বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বর্ষায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা

এই আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসের ঝমঝম বৃষ্টিতে মাধবীলতার ফুলে ফুলে ভরে থাকা বাড়ির গেটের ওপর লতিয়ে ওঠা দোল খাওয়া ফুল আর পাতার কী যে অপূর্ব শোভা! বর্ষার সবুজ গাঢ় শ্যামল সৌন্দর্যে মনপ্রাণ ভরে ওঠে। কত কবি যে বর্ষার রূপে মুগ্ধ হয়ে কবিতা লিখেছেন।
এবার ওই সব কথা রেখে চলুন বাস্তবতা নিয়ে কিছু কথা বলি। ছাদের কার্নিশে জমে থাকা টলটলে পানি বা ফেলে রাখা গাড়ির টায়ারে জমা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা, ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটিয়ে তারপর বিস্তার লাভ করে এডিস মশার বংশধর।
মেয়ে এডিস মশা কামড় দেয় নিঃশব্দে এবং ফলে ডেঙ্গুজ্বর হয়। ডেঙ্গুজ্বর হলে গায়ে অসম্ভব ব্যথা হয়, দুই চোখে লাল হয়ে যায়। হাত-পায়ের গিরায় গিরায় প্রচ- ব্যথা হয়। পুরো শরীরে বিন্দু বিন্দু র্যাশ ওঠে বা অসংখ্য লাল রঙের বিন্দু ওঠে। এগুলো চুলকিয়ে শরীরকে নাস্তানাবুদ করে দেয়। মুখের ভেতর ও খাদ্যনালিতে ওই রকম র্যাশ ওঠে। আর হেমোরেজিক ডেঙ্গু হলে প্লেটিলেট কর্বন্ট বা অশুচক্রিকা কমে যায়। ওই সব পেশেন্ট কোলাপস করে, চিকিৎসা না করালে রোগী মারা যায়। কাজেই ঝমঝম ছন্দের সাথে মন্দ কথাও মনে রাখতে হবে। ফুলের টবে, পরিত্যক্ত টায়ারের পানি, ছাদের কার্নিশের জমা পানি পরিষ্কার রাখতে হয়।
বর্ষায় হয় প্রচণ্ড জ্বর
ভরা বর্ষায় প্রচণ্ড জ্বর হচ্ছে, জ্বরের সাথে মাথাব্যথা পুরো শরীর ব্যথা, সাথে খুসখুসে কার্শি পুরো শরীরের দুর্বলতা, খাবার দেখলে বমি বমি ভাব হওয়া এবং মাথা মুড়ানো ইত্যাদি এটিকে বলা হয় ভাইরাস ফিভার।
এ জ্বরে শরীর এতই দুর্বল হয় যে, দাঁড়িয়ে থাকাও কষ্ট মনে হয়। কোনো কাজ করার এনার্জি থাকে না। এ জ্বর অত্যন্ত ছোঁয়াচে এবং বাসার একজনের এ জ্বর হলে একে একে পরিবারের সবার হবে। বিশেষ করে ছোট শিশুরা বেশি ভুগে থাকে। এমন জ্বর হলে শরবত, আনারসের রস ইত্যাদি খেতে হবে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। তিন দিন পর এ জ্বর সেরে যাবে।
ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতে
এই প্রচণ্ড গরমে আর মাঝে মধ্যে ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতে গরম আরো প্রকট হয়ে ওঠে। শরীর ঘামছে এবং বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতোই। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ঘরে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এই ভেজা প্রকট গরমে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও জ্বর হচ্ছে ঘরে ঘরে। কোনো কোনো পরিবারের সবারই এ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এ জ্বর ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত হতে পারে। তবে ভাইরাসজনিত প্রকোপেই বেশি। এ জ্বরের তাপমাত্রা ১০১ থেকে ১০২ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। শরীরে প্রণ্ড ব্যথা হয়, মাথাব্যথা করে এবং খাবার খেতে প্রচণ্ড অনীহা হয়। শরীর খুবই দুর্বল লাগে। এ জ্বরের মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ দিন হতে পারে। জ্বরের মধ্যে চোখ লাল হওয়া, খাবারের প্রতি অনীহা হওয়া ইত্যাদি দেখা যায় নাক দিয়ে পানি পড়ে, খুসখুসে কাশি হয় এবং কখনো কখনো কাশি বেশি পরিমাণে ওঠে।
তবে এ জ্বরের ঘাবড়ানোর কারণ নেই। তিন থেকে পাঁচ দিনেই সেরে যায়। কিন্তু জ্বর সেরে যাওয়ার পরও শরীর খুব দুর্বল লাগে। মাথা ঘোরায়। এ উপসর্গগুলো আস্তে আস্তে ভালো হয় এবং খাবারের রুচি ফিরে আসে। এ ভাইরাস জ্বরে তেমন কোনো ওষুধ লাগে না। জ্বর হলে প্যারাসিটামল বা পেইনকিলার খেতে হবে। তবে খালি পেটে নয়। আর যদি জ্বর পাঁচ দিনেও না সারে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে টাইফয়েড বা প্যারাটাইফয়েড বা ডেঙ্গু জ্বর কি না। জ্বরের সময় ঠাণ্ডা পানিতে মাথা ধুলে ভালো লাগবে এবং সাথে সাথে ভেজা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। তখন জ্বর কমে আসবে, খুসখুসে কাশি হলে কফ সিরাপ খেতে হবে। অ্যান্টি অ্যালার্জি ওষুধ খেলে ভালো হয়। পথ্য হিসেবে আনারস, কাগজী লেবু, কালিজিরা ভর্তা দিয়ে গরম ভাত খুব উপকারী।
-অধ্যাপিকা ডা: সুলতানা জাহান

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ