বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ডুমুরিয়ায় ভণ্ড পীরের আস্তানায় প্রতারিত মহিলা রোগী

খুলনা অফিস : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে থেমে নেই কথিত সেই পীর বাবার ভণ্ডামী। হৃদয় চমকানো কথা বলে বশ করেছেন গ্রামের সরল সোজা মহিলাদের। বাস্তবে কোনো রোগী সুস্থ না হলেও হুজুগে মাতা মহিলারা লাইন দিচ্ছেন তার আস্তানায়। প্রশাসনের নজরদারিতে আস্তানা সাময়িক গুটিয়ে নিলেও এবার তিনি পানিতে ফুঁ দিচ্ছেন আটঘাট বেঁধে। এজেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় গিয়েও তিনি রোগী দেখছেন। পীর বাবার পানি পড়াতে নাকি ভাল হয় সর্দি জ্বর থেকে শুরু করে বাত ও কোমরে ব্যথা, চর্মরোগ, পিত্তথলি পাথর, গ্যাস্ট্রিক, জন্ডিস, অর্শ্ব, এলার্জী, সাপে কাটা, বিড়াল কুকুরে কামড়ানো, বাড়ি বন্ধ, প্রেমসংক্রান্ত, জ্বীনের আছরসহ নানা জটিল ও কঠিন সমস্যা।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার চুকনগরে কথিত পীর বাবার নাম আব্দুল লতিফ। রোস্তমপুর গ্রামের মোকতার মোড়লের ছেলে। বয়স ৩৫ বছরের মত। চুকনগর হাইস্কুল রোডের একটি ঘরে তার আস্তানা। প্রতিদিন শত শত ভক্ত রোগী পানি, তেল, কলার মোচা পড়াসহ নানা তদবির নিতে আসে পীর বাবার সান্নিধ্যে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রোগী দেখেন।
আস্তানায় গিয়ে দেখা যায়, টেবিলের উপর পানি তেল ও দুধের বোতল, কলার মোচা, মাটি, মাদুলীসহ নানা তদবিরের সামগ্রী। আর বাইরে অসংখ্য মহিলার লাইন। সবার হাতে পানি ও তেলের বোতল। একেক জনকে একেকভাবে চিকিৎসা করছেন তিনি। তার আস্তানায় ৪টি সাইনবোর্ড ছিল। পত্রিকায় সংবাদ ও প্রশাসনের চাপে তা সরিয়ে ফেলেন। যার একটিতে লেখা ছিল শিক্ষাগত যোগ্যতা, একটিতে রোগের চিকিৎসা ফি। সাপে কাটা ফি ৫০০ টাকা, কুকুরে কামড়ানো ফি ২৫০ টাকা, বিড়ালে কামড়ানো ফি ১৫০ টাকা, অশ্ব রোগী ২০০ টাকা, জ্বিনে ধরা ফি ৩০০ টাকা, প্রয়োজনে বারণ ফি ১০০ টাকা, বাড়ি বন্ধ করা ফি ৩০০ টাকা। একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে প্রথম সাক্ষাৎ ৫০ টাকা, দ্বিতীয় সাক্ষাৎ ৩০ টাকা। আরেকটি সাইনবোর্ডে লেখা-আল্লাহর রহমত চাই, আপনাদের সহযোগিতা চাই, ২০১৯ সালে হজ্ব করতে চাই। এসময় পীর বাবার কাছে চিকিৎসার কোনো সনদ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সনদ নেই, আল্লাহর কালাম পড়ে ফু দিলে সব রোগ ভাল হয়ে যায়। আস্তানায় উপস্থিত কয়েকজন রোগীর সাথে কথা হয় সাংবাদিকদের। এদের মধ্যে রাবেয়া বেগম (৬০) এসেছেন এলার্জী রোগ নিয়ে, রওশানারা (৪০) এসেছেন পেটে ব্যথা রোগের চিকিৎসা নিতে। মাজায় ব্যথা সারাতে এসেছেন হাফিজা বেগম (৪০)। এমনিভাবে বহু রোগী তাদের রোগ নিরাময়ের জন্য হুজুরের দরবারে এসেছেন। কিন্তু তাদের সবাই প্রথমবারের মত এসেছেন। আশপাশের অনেকেই হুজুরের পানি পড়াতে সুস্থ হয়ে গেছেন এই গুজব শুনে এসেছেন তারা।
পুরাতন রোগীদের মধ্যে কথা হয় রোস্তমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুক্তি ম-লের সাথে। তিনি কয়েকমাস আগে মেরুদ-ের হাড়ের ব্যথা নিয়ে হুজুরের কাছে গিয়েছিলেন বলে জানান; তবে মাসাধিককাল যাবৎ তেল-পানি ব্যবহার করে সুস্থ হতে না পেরে তিনি বর্তমানে ভারতে ডাক্তার দেখাচ্ছেন বলে জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুকনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে অনেক রোগীর ভিড় দেখে পায়ের ব্যথার জন্যে আমিও গিয়েছিলাম, কিন্তু ১৫ দিন তেল-পানি ব্যবহারে কোনো ফল না পেয়ে অবশেষে অন্য ডাক্তার দেখাচ্ছি।
ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে তেল-পানিপড়া, ঝাড়ফুঁক, গলায় মালা পরানো এসব কোনো কিছুতেই রোগ ভাল হওয়ার কোনো তথ্য লেখা নেই। তবে, এসব কুচিকিৎসায় অসুস্থ লোক ভাল না হলেও সুস্থ লোক অসুস্থ হয়ে যায়। এ বিষয়গুলো যদি এই জামানায় এসেও সাধারণ মানুষ না বোঝে তাহলে আর কিই বা করার আছে।
এব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. শাহনাজ বেগম বলেন, আমি কয়েকমাস এখানে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি কিছু জানতামনা। তবে লাইসেন্স ছাড়া তিনি কিভাবে চিকিৎসা করেন? আর তেল-পানিপড়া দিয়ে কখনও রোগ ভাল হয় না। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ