শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

গাজায় বিমান হামলার পর ইসরাইল ও হামাসের অস্ত্রবিরতি

১০ আগস্ট, মিডল ইস্ট মনিটর : দফায় দফায় হামলা ও পাল্টা হামলার পর অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরাইল। গত বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের মধ্যে এ সমঝোতা হয়। দুই ফিলিস্তিনী কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই খবরটি জানিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ইসরাইলী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

২০১৪ সালের পর এ বছর গাজায় ফিলিস্তিনী-ইসরাইলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা দেখা দেয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। গত ৩০ মার্চ থেকে গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনীদের ছয় সপ্তাহের মাচ অব রিটার্ন আন্দোলন চলার সময় ইসরাইলী বাহিনীর গুলীতে অন্তত ১২০ ফিলিস্তিনী নিহত হয়। ইসরাইলী বাহিনীর দাবি,নিহতদের বেশিরভাগই হামাস সদস্য এবং জঙ্গি। বিক্ষোভের আড়ালে তারা হামলা চালানোর চেষ্টা করছে। দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল উত্তেজনার পর গত ৩০ মে ইসরাইল ও গাজার ফিলিস্তিনী সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি ডি ফ্যাক্টো অস্ত্রবিরতি চুক্তি হলেও পরে তা ভেস্তে যায়। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলতে থাকে। এ অবস্থায় আবারও হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে অস্ত্রবিরতির খবর পাওয়া গেছে। মিসরের মধস্থতায় অস্ত্রবিরতির আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনী কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, আন্তর্জাতিক মান সময় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে নয়টা থেকে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হবে।

বুধ ও বৃহস্পতিবার গাজায় ১৫০টির বেশি স্থাপনায় ইসরাইলী বিমান হামলার পর এ অস্ত্রবিরতির কথা জানা গেলো। বুধবার (৮ আগস্ট) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এদিন মধ্যাঞ্চলীয় গাজার জাফারায়িতে ইসরাইলী বিমান হামলায় ইনাস খামাশ ও তার ১৮ মাস বয়সী মেয়ে নিহত হয়েছে। ২৩ বছর বয়সী ইনাস অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। হামলায় তার স্বামীও আহত হয়েছেন। বিমান হামলায় ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের এক সদস্য নিহত হয়। ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী এক টুইটার পোস্টে দাবি করেছে,তারা গাজায় একটি অস্ত্র তৈরির কারখানা ও গুদামসহ ১৪০টি কৌশলগত জায়গায় হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি,বুধবার গাজায় তাদের একটি গাড়ি লক্ষ্য করে গুলী ছোড়ার পরই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। জবাবে ইসরাইল ট্যাংক থেকে গোলা ছুড়েছে। এরপর আবার প্রতিশোধ নিতে বুধবার (৮ আগস্ট) রাতে ইসরাইলী স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হয়। হামাসের সামরিক শাখার পক্ষ থেকে রকেট হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে। এর আগে সপ্তাহের শুরুর দিকে গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলের শেল হামলায় দুই হামাস সদস্য নিহত হয়।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন অবরুদ্ধ গাজায় তেল আবিবের এই বর্বরতার কারণে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হতে পারে। ইসরাইল জানায়, তারা গাজা উপত্যকায় হামাসের ১৪০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। আর গাজা থেকে ১৫০টির বেশি রকেট ছোঁড়া হয়েছে। তবে এসব রকেটের মধ্যে ২৫টিকে তারা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম দিয়ে ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছে। এসব রকেট হামলায় কয়েকজন ইসরাইলী আহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে। ইসরাইলের দাবি, গাজা থেকে দেড় শতাধিক রকেট ছোঁড়ার পর তারা পাল্টা হামলা চালিয়েছে। 

এদিকে হামাস এই হামলার কথা স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, মঙ্গলবার তাদের দুই যোদ্ধা ইসরাইলী ট্যাঙ্কের গোলায় শহিদ হওয়ার পর এর প্রতিশোধ নিতে তারা এ হামলা চালিয়েছে। হামাস বলছে, ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল এবং এখন তা পূর্ণ হয়েছে।  স্থানীয় সময় বুধবার রাত থেকে চালানো এসব বিমান হামলায় এক অন্ত:সত্ত্বা ফিলিস্তিনি নারী ও তার দেড় বছর বয়সী সন্তানসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।

ইসরাইলী হামলার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস ও ফিলিস্তিনী স্বশাসন কর্তৃপক্ষ। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ইসরাইলকে থামানোর জন্য জাতিসঙ্ঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ