বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

স্ট্রোক ও হৃদরোগে করণীয়

জীবনের জন্য হৃৎপিণ্ড যে বড় গুরুদায়িত্ব পালন করে, তা অত্যন্ত জটিল ও সূক্ষ্ম। এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবনের বিভিন্ন সময় হৃৎপিণ্ডকে বিভিন্ন ঝুঁঁকির সম্মুখীন হতে হয় এবং সময়মত হৃৎপিণ্ডের এসব অসুস্থতার প্রতিকার না হলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ যেকোনো সময় মৃত্যুবরণ করতে পারে।
কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা পেশির স্বাভাবিক অবস্থার অবনতি ঘটে বলে দক্ষতার সাথে হৃৎপিণ্ড কার্য সম্পাদন করতে পারে না এবং রক্ত সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটে। শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালন না হওয়ায় সেল বা কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। হৃৎপিণ্ড থেকে সুষ্ঠুভাবে রক্ত সঞ্চালন না হওয়ার ফলে বিপরীতধর্মী চাপের কারণে ফুসফুস রক্তাধিক্যের কারণে পীড়িত হয় এবং কোষগুলোতে ফ্লুইড জমে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় ইডিমা। হৃদস্পন্দন নিয়মিত রাখার উদ্দেশ্যে হৃৎপিণ্ডে বৈদ্যুতিক স্পন্দনের উৎপত্তি এবং সঞ্চালনে অসঙ্গতির কারণে এরিদমিয়ার সৃষ্টি হয়। হৃদস্পন্দনের দীর্ঘস্থায়ী অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে রোগীকে পেসমেকার সংযোজনের পরামর্শ দেয়া হয়। হৃদরোগে মৃত্যুর ৫০ শতাংশ হয়ে থাকে হৎপিণ্ডের শিরা-উপশিরার বিভিন্ন রোগের কারণে। রক্তপ্রবাহের আলোড়ন ও প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টির জন্য শিরার অভ্যন্তর ভাগের কোনো অংশ বিনষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত আরোগ্যের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত অংশের ওপর রক্ত জমাট বেঁধে ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে শিরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত ঢেকে রাখে। বিনষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সুস্থ হয়ে গেলে জমাট রক্ত নিজে থেকেই দ্রবীভূত হয়ে যায়। হৃৎপিণ্ডের শিরা-উপশিরার অভ্যন্তরে ক্ষত বা প্রদাহ হলে রক্তে অবস্থিত প্ল্যাটিলেট, লিপিড বা চর্বি, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (যেসব কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার ১২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি তাপমাত্রায় রান্না বা পোড়ানো হলে কোলেস্টেরল থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বলতে এলডিএলকে বোঝায় না) ও আঁশজাতীয় পদার্থ শিরার নিচের স্তর ইন্টিমাকে আক্রমণ করে ও পুঞ্জীভূত হয়। এতে করে শিরার সঙ্কোচন প্রসারণ ক্ষমতা লোপ পায় এবং শিরা সরু হয়ে যায়। এ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কারণে হৃৎপিণ্ডের কোনো কোনো অংশের কোষপঞ্জিতে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এ অবস্থাকে ইশকিমিয়া বলা হয়। ইশকিমিয়ার কারণে রোগী কোনো কোনো সময় বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করে। একে অ্যানজাইনা বা অ্যানজাইনা পেক্টরিস বলা হয়। উপরোক্ত পরিস্থিতির কারণে শিরা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে মাইওকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বলা হয়। রক্ত জমাট বাঁধার কারণে শিরার রক্তপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তাকে করোনারি থ্রোম্বোসিস বলা হয়। এ অবস্থায় রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় বলে হৃৎপিণ্ডের কোনো কোনো অংশে অক্সিজেন সরবরাহের অভাবে কোষ মরে যায়। তখন জমাটকৃত রক্তপি- দ্রবীভূত করার জন্য ওষুধ প্রয়োগ বা হৃৎপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে আবার অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেলুনিং, স্ট্যান্টিং ও বাইপাস সার্জারির প্রয়োজন হয়।
উচ্চ রক্তচাপের ফলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের রক্ত ধমনি বা শিরা-উপশিরার ধ্বংসের কারণে মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃৎপিণ্ড বা কিডনি ফেল করতে পারে। রক্তচাপ সাধারণত দুই প্রকার। সিস্টোলিক ও ডাইস্টোলিক রক্তচাপ। প্রাপ্তবয়স্কদের সিস্টোলিক ও ডাইস্টোলিক রক্তচাপের স্বাভাবিক সীমা হলো যথাক্রমে ১১০-১৪০ এবং ৭০-৯০ মিলিমিটার মার্কারি। তবে ব্যক্তি, সময়, বয়স বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রক্তচাপের মাত্রায় তারতম্য হতে পারে। এই সীমারেখা অতিক্রম করলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তের শিরা-উপশিরা বিদীর্ণ বা ফেটে যেতে পারে অথবা হৃৎপি- ও কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্ট্রোকে মৃত্যুর হারও কম নয়। উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা বুঝে এবং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন রোগীর শিরা-উপশিরা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কোনো ক্ষতি সাধিত হয়েছে কি না। উচ্চ রক্তচাপের অবনতি ঘটানোর পক্ষে কতগুলো সহায়ক কারণ রয়েছে। যেমনÑ ডায়াবেটিস, অ্যাথেরোমা, রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের অধিক মাত্রা, মনস্তাত্ত্বিক সঙ্কট, রিনল বা বৃক্কজনিত কোনো সমস্যা থাকলে তাও চিকিৎসককে বিবেচনায় নিতে হয়।
অনেকেই স্ট্রোককে হৃদরোগ মনে করে থাকেন। আসলে তা নয়। স্ট্রোক মস্তিষ্কের রোগ। স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কে হঠাৎ করে রক্তপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এ প্রতিবন্ধকতার কারণে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মস্তিষ্কের কোনো অংশের কোষ মরে যায়। মস্তিষ্কের শিরা বা উপশিরার কোনো স্থানে রক্তপি- বা প্লাটিলেট ও ফিব্রিন দ্বারা তৈরি পি- কর্তৃক রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপের কারণে শিরা বা উপশিরা বিদীর্ণ হয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। এ অবস্থায় রোগী বেঁচে গেলেও ঠিকভাবে কথা বলতে অসুবিধা হয়, শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, দৃষ্টিশক্তির অবনতি ঘটে, চলাফেরায় অসুবিধা হয় এবং অনুভূতি বিলুপ্ত হয়।
হৃদরোগ পৃথিবীর প্রধান ঘাতক রোগ। আমেরিকায় হৃদরোগ এক নম্বর প্রাণঘাতী রোগ। ১৯৭৯ সালের দিকে হৃদরোগ প্রতিকারে ওষুধ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব সাধিত হয়। আমেরিকায় বহুল প্রচলিত শীর্ষস্থানীয় ১০০টি ওষুধের তালিকায় ১৯৭৯ সালে ১৯টি ও ১৯৮৬ সালে ২৪টি ওষুধ অন্তর্ভুক্ত হয়। উল্লেখ্য, এ তালিকায় শীর্ষস্থানীয় ১০টি ওষুধের মধ্যে ছয়টিই ছিল হৃদরোগে ব্যবহৃত ওষুধ। একই বছর বিশ্বের মোট ওষুধ বিক্রির ১৮.২ শতাংশ, অর্থাৎ ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ওষুধ ছিল শুধু হৃদরোগের প্রতিকারের নিমিত্তে প্রস্তুত। এই ওষুধ বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ এবং মৃত্যুহার কমাতে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। শুধু ওষুধ নয়, হৃদরোগের কারণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে মানুষের জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এসেছে যা হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ এবং মৃত্যুহার কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
হৃদরোগ প্রতিকারে গত ২০ বছরে বিভিন্ন কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ইসকিমিয়া ও মাইওকার্ডিয়াল ইনফাকশান প্রতিকারে অ্যানজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি বিশ্বজুড়ে সাফল্যজনক চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রোগ হয়ে গেলে সুস্থতা বা জীবন রক্ষার জন্য আমাদের প্রতিকার খুঁজতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কার্যকর হলেও রোগ প্রতিকারের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত চিকিৎসা সবসময় সুফল বয়ে আনে না। তাই প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করাই চিকিৎসাশাস্ত্রের মূল লক্ষ্য। তবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই, রোগ বা রোগের কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই রোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে। আমাদের লাইফস্টাইল এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে হৃদরোগ ও তার কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে আমরা কতটুকু সাফল্য অর্জন করতে পারি। এ বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া যাক।
এক. উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ ও মৃত্যুর অন্যতম কারণ। আপনি কি জানেন, আপনার রক্তের চাপ স্বাভাবিক আছে কি না? রক্তচাপ স্বাভাবিক না হলে কত বেশি? এসব তথ্য না জানলে দেরি না করে জেনে নিন এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে সচেষ্ট হোন। লাইফস্টাইল, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও ব্যায়ামের মাধ্যমেও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যায়।
দুই. আপনি হৃদরোগে ভুগলে ধূমপান পরিহার করুন। ধূমপান রক্তচাপের জন্য ক্ষতিকর। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে সিগারেটের নিকোটিন রক্তের শিরা বা উপশিরার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে এটা জোর দিয়ে বলা যাবে না, শুধু ধূমপান পরিহার করলে রক্তচাপ কমে যাবে বা হৃদরোগ ভালো হয়ে যাবে।
তিন. শরীরের ওজন ঠিক রাখুন। শরীরের মাত্রাতিরিক্ত ওজনের সাথে হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আপনি যদি স্থূলকায় হয়ে থাকেন, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে শরীরের ওজন কমিয়ে আনুন। বাড়তি ওজন কমিয়ে আনার সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসা বাঞ্ছনীয়। শরীরের ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
চার. জৈব শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খাওয়া দরকার। অন্যান্য খাদ্যের মধ্যে থাকতে হবে অর্গানিক ভুসিসমৃদ্ধ শস্য, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের শস্যের বীচি ও তেল। খাসি ও গরুর গোশত যত কম খাওয়া যায়, তত ভালো। একদম বাদ দিতে পারলে আরো ভালো। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ ও মুরগির গোশত ভালো। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁচা লবণ খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে। অর্গানিক ডিম, দুধ ও দই স্বাস্থ্যকর খাবার। ভিটামিন সি, বিটা কেরোটিন, ভিটামিন ই, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনোল শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎকৃষ্ট উৎস ফলমূল, শাকসবজি ও সবুজ চা। জাঙ্কফুড পরিহার করুন। এসব খাবারে প্রচুর লবণ, চিনি, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটও টাট্টাজিন জাতীয় বিতর্কিত খাদ্যোপকরণ থাকে। জাঙ্কফুডে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও আঁশ কম থাকে। জাঙ্কফুডে প্রচুর চিনি ও চর্বি থাকে বলে এসব খাবার খেলে ওজন বেড়ে যাওয়াসহ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ ক্যান্সারের মতো বহু জটিল প্রাণঘাতী রোগের উৎপত্তি হয়। পরিশোধিত চিনি খাওয়া বন্ধ করে দিন। চিনি হলো সুইট পয়জন। চিনি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। নিয়মিত পরিমিত পনির, মাখন, ডিম, দুধ, দই, লেবুর রস, মধু দিয়ে এক চামচ কালিজিরা, তিন বা চারটি খেজুর, আপেল, বেদানা, কমলা ও অন্যান্য ফলমূল খাবেন। বেশি ভাত বা রুটি খাবেন না। দুটো লাল আটার রুটি বা দু-এক কাপ ভাত যথেষ্ট। রাস্তাঘাটের অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করুন। বেশি করে পানি খাবেন।
পাঁচ. সুস্থ জীবনের জন্য ব্যায়ামের বিকল্প নেই। হাঁটা হলো সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। বাইরে খোলামেলা জায়গায়, নদীর পাড়ে, গাছপালা ঘেরা পার্ক বা ময়দানে হাঁটলে শরীর-মন দু’টিই চাঙা হবে। দূষণমুক্ত বাতাস ও সূর্যের আলোয় হাঁটার চেষ্টা করুন। হাঁটার সময় সঙ্গী-সাথী নিয়ে আলাপ-আলোচনা, খোশগল্প, হাস্যরস, কৌতুক এবং আনন্দ-উল্লাসে অংশ নিন। এতে সারা দিনের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর হবে। ব্যায়াম করলে রাতে ভালো ঘুম হয়। ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। হাঁটা ছাড়াও সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা অথবা জিমনেশিয়ামে ব্যায়াম করা যেতে পারে। কোন ব্যায়াম কার জন্য কতটুকু উপযোগী, এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ছয়. দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করুন। স্ট্রোক ও হৃদরোগ নিয়ে জানার চেষ্টা করুন। তবে সীমা অতিক্রম করবেন না। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং রাতের ঘুম যেন নিরুপদ্রব হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। রাতে ভালো ঘুম না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ঘুমের ওষুধ খাবেন। কঠোর ব্যায়াম এবং দুঃস্বপ্ন দেখার কারণে উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত অ্যাড্রেনালিন নামে একপ্রকার রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাবে হৃদস্পন্দন অত্যন্ত বেড়ে যায়। হৃদরোগ বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে এই মাত্রাতিরিক্ত হৃদস্পন্দন তথা অতিমাত্রায় রক্ত প্রবাহের ফলে স্ট্রোক বা হার্টফেল করে রোগী তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারে। মনে রাখবেন, জ্বর, উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, চা, কফি বা অ্যালকোহল পান এবং কোনো কোনো ওষুধ সেবনে হৃদস্পন্দন বাড়তে পারে।
সৎ জীবনযাপন করুন। সৎ জীবনযাপনের সাথে সুস্থ জীবনের সম্পর্ক গভীর। দাম্পত্যজীবন সুখের হতে হবে। দাম্পত্যজীবনে যারা সুখী নয়, তারা সুস্থ নয়। হৃদরোগ হলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি এর প্রতিকারে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। স্ট্রোক ও হৃদরোগ কোনোটিই একক রোগ নয়। অনেক জটিল কারণে এসবের উৎপত্তি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্রমোন্নতি ও বিকাশের ফলে রোগ নির্ণয় ও এর প্রতিকার এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। তারপরও স্ট্রোক ও হৃদরোগীদের সবসময় নিয়মতান্ত্রিক ও সতর্কতামূলক জীবনযাপন বাঞ্ছনীয়।
-ড. মুনীর উদ্দিন আহমদ
অধ্যাপক, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ