শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দৃশ্যপট কি শুধু সড়কের?

এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! সড়ক ব্যবস্থাপনায় রাজধানীতে নেমেছে কিশোর-কিশোরীরা। তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশি করছে। গাড়ি চালনায় লেন অনুসরণের নির্দেশনা দিচ্ছে। তল্লাশিকালে লক্ষ্য করা গেছে, অনেক বড় বড় রথী-মহারথী গাড়ির কাগজ দেখাতে সমর্থ হননি, অনেকের ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, যারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন সেই পুলিশেরও গাড়ির কাগজ নেই, চালকের লাইসেন্সও নেই।
গত কয়দিনে জাতীয় পত্র-পত্রিকায় যে চিত্র লক্ষ্য করা গেছে তাতে উপলব্ধি করা যায়, দেশে সুশাসন তথা আইনের শাসনের অবস্থা কতটা করুণ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীরা যে আন্দোলনে নেমেছে তার দীর্ঘ প্রেক্ষাপট রয়েছে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ছাত্রদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, সড়ক নিরাপদ নেই। যাত্রী মেরে পানিতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ দু’জন শিক্ষার্থীকে বাস চাপা দিল। সড়ক নিরাপদ ছিল না- এই বিষয়টি অনেকদিন চাপা পড়ে ছিল। শিক্ষার্থীরা সবার সামনে বিষয়টি নিয়ে এসেছে। দুর্ঘটনার খবরে মন্ত্রীরা যখন মুখে হাসি এনে কথা বলেন, তখন এটা পরিষ্কার হয় যে, রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থায় কোনো জবাবদিহিতা নেই। জবাবদিহিতা নেই পুলিশেরও! পুলিশের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেন না। অন্যদিকে দুর্ঘটনায় পুলিশের আয় বাড়ে। রাষ্ট্র ও পুলিশের জবাবদিহিতা না থাকার প্রভাব পড়ে চালকের ওপর। একসময় শ্রমিক নেতা মালিক হয়। এখন মালিকেরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায়। অদক্ষতা ও নৈরাজ্য জায়গা করে নিয়েছে সবখানে। সড়কে ট্রাফিক বাতি কোনো কাজে লাগে না- এই অভিজ্ঞতা নগরবাসীর আছে। শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে সড়কে সুষ্ঠ ুব্যবস্থাপনা সম্ভব।
দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের সড়ক পথে চলছে অরাজকতা। একদিকে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, অন্যদিকে ত্রুটিপূর্ণ বা ফিটনেসবিহীন যানবাহন। এই দুইয়ে মিলে আমাদের সড়ক-মহাসড়ক অনিরাপদ করে তুলেছে। সারাদেশে এখন ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। আর প্রায় ৯ লাখ যানবাহন চালাচ্ছেন ভূয়া বা অদক্ষ চালক। হাইকোর্টের নির্দেশনা ও নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ সত্ত্বেও অদক্ষ চালকের দৌরাত্ম্য কমছে না। ত্রুটিপূর্ণ যান ও ভুযা চালকের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছেই। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাবে গত বছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ৩শ’ ৯৭ জন। আহত হয়েছেন ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। ২০১৫ সালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ এবং ভুয়া লাইসেন্স জব্দ করার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নির্দেশ দেন। এরপরও কাজ হচ্ছে না। আন্দোলনত শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধরে চালকের লাইসেন্স ও যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করছে। এর ফলে রাজধানী ঢাকায় যানবাহন চলাচল কমে গেছে। বাস চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর বড় কারণ চালকের লাইসেন্স ও ফিটনেছ সনদ হাল নাগাদ না থাকা এবং আন্দোলন ব্যর্থ করতে বাস মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘট। প্রশ্ন জাগে, এসব কাজের তল্লাশিতে কিশোর-কিশোরীদের নামতে হলো কেন? আমাদের সরকার কোথায়, প্রশাসন কোথায় ছিলেন?

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ