শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সেবায় সরকার নানাভাবে বাধা দিচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সেবা দিতে সরকার নানাভাবে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, দেশনেত্রীকে আগে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিতেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন সিনিয়র অভিজ্ঞ থেরাপিস্ট। পরে তাকে পরিবর্তন করে সরকারদলীয় মনোভাবাপন্ন একজন নতুন অনভিজ্ঞ থেরাপিস্টকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা রহস্যজনক। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ডে রাখা হয়নি। এজন্যই আমরা দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠিত। একইসাথে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেই সরকার ইভিএম কেনার প্রকল্প  অনুমোদন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না মন্তব্য করে রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ হলেও এখনও তার পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি কিংবা সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এতে প্রমাণিত হয়-সরকার বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে কোন গভীর চক্রান্ত চালাচ্ছে। প্রত্যেক বন্দী মানুষ, তাদের অধিকার রয়েছে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেয়া। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান। অথচ তার মানবাধিকারকে হরণ করে তাকে তীব্র কষ্ট দিয়ে তিলে তিলে জীবন বিপন্ন করারই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে সরকার। আমি আবারও বেগম খালেদা জিয়াকে তার পছন্দ অনুযায়ী বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে, বিশেষ করে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সরকারেরর ইভিএম কেনার প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, লুটপাটের জন্য এটা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইভিএম (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) নিয়ে বিশ্বময় অশান্তি ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জনসমাজের নানা স্তরের সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের আপত্তি সত্ত্বেও একনেকে দেড় লাখ ইভিএম(সংগ্রহ প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী।  এই অনুমোদনের বেশ কিছুদিন আগে সরকারের দুইজন কর্মকর্তা এই মেশিন ক্রয় করতে বিদেশ গেছেন।  এ মেশিন কেনার পেছনে দুইটি  উদ্দেশ্য কাজ করছে সরকারের। প্রথমটি ভোটারবিহীন কারচুপি নির্বাচন আর  দ্বিতীয়টি হচ্ছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া, পকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়া।
রিজভী বলেন, হরিলুটের সরকার আওয়ামী জোট সরকার। ব্রীজ, কালভার্ট, সড়ক-মহাসড়ক, উড়াল সেতু নির্মাণে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়বৃদ্ধি করে জনগণের টাকা লোপাট করে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা। অবৈধ সরকার দলীয় লোকদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বানাতে রাষ্ট্রীয় অর্থভান্ডার ডাকাতির সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ভোটারবিহীন সরকার নিজস্ব ভঙ্গিতে একটা অভিনব নির্বাচন করতে চাচ্ছে। নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা হবে, মনোনয়ন পত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহার এমনকি ভোট গ্রহণের দিনও এসে পড়বে, শুধু ভোটকেন্দ্রে ভোটার থাকবে না। আর বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের থাকতে হবে কারাগারে অথবা পলাতক হয়ে। তাই বর্তমান অবৈধ সরকার সব কাজ বাদ দিয়ে এখন একটা কাজই করছে, তাহলো দেশজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণমামলা ও গণগ্রেফতার।
সরকার জনগণকে ত্যাজ্য করে জালিয়াতির মেশিন ইভিএমের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, এই সরকারের নির্বাচন দরকার কিন্তু ভোট দরকার নেই, তাদের গণতন্ত্রের মুখোশ দরকার কিন্তু  বিরোধী দলের দরকার নেই, সরকারের গণমাধ্যম দরকার কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতার দরকার নেই। পুনরায় ক্ষমতা লাভের কাড়াকাড়িতে ব্যস্ত সরকারের কাছে ইভিএম কেনা অত্যন্ত জরুরী এই জন্য যে, এ মেশিনে ভোট গ্রহনের দিন ভোটারদের প্রয়োজন হবে না।
 গ্রেফতার হয়ে ঢাকার গোয়েন্দা দফতরে থাকা দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের কাছে রাতে তার প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র নিতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, মঙ্গলবার রাতে হাবিব উন নবী খান সোহেলকে গ্রেপ্তারের পর  ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হলে কয়েকজন আইনজীবীসহ নেতা-কর্মীরা তাকে সেখানে দেখতে যায়। সেখান থেকে পুলিশ কয়েকজন আইনজীবীসহ বেশকিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকার ও তার আজ্ঞাবহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা হিংস্র, অমানবিক ও হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হতে পারে যে, রাতে সোহলের ওষুধ পর্যন্ত  ভেতরে নিতে দেয়া হয়নি  ঢাকা মহানগর কাফরুল থানা যুব দলের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম লিটনকে সাদা পোশাকে সদস্যরা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানান রিজভী।
মামলা হামলার চিত্র তুলে ধওে রিজভী বলেন, ঢাকা মহানগর, নরসিংদী, পিরোজপুর এবং রাজশাহীসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় মোট ৪টি বানোয়াট ও অসত্য মামলা দেয়া হয়েছে, আসামী করা হয়েছে ৪৩২ জনকে। গ্রেফতার করা হয়েছে হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ দেশব্যাপী ৯৩ জন নেতাকর্মীকে। এখন পান থেকে চুন না খসলেও শুধুমাত্র অজানা ভয়ে সরকারের পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গ্রেফতার করে। আসলে আগামী নির্বাচন নিয়ে নেপথ্যলোকের বার্তাই হচ্ছে একতরফা নির্বাচন। আর সেজন্যই দেশব্যাপী বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ছেঁকে তুলতে বিশাল জাল বিস্তার করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো আতঙ্কের নীরবতার আড়ালে জনগণের সোচ্চার উচ্চারণ সংগঠিত হচ্ছে। আর এই আওয়াজ হিংসা ও গণতন্ত্র বিনাশকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে বিজয় না হওয়া পর্যন্ত চলতেই থাকবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ