শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চাঁদে পারমাণবিক বর্জ্য

আখতার হামিদ খান : পারমাণবিক শক্তি আশীর্বাদ না অভিশাপ সেটি এখনও বিতর্কের বিষয়। তবে হিরোশিমা, নাগাসাকি এবং চেরনোবিল বিপর্যয় ছাড়া পারমাণবিক শক্তি মানুষের উপকারই কারে চলছে। বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনে তো অবশ্যই। যে কোন পারমাণবিক প্রক্রিয়া শেষে কিছু পারমাণবিক বর্জ্য উপজাত হিসেবে থাকবেই। এই বর্জ্য মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। তাই এগুলোকে বিশেষভাবে আবদ্ধ করে মাটির নিচে পুতে রাখতে হয়। কিন্তু তা নিয়েও আপত্তির শেষ নেই। কেউ চায়না তার আশেপাশে এই বর্জ্য থাকুক।
যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক শক্তি ব্যবহৃত হয় তাই এর বর্জ্য নিয়ে মাথাব্যথাও তাদের সবচেয়ে বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পিত বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য ইয়ুপ পর্বতকে বেছে নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত হওয়ার পর ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই দশকের পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনার পর বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট নেভাদার মরুতে অবস্থিত উয়ুকা পর্বতকে ৭৭হাজার টন পারমাণবিক বর্জ্যরে অস্তিম গন্তব্য হিসেবে নির্ধারণের বিলকে অনুমোদন দেয়। জুয়ার স্বর্গরাজ্য লাস ভেগাস থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিক এই এলাকাটি বর্জ্য নিষ্কাশন শুরু হবার কথা ২০১০ সালে। এই অনুমোদন পাবার পর ৫৮ মিলিয়ন ডলারে এই প্রকল্পটির বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, পরিবেশবাদী এবং বিক্ষুব্ধ নাগরিকরা এক জোট হয়েছে।
এই প্রকল্পের সমর্থকদের মতে এই ভূগর্ভস্থ গুদাম একেবারেই নিরাপদ পরিপূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এখানে ১০ হাজার বছর থাকতে পারবে। তবে ঝুঁকি যে নেই তা কিন্তু বলা যাবে না। বিশেষ করে এসব বর্জ্য পরিবহনের সময় যেকোন ধরনের সমস্যা বা বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। দুরভিসন্ধি আছে এমন যে কোন মানুষ বা দল এই প্রতিশ্রুত নিরাপত্তার পথে অন্তরায় হয়ে যেতে পারে। এসব সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে কিছুটা আভাস এবং প্রস্তাবনা দিয়েছেন টেট্রাটেক ইএম কর্পোরেটেড-এর পরিবেশ প্রকৌশলী শেরউইন গমলি। তিনি বলেছে, ‘নি¤œ প্রযুক্তির সন্ত্রাসবাদীদের জন্য এসব দীর্ঘ মেয়াদের পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণাগারে অনুপ্রবেশ সম্ভব নয় এমন দাবী গ্রহণযোগ্য।’ তবে উচ্চ প্রযুক্তির অধিকারী সন্ত্রাসবাদীদের সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেননি। তিনি আরও বলেন যে, পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বিরাট সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তার মতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
শেরউইন গার্মলি বলেন, ‘আমার চাঁদের একটি বর্জ্য সংরক্ষণাগারের ধারণাসহ আরো কিছু উন্নত ধারণাসহ আরও কিছু উন্নত ধারণাকে বিবেচনা করা উচিত।’ এটি অবশ্য একেবারে নতুন ধারণা নয়। এর আগে আরেকবার চন্দ্রপৃষ্ঠে পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণাগার স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বর্জন করা হয়েছে।’
শেরউইন গমলির সাম্প্রতিক পরিকল্পনাটি পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে নতুন করে ভাববার অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে। শেরউইনের এই ব্যবস্থায় ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল, ওয়ারহেড টার্গেটিং টেকনোলজি এবং রিইউজেবল সাবঅর্বিটাল লঞ্চ ভেহিকল ব্যবহারের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। স্পেস ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন সমপ্রতি টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে রিটার্ন টু মুন শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানে শেরউইন গমলি বলেন, মনে হয় এই ধারণাটির সময় আবার ফিরে এসেছে। গমলি’র এ প্রস্তাবনায় অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের এবং অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সাবঅর্বিটাল স্পেস প্লেন ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। প্রথম এই প্লেনটি মহাশূন্যের উচ্চতায় উড়ে যাবে সেখান থেকে একটি আইসিবিএম ধরনের রকেট মুক্ত হবে। এই আইসিবিএমটি স্পেস প্লেনের ঠিক উপরেই স্থগিত থাকবে। এতে আরো থাকবে মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিএন্ট্রি ভেহিকল যন্ত্রপাতি, গাইডেন্স যন্ত্রপাতি এবং প্লুটোনিয়াম অথবা বর্জ্য পদার্থ ভর্তি একাধিক বাস্কসহ পরিবর্তিত রিএন্ট্রি ভেহিকল। এই রিএন্ট্রি ভেহিকলটি মহাশূণ্যে যাবার পর বর্জ্য পদার্থ নিয়ে চাঁদের পিঠে নামবে।
রিএন্ট্রি ভেহিকলটিতে একটি ইন্টারনাল লক্ষভেদ ব্যবস্থা, এই মাধ্যমেই বর্জ্য ভর্তি কাস্কগুলোকে চাঁদের কক্ষে নিক্ষেপ করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বর্জ্য ভর্তি কাস্টগুলোকে খাড়া ধারবিষ্ট চন্দ্রে জ্বালামুখের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করা হবে। এই নিক্ষেপের ব্যাপারটিকে আরও নিখুঁত করা হবে। সে সময় চন্দ্রের জ্বালামুখের একেবারে উপরিমুখে গাইডেন্স যন্ত্রপাতি স্থাপিত হবে। সুতরাং তখন লক্ষ্যভেদ আরও সহজ ও নিখুঁত হবে। চাঁদের জ্বালামুখে একের পর এক বর্জ্য ভর্তি পাত্রগুলো স্তুপ হতে থাকবে। চন্দ্র পৃষ্ঠের মাটি নরম হওয়ায় পাত্রগুলে আস্তে আস্তে মাটির নিচে গেঁথে যেতে থাকবে এবং অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এছাড়া যেহেতু পাত্রগুলো মহাশূন্য থেকে ছুঁড়ে দেওয়া হবে তাই চন্দ্র পৃষ্ঠের মাটি সেখানে শক্ত হয় তাতেও গতির কারণে তাকে কয়েকফুট মাটির নিচে দেবে যাবে।
চন্দ্র পৃষ্ঠের যে জায়গাটিতে পারমাণবিক বর্জ্য উৎক্ষেপণ করা হবে, স্বভাবতই সে যায়গাটি থাকবে মারাত্বক নরম তেজস্ক্রিয় তাই স্থানটিকে চিহ্নিত করে রাখতে হবে। তবে চন্দ্র পৃষ্ঠের একটি বৈশিষ্ট তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাহায্য করবে। গমলি বলেছেন, ‘চন্দ্র পৃষ্ঠে যেহেতু হাইড্রোস্ফিয়ার নেই তাই বর্জ্যরে স্থানান্তর হবে না।’ পারমাণবিক বর্জ্যকে সঠিক জায়গায় স্থাপন করা অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে তেজস্ক্রিয় পদার্থকে পুনঃ প্রক্রিয়াজাত হতে দেয়া যাতে তা ভবিষ্যতে আবার ব্যবহার করা যায়। এখন পৃথিবীর পারমাণবিক বর্জ্য যদি চাঁদে পাঠানো হয় তা ফিরিয়ে পুনঃ ব্যবহার সমস্যার ব্যাপারই বটে। নেভাদার ইয়ুকা পর্বত থেকে দূর ভবিষ্যতে পারমাণবিক জ্বালানি প্রক্রিয়াজাত হবার পর পুনরায় ব্যবহারের সুবিধা অনস্বীকার্য। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা তা হতে দিতে চাচ্ছে না। চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিষয়টি হয়তো মানুষ মেনেই নিলো। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্র মানের প্লুটোনিয়াম বর্জ্যকে বর্র্জ্যকে মানুষ কিভাবে মেনে নেবে।
শেরউইন গমলি বলেছেন, ‘আমাদের পৃথিবীর বাইরে এবং নাগাল থেকে দূরের একটি সমাধান অবশ্যই দরকার।’ তিনি বলেন, ‘চাঁদের পৃষ্ঠে অনুর্বর ও তেজস্ক্রিয়তাবিরোধী পরিবেশ লালিত, এর রয়েছে কাঠের ভূতাত্ত্বিক ভারসাম্য এবং এ থেকে পৃথিবীর পরিবেশ কলুষিত হবার কোন আশংকা নেই। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের পানির কারণে এ ধরনের আশংকা সব সময়ই থেকে যায়। নিম্বি (এনএমবিউয়াই ইট ইন মাই ব্যাক ইয়ার্ড ঃ পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপক বিরোধী সংঘঠন) আন্দোলনেরও কোন আশংকা নেই এবং এখানে ভবিষ্যতে উত্তম পরিকল্পনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে এ ধরনের আন্দোলনও এড়ানো সম্ভব হবে।
চাঁদে পারমাণবিক বর্জ্য নিষ্কাশনের একটি সম্ভাবনাময় দিক সম্পর্কেও গর্মলি আলোকপাত করেছেন। তারমতে, এসব বর্জ্য এক সময় মূল্যবান হবে। ভবিষ্যতের চন্দ্রপৃষ্ঠের বাসিন্দারা ভবিষ্যতে পুনঃ প্রক্রিয়াজাত হওয়া পারমাণবিক জ¦ালানি সংগ্রহ করতে পারবে এই বর্জ্য ভান্ডার থেকে। চাঁদে বসবাসের জন্যই নয় আরও দূর মহাশূন্যের অভিযানের জন্য এসব জ্বালানি সেখান থেকে ব্যবহার করা যাবে।
গমলির মতে, এই পদ্ধতি বর্তমান আন্দোলনের দাবী পূরণ করবে এবং ভবিষ্যতের জন্য বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। চন্দ্র পৃষ্ঠে পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণ পৃথিবীর পরিবেশ এবং সামাজিক সুস্থিতি রক্ষায় মঙ্গলজনক হবে। এই প্রস্তাবনা সরল নিরাপদ এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এখনই মানুষের হাতে আছে।
মধু রক্তে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বাড়ায়
মধু মানুষের রক্তে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তা প্রমাণিত হয়েছে। অ্যামেরিকার কেমিক্যাল সোসাইটির বার্ষিক সভায় আরবানা ক্যাম্পেইনে অবস্থিত ইউনিভর্সিটি অব ইলিয়নের ডঃ নিকি এঙ্গেসেথ জানিয়েছেন, তিনি প্রথমবার তার গবেষণায়ই মধু খাবার পর মানুষের রক্তে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ মেপেছেন।
ডঃ এঙ্গেসেথ এবং তার সহকর্মীরা তাদের আগের পর্যবেক্ষণ থেকে প্রকাশ করেছিলেন যে গাঢ় রঙের মতোই বেশী পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। তারা জানান, মধুর রঙ-এ উপাদানের গঠন ফুলের ওপর নির্ভর করে। গবেষকরা জানান, তারা যেসব মধু আস্বাদন করেছেন তার মধ্যে বাকহুয়াইট (বাজরা)-এর মধুই সবচেয়ে গাঢ় রঙের। তাদের মধ্যে এই মধুতে প্রায় সব উপাদানেরই আধিক্য আছে। ডঃ এঙ্গেসেথ জানিয়েছেন, এই মধুতে প্রোটিন এবং ফেনোলিক নামের রাসায়নিক পদার্থের আধিক্য আছে।
ওজনের ভিত্তিতে তিনি দেখিয়েছেন গাঢ় মধুতে রসুন এবং স্পিনেচ জাতীয় সবজির সমপরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে।  তারা জানাতে ভোলেনি যে তাই বলে সবজির সমপরিমাণ ওজনের মধু খাওয়া কখনই উচিত হবে না। এঙ্গেসেথ চিনি বা অন্যান্য সুই টনারের পরিবর্তে মধু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ডঃ এঙ্গেসেথ এবং তার সহকর্মীরা মধু মানুষের রক্তে কতটুকু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়ায় তা জানার জন্য ১৮ থেকে ৬৮ বছর বয়সী ২৫ জন পুরুষের একটি দল নির্বাচন করেন। ১২ ঘন্টা উপোস রাখার পর তাদের পানি, দুধহীন চা, পানি ও মধু দেয়া অথবা চিনি সদৃশ সুইটেনার দেয়া চা পান করতে দেয়া হয়। যাদের মধু দেয়া হয় তাদের ১৬ আউন্স পানি বা পরিমিত চায়ের সঙ্গে চার চা চামচ মধু দেয়া হয়। এরপর পাঁচ সপ্তাহের প্রতি সপ্তাহের একবার করে তাদের রক্তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ মাপা হয়। পানীয় পানের ৬০ এবং ৯০ মিনিট পর তাদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো যারা পানি মিশ্রিত মধু পান করেছে শুধু তাদের রক্তেই অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেড়েছে। যদিও সবাই জানেন, চায়ের মধ্যেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
বর্তমানে ডঃ এঙ্গেসেথ এবং তার সহকর্মীরা বেশি কোলেস্টরল আছে এখন খরগোশের ও মধুর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেনন।
তারা দেখতে চান রক্তনালিকা বা হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্যের মধুর কেন প্রভাব আছে কিনা। ডঃ নিকি এঙ্গেসেথ-এর গবেষণায় তহবিল দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হানি বোর্ড এবং ফাংকশনাল ফুড ফর হেলথ প্রোগ্রাম।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ