বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সালাম একটি উত্তম সম্ভাষণপদ্ধতি

মানুষে মানুষে দেখাসাক্ষাত হলে সর্বপ্রথম যেকথা বিনিময় হয় তাই সম্ভাষণ। বিভিন্ন সমাজের এই সম্ভাষণপদ্ধতিও বিভিন্নরকম। এর সঙ্গে শরীর বা দেহের অঙ্গেরও ভূমিকা থাকে বিভিন্ন সমাজে। যেমন: কেউ মাথা নত করে প্রণাম করেন। কেউ পদযুগল স্পর্শ করেন। কেউ আবার পা স্পর্শ করবার সঙ্গে সঙ্গে পায়ের ধুলো নিয়েও ঠোঁটেমুখে পরম ভক্তিভরে স্পর্শ করেন। পশ্চিমাসমাজ তথা খৃস্টধর্মাবলম্বীরা গুডমর্নিং, গুডইভিনিং, গুডনাইট, গুড আফটারনুন ইত্যাদি শব্দবন্ধ উচ্চারণ করে সম্ভাষণ জ্ঞাপন করে। এগুলো মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতারই অনিবার্য অংশ বৈকি। তবে মুসলিমদের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে দেখাসাক্ষাত হলে 'আসসলামু আলাইকুম' বলে সম্ভাষণ বা অভিবাদনের যে চমৎকার নিয়ম আছে, তা এক কথায় অনন্য এবং দারুণ তাৎপর্যবহ। এর অর্থ হলো: আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষণ হোক। সালামের জবাবে বলা হয় ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম।’ আপনাদের ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক।
বলা বাহুল্য, মানুষের সঙ্গে মানুষের সাক্ষাতে সালামবিনিময়ের এই নিয়ম উন্নত জীবনশৈলীর উদাহরণ। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। বৈষম্য দূর হয়। সামাজিক বন্ধন মজবুত হয়। পরস্পরের মধ্যে বিরোধভাব ঘুচে যেতে সহায়ক ভূমিকা রাখে এই সালাম। তাই সালামের গুরুত্ব অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। অনেকেই মনে করেন, সালাম কেবল ছোটরাই আগে বড়দের দেবেন। তারপর বড়রা জবাব দেবেন। এমনটি কিন্তু নয়। সালাম বড়রাও আগে দিতে পারেন। আসলে সালাম কে কাকে আগে দেবেন এর প্রতিযোগিতা চলতে পারে। সালামের এই চমৎকার পদ্ধতি যেমন মহিমাম-িত, তেমনই তা তাৎপর্যপূর্ণ, যা মুসলিমসমাজ ব্যতীত অন্যদের মাঝে নেই। অন্যদের অভিবাদন বা সম্ভাষণপ্রথা থাকলেও এমন সুন্দর, আধুনিক, নিখুঁত ও মহিমাময় নয়। অনেকের মধ্যে এমন নিয়মও প্রচলিত আছে যে, এর মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। উঁচুনিচুর ব্যবধান প্রকট হয়ে দেখা দেয়, যা শান্তি ও সাম্যের অন্তরায়ও বৈকি। কোনও কোনও সমাজে সবাই সবাইকে সম্ভাষণ করতে পারেন না। করেনও না। ছোট বা নিচু মর্যাদার কেউ বড় মর্যাদার কাউকে সালাম বা সম্ভাষণ করলে তা খুব অসম্মানজনক মনে করা হয়। ভাবা হয় ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, একশ্রেণির মুসলিমেরর মাঝে সালাম বাদ দিয়ে অথবা সালামের সঙ্গে কদমবুচি বা পা ছোঁবার প্রথা দেখা যায়। প্রিয়নবী রাসুল (স) ও তাঁর সাহাবিদের মধ্যে এমনটা প্রথা ছিল বলে তার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের পৌত্তলিকসমাজ থেকে অনুপ্রবেশ করেছে। তাই মুসলিমদের এমন প্রথা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। উল্লেখ্য, সালাম নির্ভুল, বিশুদ্ধ ও অবিকৃত উচ্চারণে বলতে হবে। অন্যথায় তা হতে পারে অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এমনকি বিবেচিত হতে পারে অনাচার হিসেবেও। সালাম কেবল সৌজন্যমূলক নয়। মুসলিমদের জন্য অনিবার্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সিস্টেম বা ঔদার্যের বিনিময়। সুদৃঢ় বন্ধনের প্রতীক। তাই সালামবিনিময়ের সময় সতর্কতা অবলম্বন খুব জরুরি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ