নারায়ণগঞ্জে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের মামলা
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা : রাজধানীতে বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে ৭দিন পর মামলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার একজন এস আই বাদী হয়ে রোববার দিনগত গভীর রাতে ওই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় চাষাঢ়ায় বেআইনীভাবে অবস্থান, ভাঙচুর ও রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এছাড়া আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিরও অভিযোগ করা হয়। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছেন, ধারাবাহিকভাবে আরো কয়েকটি মামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সদর থানার এস আই মাসুদ রানার দায়ের করা ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট সকাল থেকে তাঁর নেতৃত্বে শহরের চাষাঢ়ায় ডিউটি পালন করছিল। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টায় চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারের সামনে ৫০ থেকে ৬০ জন অবস্থান নেয়। পরে তারা চাষাঢ়া গোলচত্বরে অবস্থান করে চারটি সড়ক বন্ধ করে দেয়। তখন পুলিশ তাদের বাধা ও রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চাইলেও ব্যর্থ হয়। ওই সময়ে এসব উত্তেজিত ৫০ থেকে ৬০ জন অজ্ঞাতনামা জনতা পুলিশকে উল্টো হুমকি দেয়। তারা পুলিশকে রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা দেয়। তখন তারা ৫টি অটো রিকশা ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে পুলিশের উপর হামলা করে পালিয়ে যায়।
পুলিশের অভিযোগ, ৩১ জুলাই মঙ্গলবার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ চাষাঢ়ায় মানববন্ধন করলেও ১ আগস্ট বুধবার থেকে তারা সক্রিয় হয়ে উঠে। একইভাবে বৃহস্পতিবার ছিল ওই সিন্ডিকেট অন্তত শতাধিক সদস্য। তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পোশাক পড়ে মিশে যায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের সংঘঠিত করে রাখা ও পরে কোন একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। সবশেষ গত ৫ আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জে এ ধরনের একটি প্রয়াসও চালায় শিক্ষার্থী নামধারী একটি অংশ। সেদিন ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িও। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে উসকানিদাতাদের শনাক্ত করছে। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকজনের মোবাইল কললিস্টও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের প্রাথমিক তদন্তে অন্তত ৫০ থেকে ৬০জন চিহ্নিত হয়েছে যারা সরাসরি এ ছাত্র আন্দোলনে পেছন থেকে উসকানি দিয়েছে। কারণ সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা শুরু থেকে অবরোধ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সড়কে শৃঙ্খলা আনার কাজটি করতে চাইলেও ওই সিন্ডিকেট সেটা করতে দেয়নি। তারাই মূলত সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুরের নির্দেশনা ও উসকানি দেয়।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এক মেয়েকে শনাক্ত করা হয়েছে যে অন্তত ২০ থেকে ৩০টি মোবাইল সীমকার্ড সংগ্রহ করেছিল। সে ১ আগস্ট বুধবার ও ২ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রত্যেকদিন শহরের চাষাঢ়া শহীদ মিনারে এসে বিভিন্নজনকে ফোন করতে থাকে। ওই মেয়ে একেকটি সীম দিয়ে ৭ থেকে ৮টি কল করে আবারো সীম পরিবর্তন করে ফেলে। সে ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া এবারের আন্দোলনে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশী নেপথ্য ও উস্কানিদাতা হিসেবে কাজ করেছে। একটি ছিল রণদাপ্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় ও অপরটি নারায়ণগঞ্জ মডেল কলেজ। সবশেষ ৬ আগস্ট পর্যন্ত রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী সরব ছিল।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, আন্দোলনে বাম ঘরনার কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতারাও পেছন থেকে কাজ করেছে। এর মধ্যে ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফ্রন্ট সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ছাত্র সংঠনের লোকজনও ছিল। এছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে লেখা ফেস্টুনগুলোর স্লোগান মূলত ছোট ছোট চিরকুটে করেই সরবরাহ করা হয়।
কর্মকর্তা এও জানান, তারা শুরু থেকে সবকিছু প্রত্যক্ষ করলেও সরকারের কোন নির্দেশনা ও পরিস্থিতি যাতে ভিন্ন দিকে না যায় সেজন্য চুপ ছিলেন। কিন্তু সবকিছু তথ্য গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সংগ্রহ করে রেখেছেন।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, পুরো বিষয়গুলো ইতোমধ্যে যাচাই বাছাই চলছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তারা আবেগের বশে এসেছিল। কিন্তু তাদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে একটি সিন্ডিকেট ভিন্ন দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করেছিল। তাদের অনেককে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের নজরদারীতে রাখা হয়েছে।
১ আগস্ট বুধবার, বৃহস্পতিবার ও ৪ আগস্ট শনিবার এ তিনদিন নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় সকাল ১০টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে শত শত শিক্ষার্থী। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল ও সাইনবোর্ড এলাকাতেও ছিল অবস্থান। এতে করে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে রাজধানী সহ আশেপাশের জেলার সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা করেন যেখানে বাদ পড়েনি সরকার দলীয় এমপি, রাজনীতিক, পুলিশ, সাংবাদিকও।