হ্যান্ডশেক মামলার বার্তা
মানুষ শুধু প্রাণীর নাম নয়। মানুষ চিন্তা করে, মানুষের আদর্শ আছে, দর্শন আছে। এ কারণে মানুষের মধ্যে যেমন স্বকীয়তা আছে, তেমনি আছে বৈচিত্র্যও। তবে বর্তমান ভোগবাদী সমাজে মানুষের কাছে আদর্শের চাইতে ভোগ্যপণ্যের গুরুত্ব অধিক। ফলে পৃথিবীতে এখন ন্যায় ও নীতির বদলে লোভ-লালসা, চাতুর্থ ও নিজেকে বিকিয়ে দেয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পৃথিবী এখন শান্তি, সৌহার্দ ও মানবিক বোধের বদলে অশান্তি, অস্থিরতা ও আগ্রাসনের এক অনাকাংখিত গ্রহে পরিণত হয়েছে। এখন বৈচিত্র্যের ঐক্যই শুধু অনুপস্থিত নয়, অনুপস্থিত স্বকীয়তাও।
এমন বাতাবরণে মাঝে মাঝে ব্যতিক্রমী ঘটনাও লক্ষ্য করা যায়। ১৭ আগস্ট এমন একটি ঘটনার খবর পরিবেশন করেছে বিবিসি। খবরে বলা হয়, ‘হ্যান্ডশেক’ মামলায় জিতে গেছেন সুইডেনে বসবাসকারী মুসলিম তরুণী ফারাহ আলহাজেহ। চলতি বছর ফারাহ একটি সুইডিশ প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করেন। চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য কর্তৃপক্ষ তাকে ডাকলে তিনি ধর্মীয় কারণে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সাথে হ্যান্ডশেক করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর বদলে তিনি বুকে হাত রেখে তাদের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। কিন্তু হ্যান্ডশেক না করায় কর্তৃপক্ষ তার ইন্টারভিউ বাতিল ঘোষণা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফারাহ দেশটির শ্রম আদালতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালত ফারাহ’র পক্ষে রায় প্রদান করে। মামলার রায়ে আদালত জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ফারাহ’র প্রতি ধর্মীয় বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে।
অপরাধের কারণে আদালত অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে ৪ হাজার ৩৫০ ডলার জরিমানা ধার্য করে। এদিকে রায় প্রসঙ্গে বাদী ফারাহ জানান, তিনি অর্থ প্রাপ্তির জন্য অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ দায়েরের কারণ, আমি কোনো ভুল কাজ করিনি এবং অন্যায়ের শিকার হয়েছি। আমি আশা করি, সুবিচারের ফলে এরকম পরিস্থিতির শিকার অন্যান্য নারীরা আশাবাদী হতে পারবে।
আলোচ্য হ্যান্ডশেক মামলায় মুসলিম তরুণী ফারাহ তার ধর্মবিশ্বাসজনিত স্বকীয় চেতনাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে বিজয়ী হয়েছেন। অথচ বর্তমান ভোগবাদী সভ্যতায় মানুষ কত সহজেই না আদর্শকে, স্বকীয়তাকে সামান্য স্বার্থে বিসর্জন দিচ্ছে। ফারাহ’র উদাহরণে শেখার বিষয় রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা শিক্ষা গ্রহণ করবো কী?