বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি

মুহাম্মদ নূরে আলম : রাশিয়ার মাঠে বিশ্বকাপ ফুটবল লড়াইয়ে বাংলাদেশ নেই, কিন্তু এ দেশের তৈরি জার্সি থাকবে বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের গায়ে আর পোশাকের ভেতরে লেখা থাকবে মেড ইন বাংলাদেশ। শুধু জার্সিই নয়Ñ গেঞ্জি, পায়ের মোজা, হাফপ্যান্টসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি করে সরবরাহ করছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক সংস্থা ফিফার কার্যাদেশের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান ব্র্যান্ড এসব পণ্য আমদানি করছে। চলতি বছরে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ প্রায় ১০০ কোটি ডলার বা ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করেছে। এর আগে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে রফতানি করেছিল প্রায় ৭০ কোটি ডলারের পণ্য। সে তুলনায় এবার ৩০ কোটি ডলারের পণ্য বেশি পাঠাতে পেরেছে। বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড় ও স্টাফদের কোচিং জ্যাকেট গেছে দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকে। এ ছাড়া দর্শক ও সাধারণ ভক্তদের পলো শার্ট, টিশার্ট জার্সিসহ অন্যান্য পোশাকও রফতানি হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ছিল এসব পোশাকের মূল গন্তব্য। তবে রফতানি বাজার হিসেবে অন্যান্য দেশেও গেছে বাংলাদেশের পোশাক। গত ছয় মাস ধরেই এসব পোশাক রফতানি হচ্ছে।
বিশ্বকাপের পোশাক হিসেবে এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ রফতানি হয়েছে, আলাদা আলাদা করে সেই সঠিক তথ্য নেই সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এই প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত অনুসন্ধান, গার্মেন্টসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং কয়েকজন উদ্যোক্তা ও গার্মেন্টস বায়িং হাউস সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা যায় এইসব তথ্য।
জানা গেছে, অন্তত ১০০ কারখানায় এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে পোশাক উৎপাদন হয়েছে। কয়েক মাস ধরে পোশাক খাতে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে রফতানি তার পেছনে মূলত রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত ১১ মাসে পোশাক খাতের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা থেকেও ৩ শতাংশ বেশি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এ সময়ের সব পণ্যের গড় রফতানি আয়ের তুলনায় এ হার বেশি। গড়ে রফতানি ৭ শতাংশেরও নিচে। চলতি ও আগামী দুই মাসের রফতানি আয়েও সেই ছাপ থাকবে। গত জুন মাসে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবল মহারণ চলবে জুলাই মাসব্যাপী।
সাধারণত ওভেন (শার্ট, প্যান্ট) এবং নিট (গেঞ্জি জাতীয় পোশাক) এ দুই ধরনের পণ্যই রফতানি করে বাংলাদেশ। তবে বিশ্ব ক্রীড়া আসরে নিট পোশাকেরই প্রায় একচেটিয়া দাপট। এ কারণে গত কয়েক মাসে ওভেনের তুলনায় নিটের রফতানি আয় বেশি হয়েছে। চলতি বছরের ১১ মাসে নিটের রফতানি আগের একই সময়ের তুলনায় বেশি হয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। এ সময় ওভেনের রফতানি বেড়েছে ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) জানিয়েছে, বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে এ বছর বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানি আগেরবারের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরেই নয়, অন্য সময়ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে। এবার সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়েছে খেলোয়াড়দের জার্সি, গেঞ্জি, হাফপ্যান্ট, শীতের পোশাক, ট্রউজার, অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জাতীয় পাতাকা ইত্যাদি।
নিট পোশাক রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠনগুলোর সূত্রে জানা যায়, অধিকাংশ কারখানায় সংশ্লিষ্ট দেশের দর্শক-ভক্তদের লাখ লাখ পিস টিশার্ট ( জার্সি) রফতানি করেছে। দুই ডলার ৫৫ সেন্টের এসব টিশার্ট  ১৫ থেকে ২০ ইউরোতে বিক্রি হবে। এবার বিশ্বকাপে অন্তত ১০০ কারখানার মালিক এ সময় বিশ্বকাপের পোশাক উৎপাদন করেছেন। এসব কারখানা দর্শক-ভক্তদের জন্যই জার্সি তৈরি করেছে।
সাভারের স্কাইলাইন গার্মেন্টসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, সারা বছরই খেলার সামগ্রী তৈরি হয় দেশের শতাধিক নিট পোশাক কারখানায়। বহুজাতিক খ্যাতিমান ব্র্যান্ডগুলো এসব আমদানি করে বাজারে ছাড়ে। এবার ফিফার কার্যাদেশের ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বকাপ আয়োজনে রিবক, নাইকি, অ্যাডিডাস, পুমা, কেরিফোর, সিঅ্যান্ডএ, এইচঅ্যান্ডএমসহ বিভিন্ন খ্যাতিমানসম্পন্ন ব্র্যান্ড কোম্পানি এসব পণ্য সরবরাহ করছে। এদের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিয়ে বিদেশের বাজারে বিক্রি করে। ফিফার কার্যাদেশের বাইরেও ফুটবলপ্রেমীদের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশের পতাকা বা জার্সির রঙে বিভিন্ন পোশাক তৈরি করেরফতানি করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো।
আরও জানাযায়, গত অর্থবছরে পোশাক খাতের রফতানি আগের বছরের তুলনায় মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ বেশি ছিল। অথচ চলতি অর্থবছরের গত ১১ মাসে সে তুলনায় অনেক বেশি। আর এক মাস পর এ বছর শেষে পোশাকের রফতানি কমপক্ষে ১২ শতাংশ বেশি হবে। সাধারণত বছরে গড় বৃদ্ধি ৩ থেকে ৪ শতাংশ হয়ে থাকে। বাকি বৃদ্ধি হচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপের সুবাদে। অর্থাৎ কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলার রফতানি বেশি হয়েছে এ কারণে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দর্শক-ভক্তদের জার্সির বাইরে মূল খেলোয়াড়দের জন্যও কিছু জার্সি এবং কোচিংয়ের সময় ব্যবহূত জ্যাকেটও তৈরি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি কারখানা আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, স্পেন ও জার্মানির খোলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের জ্যাকেট উৎপাদন করেছে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় ওই কারখানার নাম গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। বিজিএমইএর কয়েকজন পরিচালকের কারখানা থেকে সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, ডেনমার্কের দর্শক-ভক্তদের জার্সি, ট্রাউজার, মোজা তৈরি হয়েছে।
গার্মেন্টস বায়িং হাউসগুলোর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড কোম্পানি অ্যাডিডাস, পুমার মতো প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট পোশাক বাংলাদেশ বানিয়ে থাকে। এ বছর বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২টি দেশের খেলোয়াড় ও ভক্তদের জন্য জার্সি বানানো হয়েছে এই দেশ থেকেই। মূলত স্বল্পমূল্যের জন্যই বাংলাদেশ এ খাতে উন্নতি করেছে। তিন ধরনের জার্সি বানাচ্ছে পোশাক কারখানাগুলো। এর মধ্যে রয়েছে, প্লেয়ার জার্সি, ফ্যান জার্সি ও কান্ট্রি জার্সি। এগুলোর বেশিরভাগই ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, বেলজিয়াম, ইতালি, আর্জেন্টিনা ও পর্তুগাল ভক্তদের জন্য তৈরী।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ