শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ছাত্রদের ন্যায্য আন্দোলন একের পর এক শক্তির জোরে দমন করা হচ্ছে

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী : গত কয়েক দিনে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একদল অস্ত্রধারীর পৈশাচিক কর্মকান্ড দেখলাম। তারা নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের ওপর যে মধ্যযুগীয় বর্বরতা নিয়ে হামলা চালালো তার নজির শুধু তারাই। এর  আগে গত এপ্রিলে এই ছাত্রদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছিল। শুধু তারাই নয়, তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল পুলিশ বাহিনী। খুব কাছে থেকে পুলিশের টিয়ার শেলে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিক। সে আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নয়টি কলেজের শিক্ষার্থীদের দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণ। এর সঙ্গে রাজনীতি ছিল না। অন্য কারো সঙ্গে তাদের বিরোধও ছিল না। এটা তো খুব স্বাভাবিক যে একজন শিক্ষার্থী যথাসময়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে চাইবে, প্রবেশ করতে চাইবে কর্মজীবনে। কিন্তু ছাত্রলীগ ও পুলিশ তাদের যেভাবে মারধর করল সেটা কল্পনার অতীত ছিল। কিন্তু আমরা কল্পনা করতে পারি বা না পারি, বাংলাদেশ এখন এমনি মগের মুলুক চলছে।
গত প্রায় তিন মাস ধরে শিক্ষার্থীরা একটি নতুন আন্দোলন করছে। সে আন্দোলন হলো কোটা সংস্কার। সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ চাকরি দেয়া হয় কোটার ভিত্তিতে। ফলে মেধাবীরা ক্রমেই চাকরি জীবন থেকে পিছিয়ে পড়ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল এই ৫৬ শতাংশ কমিয়ে এনে তাকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হোক সে দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন দেশের শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী সমাজ এবং সমাজের সচেতন লোক। কিন্তু তাতে কোনো ফায়দা হয়নি। সরকার কোটা সংস্কারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জারিই রেখেছিল। কিন্তু আন্দোলন থেমে থাকেনি। শত নির্যাতন সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে গেছে। সে আন্দোলন শুধু ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছিল না, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ছাত্রদের ওপর নির্যাতন নীপিড়ন চলছিল। তাতে তারা মোটেও দমে যায়নি। কোটা সংস্কারের দাবি অব্যাহত থাকে। এরই এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেন যে, কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। যদিও সেটা আন্দোলনকারী ছাত্র সমাজের দাবি ছিল না। তাদের দাবি ছিল সংস্কার। কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পদ্ধতি বাতিল করাই ভালো। কারণ কোটা থাকলে তা বাড়ানো বা কমানোর জন্য আবার আন্দোলন শুরু হবে। সুতরাং কোটা বাদ। এতে ছাত্র সমাজের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি নেমে এসেছিল। কিন্তু তাদের বক্তব্য ছিল প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা আইন নয়। আইনের জন্য অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। সংকটের শুরু হয় সেখান থেকেই। প্রধানমন্ত্রী তো ঘোষণা দিলেন। কিন্তু নৌ-পরিবহণ মন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জোর গলায় চেঁচিয়ে বলতে থাকলেন। কোটা বাতিল করা চলবে না। প্রধানমন্ত্রীর কোনো ঘোষণার বিরুদ্ধে এর আগে আমরা কারও মুখে কোনো কথা শুনিনি। কিন্তু এবারই প্রথম সে ধরনের কথা শুনতে পেলাম। এ নিয়ে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নিজেও আর কোনো বক্তব্য দেননি। পরে তিনি নিজের কথা ঘুরিয়ে বললেন যে, এর জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন, কীভাবে কি করা যায়। অথচ এরকম তো কথা ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কোটা পদ্ধতি না থাকারই কথা ছিল। তাহলে প্রতিবন্ধী বা সমাজের সুযোগ বঞ্চিতদের চাকরি-বাকরির কি হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। যেহেতু বিশেষ ব্যবস্থার অপশনটি রইল, তাহলে কথা তো সেখানে শেষ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কথা রাখেনি। তিনি আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটার কথা তুললেন।
ইতিমধ্যে ছাত্র সমাজ আবার সমাবেশের ডাক দিল। এর মধ্যে গত তিরিশে জুন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সে সম্মেলন শুরু হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগের কয়েক শ’ কর্মী কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর তাদের বেধড়ক মারধর করে। এমন কি পরে তারা খুঁজে খুঁজে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে বহুসংখ্যক ছাত্রের ওপর চড়াও হয়। এরকম পৈশাচিক কান্ড ছাত্রলীগ নানা কারণে আগেও ঘটিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সংবাদমাধ্যমে সে সব হামলার বিস্তারিত সচিত্র বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। একজন আন্দোলনকারীর ওপর ১০-২০ জন ছাত্রলীগ কর্মী কিল-ঘুষি লাথি দিয়ে আহত করেছে। আর আহত শিক্ষার্থীদের পরে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। তাকে আটক করার আগ মুহূর্তে এক ফেসবুক ভিডিও বার্তায় ভীত রাশেদ আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমাকে বাঁচান, আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে ধাওয়া দিয়েছে ডিবি পুলিশ। ভিডিওটি শেয়ার করুন।’ কিন্তু পুলিশ তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে আটক করে। কিন্তু যারা এই বর্বর হামলা চালালো, সেই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
৩রা জুলাই ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপর ছাত্রলীগ যে পৈশাচিক বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে, তার কোনো সীমা পরিসীমা নেই। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোটা আন্দোলনকারীরা সমবেত হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের একজনকে ছাত্রলীগাররা মাথা থেতলে দিয়েছে। হাতপায়ে কিল ঘুষি লাথি মেরেছে, যেন তাদের ধূলায় মিশিয়ে দিতে চায়। রক্তাক্ত ঐ আন্দোলনকারীর অবস্থা করুণ হয়ে পড়ে। তার উঠে দাঁড়ানোর কোনো অবস্থা ছিল না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে আরও মারাত্মক ঘটনা। একজন ছাত্রকে ১০-১২জন ছাত্রলীগ লাঠিসোঁটা দিয়ে বেদম প্রহার করেছে। একজন ছাত্রলীগ সদস্য তার মাথায় হাতে পিঠে অবিরাম হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে। তার পুরো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ শুধুমাত্র ছাত্রদের উপর হামলা চালিয়েছে তা নয়, তারা ছাত্রীদের উপরও হামলা চালিয়ে নির্লজ্জ বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে এবং আশ্চর্যের ঘটনা এই যে যারা এরকম পৈশাচিক বর্বরতার ঘটনা ঘটালো, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। ঢাকার শহীদ মিনারে সেদিন যখন আন্দোলনকারীদের ঐভাবে পিষে মারার চেষ্টা করছিল, তখন পুলিশ তাদের বাধা তো দেয়ইনি, বরং নীরবে সে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ এসেছে পরে। এসে আহত মৃত্যুপথযাত্রী ছাত্রটিকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে অগ্নি সংযোগের মামলা দেয়া হয়েছে।
এদেশে এ ঘটনা নতুন নয়। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে আমরা আইয়ুব খানের ছাত্র সংগঠন ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশন (এনএসএফ) এর কীর্তিকলাপ দেখেছি। তারাও ছাত্র সমাজের উপর এইভাবে চড়াও হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগ যে নির্যাতন করল তাতে এনএসএফ এর নির্যাতন ম্লান হয়ে গেছে। এটা কাক্সিক্ষত ছিল না। তবে ছাত্রলীগের এই পৈশাচিকতার ঘটনা নতুন নয়। তারা বহু আগেই এনএসএফকে হার মানিয়ে দিয়েছে। এনএসএফ যতো না পিষে মারতে চেয়েছে, তার চেয়ে বেশি চেয়েছে ভয় দেখাতে। ছাত্রলীগ ভিন্ন মতাবলম্বীদের পিষে মেরে ফেলারই চেষ্টা করেছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে তারা এনএসএফকেও হার মানিয়েছে। পেছনে সরকার আছে, পুলিশ বাহিনী আছে- সেই জোরে তারা এসব কর্মকান্ড করছে। কিন্তু এসব জোর শেষ পর্যন্ত থাকে না। আমরা এনএসএফ এর ষন্ডাদের রাস্তাঘাটে  মরে পড়ে থাকতে দেখেছি। ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানকালে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটা সময় আসবে যখন হ্যারিকেন দিয়ে খুঁজেও কোনো ছাত্রলীগ পাওয়া যাবে না। এরকম অবস্থা আমরা ১৯৭৫ সালেও একবার দেখেছিলাম। শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের পতনের পর গাঠরি বোচকা নিয়ে ছাত্রলীগারদের হলগুলো থেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পালাতে দেখেছি। তার আগের দিনও যে যারা ছাত্রলীগের প্রতাপশালী মাস্তান ছিল পরদিন আর তাকে হলে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইতিহাসের সাক্ষ্য এমনই। সরকার বা ছাত্রলীগ ক্ষমতার দম্ভে এখন কেউই অনুমান করতে পারছে না যে, তাদের পরিণতি কি হতে পারে। ক্ষমতা অনন্তকালের নয়। এক সময় ক্ষমতা চলে যায়। তখন গাঠরি বোচকা নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাতে হয়। তখন যদি এই সাধারণ ছাত্ররা তাদেরকে ধাওয়া করে এবং তাদের পরিণতি যদি আজকের নির্যাতিত ছাত্রদের মতো হয় তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না।
সামান্য একটু উদাহরণ দিচ্ছি ২ তারিখেই আমরা দেখেছি, ছাত্রলীগের এই পৈশাচিকতা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাশে মানববন্ধন করেছে। সিলেটেও সাধারণ ছাত্ররা ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে। রাজশাহীতেও বের করা হয়েছে মশাল মিছিল। আর তিন তারিখে ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। সুতরাং হলফ করেই বলা যায়, সামনে ছাত্রলীগের জন্য বড় দুর্দিন অপেক্ষা করছে।
এবার খানিকটা আত্মসমালোচনা করা যাক। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর কিংবা তারও আগে থেকেই এ দেশের সংবাদপত্রগুলো সব সময় নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পক্ষে দাঁড়িয়েছে নায্যতার, তার জন্য সংবাদপত্রগুলোর ওপর দলনপীড়ন কম হয়নি। কিন্তু সত্য প্রকাশের নীতিতে সংবাদপত্রের সম্পাদক-প্রকাশকরা অবিচল ছিলেন। তখন টেলিভিশন ছিল না। এত সব স্যাটেলাইট চ্যানেলও ছিল না। এখন সংবাদপত্র আছে, বহু সংখ্যক টেলিভিশন চ্যানেল আছে। কিন্তু সরকারের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য কোনো মিডিয়া-ই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না যে, তারা যথাযথভাবে আন্দোলনকারীদের সপক্ষে দাঁড়িয়েছে। স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলোর বিপদ অনেক বেশি। তাদের উপর হুমকির খড়গ সব সময় জারি রয়েছে। সরাসরি সম্প্রচার কিংবা সরকারের পছন্দ নয় এমন খবর প্রচারের বিরুদ্ধে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘অধিকাংশ চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি আমি। যে দেয় সে নিতেও পারে’। এর চেয়ে স্পষ্ট হুমকি আর কিছুই হতে পারে না। ফলে আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে তাদের ওপর নির্যাতনের খবর অতি সামান্যই প্রকাশিত হয়েছে। কেন না ইতিপূর্বে সরকার চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন, দৈনিক আমার দেশ বন্ধ করে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ গড়ে ওঠেনি। ফলে এ যাত্রায় টিভি চ্যানেলগুলোতে আমরা ছাত্রলীগের বর্বরতার চিত্র দেখতে পাইনি। কিন্তু সত্য চাপা থাকে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে বর্বরতার ভিডিও চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিক হয়েছে স্থিরচিত্রও। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ দেখেছে, ‘নব্য স্বৈরাচারি সরকার’ বাংলাদেশে কি কান্ড করছে।
সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। হাতেগোণা কয়েকটি সংবাদপত্র ছাড়া অধিকাংশ সংবাদপত্রই যেন এত বড় ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। সংবাদপত্রের মালিকদের অধিকাংশ সরকার সমর্থক। ফলে তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন খবর প্রকাশ থেকে বিরত থাকে আর অনেকেই বিরত থাকে ভয়ে। তাই দেখা যায়, দু-চারটি সংবাদপত্র ছাত্রলীগের পৈশাচিক বর্বরতার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১৯৭২-১৯৭৫ সালেও সংবাদপত্রের উপর এমন দলনপীড়ন চলেছিল- কিন্তু তখন প্রতিবাদ ছিল। সাংবাদিকদের সংগঠন ডিইউজে-বিএফইউজে বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। পত্রিকায় লিখেও তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দাবি করেছেন। কিন্তু সরকার একের পর এক কালাকানুন জারি করে গেছে। আজ সকলেই নিশ্চুপ। বিভক্ত সমাজের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ কোনো পদক্ষেপ নেই। কিন্তু আজ আমরা যে দাসত্ব মেনে নিচ্ছি রুখে না দাঁড়ালে আগামীতেও একই রকম দাসত্ব করে যেতে হবে।
নায়মোলার জার্মান নৌবাহিনীর দুর্র্ধর্ষ সাবমেরিন অধিনায়ক ছিলেন। পরে চিন্তাবিদ ও লেখক হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন এবং হিটলারের নাৎসিদের দ্বারা কারারুদ্ধ হন। জার্মান জাতি নিষ্ক্রিয় ছিল বলেই হিটলার তাদের স্তব্ধ করে দিতে এবং নাৎসি শাসন চালু করতে পেরেছিলেন। এ ব্যাপারটাকে নায়মোলার বর্ণনা করেছেন এভাবে :
‘প্রথমে ওরা এলো কমিউনিস্টদের ধরতে, আমি প্রতিবাদ করিনি/কেননা আমি কমিউনিস্ট ছিলাম না।/তারপর তারা সোস্যালিস্টদের ধরতে এসেছিল, আমি প্রতিবাদ করিনি/কারণ আমি সোস্যালিস্ট ছিলাম না।/তারপর তারা এলো ট্রেড ইউনিয়নিস্টদের ধরতে, আমি প্রতিবাদ করিনি,/কারণ আমি ট্রেড ইউনিয়নপন্থী ছিলাম না।/তারপর তারা এলো ইহুদিদের ধরতে, আমি প্রতিবাদ করিনি,/কারণ আমি ইহুদি ছিলাম না।/তারপর ওরা আমাকে ধরতে এলো/তখন আর আমার হয়ে প্রতিবাদ করার কেউ ছিল না।’ তেমন পরিস্থিতি কারও কাছে কাম্য হতে পারে না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ