শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

যাদের কারণে গণপরিবহনে নানা দুর্ঘটনা

ডাঃ মোঃ মুহিব্বুল্লাহ : বিজ্ঞানের উৎকর্ষের এ যুগে যোগাযোগব্যবস্থায় গণপরিবহনের প্রয়োজনীয়তার বিকল্প নেই। চলমান জীবনে এ গণপরিবহনের কারনে ধনী-দরিদ্র সবার জীবনে দারুণ এক ছন্দময় পরিবেশ এসেছে। প্রতিটি মানুষ এতোটাই সৌখিন হয়েছে যে আজ আর কেউই কোথাও যেতে এক পাও হেটে চলতে চায়না।মধ্য ও নিম্নবিত্ত লোকেরা সদাই সহযে এ গণপরিবহনে তাদের গন্তব্যে যাতায়াত করে থাকে। এমনকি অনেক বিত্তবানকেও কখনো কখনো নিজের প্রাইভেট গাড়িটিকে রেখে গণপরিবহনে চলেই ধারে-কাছের প্রয়োজন সেরে আসতে দেখাযায়। তাতে যেমন সে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয়টাও লাঘব হয় তেমনি জাতীয় সম্পদ অপচয় রোধেও বেশ ভুমিকা সুচিত হয়।গণপরিবহনের প্রয়োজন পড়েনা এমন কোনো মানুষ বর্তমান সমাজে পাওয়া যায়না।কোনো শ্রেণী-পেশার কথা বাদ দিয়ে মানব জাতির মধ্যে জাত প্রভেদে নারী পুরুষকে আলাদা আলাদা করে ধরতে গেলেও এদু লিঙ্গের কোনো এক জাতির তুলনায় কোনো এক তাজীর প্রয়োজনীয়তার পরিমাপকেও বেশকম করার সুযোগ নেই। কাজকর্ম; চাকুরী-বাকুরী; অফিস-আদালত, শিক্ষাদিক্ষা, চিকিৎসা ও ভ্রোমনের মোতো সকল প্রকার মানবিয়ো প্রয়োজনে আমাদের নর-নারী উভয়েই সমান জড়িত। সবাকেই জীবনের নানা প্রয়োজনে সময় অসময় দিক্বিদিক ছুটাছুটি করতে হয়। তবে আমাদের সকল যাত্রাপথেই এক বা একাধিক সাথি-সঙ্গি থাকেনা। কখনও কখনও কোনো দূর গন্তব্যে আমাদের একাই ছুটে চলতে হয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে যেখানে যেয়ে কোনো দুর্ঘটনার কবলে পড়লে সজন সংসারের কাছে খবর পৌছাতেও অনেক দূরুহ প্রক্রিয়ার অন্তরায় পাড়ি দিয়ে আসতে হয়।যে পরিবেশ কিছুটা সহজসাধ্য হিসেবে পেতে আমাদেরকে সেসকল পেশার মানুষগুলোকে সত ও হৃদয়বান গুনে গুনান্বিত পাওয়া প্রয়োজন হয়।অথচ আমাদের দেশের সে পেশার বেশীরভাগ পেশাজীবীই অশিক্ষিত ও কুশিক্ষিত হওয়ার কারনে কাঙ্খিত সে গুন ও মানের কর্মী না থাকায় যা আরো আসংকাজনক অবস্থায় নিপতিত রয়েছে।এমনকি প্রতিনিয়ত তাদের দারাই ঘটছে এহেন অবাঞ্চিত শত সহস্র দুর্ঘটনা।দুটাকা বেশী ইনকাম করার লক্ষ্যে বেশী যাত্রী পেতে এবং পাঁচ মিনিট সময় বাচিয়ে আগে ফির্তি সিরিয়াল লাগাতে এসকল পরিবহনের পরিচালকরা ট্রাফিক আইন অমান্যকরে প্রতিনিয়ত একে অন্যের আগে উঠার প্রতিযোগিতায় মানুষের জীবন মানের কথা একেবারে ভুলেযায়। আর যেসকল অভার্টেকের কারণেই আমরা বড়বড় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা গুলো দেখে থাকি।যান্ত্রিক ত্রুটি ও অদক্ষ ড্রাইভারেতো এ পেশা ভরপুর। লক্কড় ঝক্কড় গাড়ি বাদ দিলে রোডের যাত্রীকে গন্তব্যে পৌছানোর গাড়ি পেতে হয়তোবা দিনও কেটে যেতে পারে।আর নেশাগ্রস্ত ড্রাইভারেতো আমাদের যাত্রা পথ ছেয়ে আছে। যাদের দ্বারা যাত্রীর সাথে অসমীচীন আচরণ করা এবং ইচ্ছে করে পথচারির উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়া সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ে যেধরনের সমস্যা নিয়ে দেশময় বেশ  উত্তেজনাকর অবস্থাও বিরাজ করছে। তবে এসকল সমস্যাকে পরাজিত করে এদেশের গণপরিবহনে আরো মারাত্মক মারাত্মক কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে, যা কারোর প্রত্যাশিত নয়। দেশের রাজধানী শহর ঢাকার মতো স্থানে আমরা চলন্ত গাড়িতে দেশের সংখ্যালঘু উপজাতি গারো নারীকে গণধর্ষনের শিকার হতে দেখলাম। ঢাকার সাভারে ঢাকা আরিচা সড়কে স্বামীকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ সহ একাধিকবার চলন্ত গাড়িতে নারী ধর্ষিতা হতে দেখা গেছে। এইতো গতবছর সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের রূপা-২৫ নামের এক ব্রিলিয়ান্ট কলেজ ছাত্রীকে টাঙ্গাইলে “ছোয়া” পরিবহনের তিন স্টাফ মিলে ধর্ষণ শেষে ঘাড় মোটকে হত্যা করলো।এছাড়া চলন্ত গাড়িতে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত অসংখ্য নারীরা নানা ভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।যাদের মধ্যে কেউ আছে মান ইজ্জতের ডরে তার অভিযোগ স্বজন সমাজ ও প্রশাসন থেকে গোপন রেখে নিজেই হজম করার চেষ্টা করছে। আবার কোনোকোনো ঘটনা আমরা যেকোনো ভাবে জানতে পারছি। যাই হোকনা কেনো সমাজের এ দুর্গতির অবসান অতি নিকটবর্তী নাহলে জনজীবনের দূর্দশা ক্রমান্বয় মহামারী রূপ ধারন করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে গণপরিবহন আরো কিছু মারাত্মক পরিবেশের মধ্যে নিপতিত হয়েছে যা যাত্রীর মাল-সম্পদ, ইজ্জত-সম্ভ্রম ও জান-প্রাণের দারুণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোড-ঘাটের এমন বেহাল দশা জাতি আর জীবনে দেখেছে কিনা সন্দেহ। যাত্রী ভিড়ে তো সিট,রড ও ইঞ্জিনকাভার কোথাও চুলপরিমান ফাকা থাকেনা।তার মধ্যে খানা-খন্দকে পূর্ণ রোডে গাড়ি চলতে যেমন উল্টে যাওয়ার ঝুকিতে হাতের উপরে প্রাণটা নিয়ে তাতে চড়তে হয়, তেমনি আবার প্রচন্ড ঝাকুনিতে নারী যাত্রীদের দুষ্ট পুরুষ যাত্রী কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার না হয়ে পারা যায়না।গণপরিবহনের এহেন দশা থেকে যে রেহাই মিলবে তাও বলা যায়না।কেনোনা এ পরিবেশ পরিস্থিতি উন্নয়নের দায়ীত্বে নিয়োজিত বাহিনী আরও এ জাতীর ক্ষতি সাধনে পরিনত হয়ে বসে আছে। অবৈধ ইনকামের বদৌলতে অদক্ষ ড্রাইভার আর মানহীন গাড়ি দিয়ে ভরে রেখেছে পুরা পরিবহন সেক্টর।যে কারণ কাঙ্খিত মানের গণপরিবহন সেবা পেতে আমাদের দেশবাসীকে পোড়া কপালি করে রেখেছে।সর্বোপরি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে গণপরিবহনের এ নানামুখি দুরবস্থার কারণে জনজীবনকে দারুণ তিক্ততার মধ্যে বিরাজমান পাওয়া যায়। যে অবস্থা থেকে অতি তাড়াতাড়ি উত্তরণই সকলের কাম্য।
তাই আমাদের ব্যক্তি, সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র সকলকেই স্ব-স্ব স্থান থেকে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার ও জাতীয় উন্নয়ন ত¦রান্বিত এবং জনতার স্বাচ্ছন্দ্যময়ী জীবন অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।আর সে ব্যাপারে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রপরিচারিকা শক্তি এ ত্রি-শক্তির মধ্যের কোনো এক শক্তিকে অনিহা প্রদর্শন করতে দেখাগেলে দেশ ও জাতির কল্যাণকামী সকল জনতাকে সঙ্গে নিয়ে তাকে বর্জন করে জীবনের অতি প্রয়োজনিয় এ গণপরিবহন সেক্টরে মানুষের জানমাল, ইজ্জত আবরুর নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। তাই আসুন আমরা আমাদের দুর্নীতি গ্রস্ত রোডঘাট উন্নয়ন ও আইন শৃঙ্খলা বাস্তবায়নকারীদেরকে বর্জন করে নীতিনৈতিকতা গুন সম্পন্ন দায়িত্বশীলদের হাতে এ দায়িত্ব বুঝেদিয়ে দেশের আঠারো কোটি মানুষের চলার পথের ঝুকিকে কমিয়ে গণপরিবহনের সকল সমস্যা শূন্যের কোটায় আনতে সচেষ্ট হই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ