন বলেন, আমরা কোটা আন্দোলনের পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার ওপর আস্থা রেখে পড়ালেখায় মন দিয়েছি। তাই এ ইস্যুতে নতুন করে কাউকে আন্দোলন করতে দেওয়া হবে না। এর প্রতিবাদে আমরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছি।
নূরের অবস্থা উদ্বেগজনক: সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা সংস্কার আন্দোলেন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে তিনি কয়েকবার রক্তবমি করেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, শনিবার ছাত্রলীগের হামলার পর প্রথমে নূরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নূরকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে জানতে চাইলে নিরাপত্তার স্বার্থে তা বলতে চাননি মামুন। তবে তিনি বলেন, নূরের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তিনি বেশ কয়েকবার রক্তবমি করেছেন। আজ সকাল ৮টায়ও তিনি রক্তবমি করেন।
ছাত্রলীগের মারধরে নূর মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তার সারা শরীরেই আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ অবস্থায় নূরকে দ্রুত সুস্থ করতে চেষ্টা চলছে বলে জানান সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক। তিনি জানান, এরই মধ্যে নূরের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এখনও রিপোর্ট হাতে আসেনি। রিপোর্ট পাওয়ার পর তার অবস্থা জানা যাবে।
সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা বাতিলে সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিল ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
সাংবাদিক সম্মেলন শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূরসহ সাত শিক্ষার্থী আহত হন। ওই সময় নূরকে আটকে রেখে উপর্যুপরি লাথি-ঘুষিসহ বেধড়ক মারধর করা হয়। বাঁচার জন্য নূর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পরিচালক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. জাভেদ আহমেদকে জড়িয়ে ধরেন।
এরপরও হামলাকারীরা থামেনি। তারা নূরের পাশাপাশি শিক্ষক জাভেদকেও মারধর করতে থাকে। এতে তার হাতের একটি আঙুল কেটে যায়।
সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ও পতাকা মিছিল আজ: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আজ  সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ও পতাকা মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে। সকাল ১০টায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া, কোটা বিষয়ক প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
গতকাল রোববার বিকালে রাজধানীর পরীবাগে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর নাহার নীলা ও শফিউল আলম।
লুৎফর নাহার নীলা বলেন, শনিবার ও রোববার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। রাশেদসহ আমাদের তিন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সোমবার সকাল দশটায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ও পতাকা মিছিল করা হবে। রাশেদসহ সবাইকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে। নুরসহ যাদের মারধর করা হয়েছে তাদের চিকিৎসার খরচ বহন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ঘোষণা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করলে আমরা এ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াব। আর যদি প্রজ্ঞাপন জারি করা না হয় তাহলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
কোটা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের কোন অগ্রগতি নেই: সরকারি চাকরিতে কোটার রূপরেখার বিষয়ে এখনও অন্ধকারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, কোটা ব্যবস্থা বাতিল নাকি সংস্কার হবে- সেই বিষয়ে কিছু জানে না কোটা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়টি। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক গণমাধ্যমকে বলেন, আই হ্যাভ নো আনসার (আমার কাছে কোনো জবাব নেই)। প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে যা বলার বলে দিয়েছেন। সেই মতোই হবে। আপাতত আমার কাছে বলার মতো এর বেশি কিছু নেই। তিনি বলেন, কোটা নিয়ে এখন এই প্রেক্ষাপট কেন তৈরি হয়েছে আপনারা সেটা বোঝেন, আমাদের বলার কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় রোববার থেকে ফের আন্দোলনের ডাক দেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। যদিও শনিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন। শনিবার ছাত্রলীগের এক নেতার মামলার পর রোববার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের বিধান রয়েছে।
রাবিতে ছাত্রলীগের হামলায় আহত ১২: রাবি রিপোর্টার জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে (রাবি) মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধনের প্রস্তুতিকালে এ ঘটনা ঘটে।
পরে বেলা ১১টার দিকে গ্রন্থাগারের সামনে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকারের সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আবারো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া করে। এতে অন্তত ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এদের মধ্যে আব্দুল্লাহ শুভ ও অন্তরসহ তিন জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে বিশ^বিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনের জন্য জড়ো হন। এ সময় টুকিটাকি চত্বর থেকে ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী তাদেরকে মানববন্ধনের ব্যানার কেড়ে নেওয়াসহ ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনাও ঘটে। ধাওয়া ও মারধরের কারণে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবনে অবস্থান নেয়। এসময় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শোডাউন দিতে থাকে। পরে সকাল ১১টা দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় আবারো লাঠি-সোটা নিয়ে ধাওয়া করে ছাত্রলীগের নেতারা। এতে আরবী বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্ত ও নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনির্ভাসিটির আহবায়ক আব্দুল্লাহ শুভ, আইন বিভাগের ৩য় বর্ষের আবু রায়হানসহ অন্তত ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয় বলে জানা গেছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মানববন্ধন কমসূচী পালন করতে না পারায় ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিতে দেখা গেছে কোটা আন্দোলনকারীদের। অন্যদিকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী মটর বাইকে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মহড়া দিতে থাকে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। মারধরের বিষয়ে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনির্ভাসিটির আহবায়ক আব্দুল্লাহ শুভ বলেন, আমরা যখন মানববন্ধনের প্রস্তুতি নেই, তখন ছাত্রলীগের নেতারা ব্যানার কেড়ে নেয়। এবং আমাকেসহ কয়েকজনকে মারধর করলে কোন রকমে সেখান থেকে পালিয়ে যাই। সেখানে থাকলে হয়তো তারা আমাদের মেরেই ফেলতো।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের রাবি শাখার আহবায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কোটা বাতিল ঘোষণা করেন তখন বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ আনন্দ মিছিলে অংশ নিয়েছিল। এতে প্রমাণ হয় যে আমাদের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু আজ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কর্মসূচীর বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয় কমিটি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।
এদিকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে কোন ধরনের মারধরের ঘটনা ঘটেনি। কয়েকজন ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিলো। তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসকে স্থিতিশীল রাখতে আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগ উভয়ের সাথে আলোচনা করেছি। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
শাবিতে মানববন্ধনে ছাত্রলীগের বাধা: সিলেট ব্যুরো জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শাবিতে ছাত্রলীগের বাধায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে পারেনি সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ১১টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছিল সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ শাবি শাখা। এ সময় ছাত্রলীগের বাধায় কর্মসূচি পালন করতে পারেনি তারা।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে শাবি ছাত্রলীগ এর নেতা-কর্মীরা বাধা দেয় এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ শাবি শাখা কমিটির আহবায়ক নাসির হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলে নিয়ে আটকে রাখে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ শাবি শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ অভিযোগ মিথ্যা। তাঁদের কোন জমায়েত ছিলো না। কেউ না আসার জন্য তাঁদের কর্মসূচি পন্ড হয়। ছাত্রলীগ তাঁদের কর্মসূচিতে কোন বাধা দেয়নি।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ শাবি শাখার যুগ্ম আহবায়ক নোমান খন্দকার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের নেতাকর্মীর ওপর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় পরিষদের দেওয়া কর্মসূচি আমরা পালন করতে সকাল ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে একত্র হতে থাকি। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ আমাদের অবস্থান নিতে বাধা দেয় এবং আমাদের আহবায়ক নাসির হোসেনকে হলে নিয়ে আটকে রাখে।
ইবি শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদ: ইবি সংবাদদাতা জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করেন তারা। গতকাল বেলা ১টার দিকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. অলী উল্যাহ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা দ্রুত প্রজ্ঞাপণ আকারে প্রকাশ করা হোক। একই সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের উপর হামলার সুষ্ঠু বিচার এবং হামলার সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে ন্যাক্কার জনক উল্লেখ করে বলা হয়, শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাস বরদাস্ত করা যায় না। নিরিহ-নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলা দেশের জন্য ভালো আভাস দেয় না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ