শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মনিটরিং না থাকায় চালের বাজারে অস্থিরতা অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার : নিত্য পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। চালের বাজারে অস্থিরতা কমছেনা। বাড়তি পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে সবজির দাম। ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। মাস খানেক আগে কেজি প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা বেশি থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহ থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে চালের দাম। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যাবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। ভোক্তার অভিযোগ বাজার মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মত পণ্যের দাম নির্ধারণ করছে। এতে করে ক্রয় ক্ষমতা হারাচ্ছে ভোক্তা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, বাবুবাজার, যাত্রাবাড়ি, কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর ও শান্তিনগরসহ কয়েকটি বাজার থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ পুনর্বহাল করায় খুচরা বাজারে আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করে চালের দাম। কিন্তু দেশীয় চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার বেশ কয়েকটি চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২-৩ টাকা।  খুচরা বিক্রেতারা বলছেন আমাদের কিছুই করার নেই। বেশি দামে চাল আনলে আমরা বেশি দামেই বিক্রি করতে বাধ্য।
খুচরা বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৫৮ থেকে ৬২ টাকা বিক্রি হলেও গত সপ্তহে তা বিক্রি হয়েছে ৫৬-৬০ টাকায়।  মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৩-৬৫ টাকায়। পাইজাম ৪৮ থেকে ৫২ টাকা ও মোটা স্বর্ণা চাল ৪০ থেকে ৪৪ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। তবে সব ধরনের মোটা চালের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
সরকারে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাল এবার উৎপাদন হয়েছে এ বছর। এতে করে কৃষকের লোকসান ঠেকাতেই তারা চাল আমদানির ওপর নতুন করে শুল্কারোপ করে। ফলে বাজারে চালের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকার পর্যন্ত বেড়ে যায়। কোন কারন ছাড়া চালের দাম বাড়লেও এখনও সে বর্ধিত দাম অব্যাহত রয়েছে।  এর পরে বেশ কয়েকটি জাতের চালের দাম বেড়েছে। ভোক্তাদের অভিযোগ সরকার বাজার নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে না। এতে করে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছা মত দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। কিন্তু সরকার কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
এদিকে আজকের (শুক্রবার) বাজারে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, পটল ৪০টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিংগা ৫০ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা , ঢেঁড়স ৪০ টাকা এবং  পেঁপে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, সাদা বয়লার মুরগি ১২০-১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০-১২০ কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে ২৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকা কেজিতে। এছাড়া ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে দেশী জাতের মুরগি।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীতে কাঁচা মরিচ ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সেই মরিচ এখন পাইকারি ৪০ টাকায় নেমে এসেছে।  বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মান ও বাজার ভেদে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি।
শুক্রবার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায় ভালো মানের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ৩৫-৪০ টাকা কেজি। একই মানের কাঁচা মরিচ শান্তিনগর বাজারে ৮০-১০০ টাকা এবং রামপুরা ও খিলগাঁও অঞ্চলে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মরিচের দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে কাঁচা মরিচ ১০০ টাকার উপরে কেজি বিক্রি করেছি। গত সপ্তাহেও মরিচের কেজি ১০০ টাকা ছিল। এখন তা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে এখনও তা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়।
এমন দাম কমার কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী বলেন, এখন মরিচের ভরা মওসুম। এখন না তুললে কিছুদিন পর পেকে যাবে। এ জন্য অধিকাংশ চাষি একসঙ্গে মরিচ তুলছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে গেছে।
এদিকে কোরবানির ঈদের প্রভাবে গত সপ্তাহে কমে যাওয়া বয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা।  সাদা বয়লার মুরগি আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি, যা ঈদের আগে ১৫০-১৬০ কেজি দরে বিক্রি হয়।
বয়লার মুরগির মতো অপরিবর্তিত রয়েছে অধিকাংশ সবজির দাম। তবে শিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ১০০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শিমের দাম বেড়ে ১৪০-১৫০ টাকা হয়েছে।
বাজারের আর এক দামি সবজি পাকা টমেটোর দাম কিছুটা কমেছে। বাজার ভেদে ৭০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহে এ সবজিটির কেজি ছিল ১০০-১২০ টাকা। অপরিবর্তিত রয়েছে গাজরের দাম। এ সবজিটি আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি।

ছোট আকারের প্রতিপিস ফুলকপি আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। পাতাকপির দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকালও এ পণ্যটি ২৫-৩০ টাকা পিস বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া গত সপ্তাহের দামে বিক্রি হওয়া সবজির মধ্যে রয়েছে- বেগুন, উস্তা, বরবটি, কাঁকরোল, করলা, পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, ঢেঁড়স, লাউ। বাজার ভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা কেজি। উস্তার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি।
এছাড়া বরবটি ৫০-৬০ টাকা, চিচিংগা, পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, কাঁকরোল ও করলা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি। পেঁপে আগের মতো ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঢেঁড়স পাওয়া যাচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজির মধ্যে।
এদিকে গত সপ্তাহের মতোই দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী বাবুল রহমান বলেন, বাজারে শিমের সরবরাহ কমেছে। এ কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। তাছাড়া বাকি প্রায় সব সবজিই আগের দামে বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরার মুরগি ব্যবসায়ী ময়নুল বলেন, এখনও বেশিরভাগ মানুষের ফ্রিজে কোরবানির গোশত রয়েছে। যে কারণে মুরগির চাহিদা কম। তাই দামও কিছুটা কম। তবে চাহিদা বাড়লে মুরগির দাম আবার বেড়ে যেতে পারে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ