বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রাজধানীর মার্কেটে শীতের হাওয়া বিক্রি হচ্ছে কাপড়চোপড়

মুহাম্মদ নূরে আলম : পড়ন্ত বিকেলে হেমন্তের শীতল হওয়া। সারারাত যেমন তেমন, ভোরে কাঁথা টেনে গায়ে জড়ানো। প্রকৃতি বলছে, এই তো শীত এলো। শীতের এই আগমন বার্তা পেয়ে রাজধানীর মার্কেটগুলোতে শীতের কাপড় নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। শীত পড়তে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকায়ও। রাজধানী ঢাকায় এখনও হালকা হলেও ঢাকার আশপাশের এলাকাসহ গ্রামাঞ্চলে শীতের ছোঁয়া ভালোই লাগছে। এরইমধ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে রাজধানীর ফুটপাতের পোশাক বিক্রির দোকানগুলো। তবে তেমন চাপ দেখা যায়নি ব্র্যান্ডের দোকান বা শপিং মলগুলোতে।
গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার রাজধানীর বেশ কিছু বিপণি বিতান ও মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। নিউমার্কেট, চাঁদনি চক, ইস্টার্ন মল্লিকা, নূরজাহান মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স, গুলিস্তান ও মিরপুর ১০ নম্বরের বিভিন্ন দোকানে গত এক সপ্তাহ থেকে শীতের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, শীত না পড়লেও, বেশ কয়েকজন ক্রেতা আগাম সেরে নিচ্ছেন শীতের কেনা-কাটা। অনেকেই বেশি শীত পড়লে কাপড়ের দাম বাড়ে বলে আগেভাগেই ঝামেলা শেষ করছেন। এদিকে, মার্কেটগুলোতেও বিভিন্ন বয়সী ক্রেতাদের জন্য ফুল হাতা গেঞ্জি, টুপি, পাতলা সোয়েটার, ট্রাউজারসহ হালকা শীতের কাপড়ের বেশি পাওয়া যাচ্ছে। দেখা যায়, মার্কেটগুলোতে উঠেছে জ্যাকেট, সোয়েটার, হাফ হাতা সোয়েটার, কড ও গ্যাবার্ডিনের কাপড়ের চীনা ও দেশি ব্লেজার, হুডি, কাশ্মীরি শাল, ফুলহাতা গেঞ্জিসহ বৈচিত্র্যময় গরম কাপড়।
নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে সোয়েটার কিনতে দাম পড়বে ২শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত। দেশী ব্লেজার ৫শ থেকে ৭শ টাকা। চীনা ব্লেজার ৫শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত। মোটা জ্যাকেট কিনতে দাম পড়বে ৫শ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। শাল ৩শ টাকা থেকে তিন হাজার পর্যন্ত। ফুলহাতা গেঞ্জি ২শ টাকা থেকে ৫শ টাকার মধ্যে পাবেন। মার্কেটগুলোতে শিশুদের জন্য নানা ধরনের বাহারি ডিজাইনের শীতের কাপড় ও টুপি পাওয়া যাচ্ছে। শিশুদের সোয়েটার পাবেন ২শ টাকা থেকে এক হাজারের মধ্যে। এছাড়া হুড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৪শ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। বিভিন্ন ডিজাইনের টুপি ৬০ থেকে ৩শ টাকার মধ্যে মিলবে। ধানমন্ডির নূরজাহান মার্কেটের বিল্লাল গার্মেন্টসের বিক্রেতা বিল্লাল হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ ধরে মার্কেটে শীতে কাপড় নামছে। ক্রেতা তেমন নাই। পনের দিন পর শীতের কাপড়ের মার্কেট জমবে। তবে আমরা এরই মধ্যে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে গরম কাপড়ের মজুদ করে রাখছি।
মিরপুর থেকে নিউমার্কেটে কাপড় কিনতে এসেছেন লীনা জামান। তিনি বলেন, অন্য শপিং করার জন্য মার্কেটে এসেছি। দেখি, শীতের কাপড়ও উঠেছে। ভাবলাম কিনতে তো হবেই তাই বাচ্চাদের জন্য টুপি ও হালকা শীতের কাপড় কিনছি।
ঢাকা শহরে শীতের প্রকোপ কম হলেও, শীতের পোশাক কেনার ক্ষেত্রে রাজধানীবাসীর মধ্যে একটি আমেজ লক্ষ্য করা যায়। জুন্নুন ফ্যাশন কালেকশনের বিক্রেতা শাহাজাহান মিয়া বলেন, ঢাকায় অন্য জেলাগুলোর থেকে কম শীত পড়লেও, ঢাকাবাসী শীতের কাপড় বেশি কিনে। এখন শীতের পোশাক অনেকটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন ডিজাইনের শীতের পোশাক কিনতে পছন্দ করেন বলে জানান তিনি।
ফুটপাতে জমে উঠেছে শীতের পোশাক বিক্রি: রাজধানীর মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান, জিপিও-পল্টন এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, নানা ধরনের শীতের কাপড় উঠেছে সেখানে। বিক্রিও হচ্ছে মোটামোটি। ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় এখানে জনসাধারণের আগ্রহও ভালো। প্রয়োজনীয় পোশাক বেশ সহজেই কিনছেন ক্রেতারা। এসব দোকানে বিভিন্ন দামের ফুলহাতা শার্ট- টি-শার্ট, ট্রাউজার, নারীদের মোটা কাপড়ের টপস আর বিভিন্ন ডিজাইনের কার্ডিগান বা পশমী জামা পাওয়া যাচ্ছে। হাতা কাটা সোয়েটার, লং জ্যাকেট, শাল, মাফলার, উলের মোটা কাপড়, শর্ট ও লং ব্লেজার, জ্যাকেট আর ব্লেজারের মিশ্রণে তৈরি নতুন ধরনের শীতের পোশাকও পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে আছে কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে শীতে ব্যবহার উপযোগী জুতা, মোজা ও বাহারি ডিজাইনের কম্বল ইত্যাদি।
ব্র্যান্ডের দোকান বা শপিং মলে গলাকাটা দামের ভয়ে যেতে চান না মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তের অনেকেই। তাদের পছন্দ ফুটপাতের এই বাজার। এছাড়া অফিসের কাজের ফাঁকে কেনাকাটা, কাজের জন্য ঢাকায় এসে ফেরার সময় কেনাকাটার এমন সব মানুষদেরও হাতের নাগালের এই দোকানগুলোই পছন্দ। এজন্য জমে উঠেছে ফুটপাতের এসব বাজার। চাঁদপুর থেকে ঢাকায় বিদেশ যাওয়ার টিকেট করতে এসেছেন মিরাজ (৩৬)। যাওয়ার সময় মা, স্ত্রী, সন্তান ও নিজের জন্য করে নিলেন শীতের কেনাকাটা। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামে কনকনে শীত পড়েছে। সেজন্য তিনি শীতের কেনাকাটা করছেন। ফুটপাতের এই বাজার অনেকটা সহজ ও সুবিধাজনক বলে এখানেই সেরে নিচ্ছেন বাজার, জানান মিরাজ। তিনি বলেন, মার্কেটে গেলে দরদাম নিয়ে ঝামেলা হয়। বেশির ভাগ সময় আমাদের মতো দাম না জানা লোকেরা ঠকে যান। এজন্য ফুটপাত থেকেই কিনছেন। এখানে দেখতে সুবিধা, চোখের সামনে খোলা-মেলাভাবে বিক্রি হয়। আবার দামও কম। বায়তুল মোকাররমের সামনের সোয়েটার বিক্রেতা আবুল হোসেন জানান, শীত আসায় ভালো বেচা-বিক্রি শুরু হয়েছে। দিন যত যাবে বিক্রিও বাড়বে। দামের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে ৫০০ থেকে তিন হাজার দামের পর্যন্ত সোয়েটার আছে। আমাদের এখানে দাম বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। অনেক বিক্রেতা। সবাই ডেকে ডেকে একদামে বিক্রি করছেন। কাস্টমার ভেদে তারা ৫০-১০০ বেশি রাখেন বলেও জানান তিনি। মোটা গেঞ্জি (টি-শার্ট) বিক্রেতা কালাম বলেন, বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। দাম কমই। কারণ এগুলোর দাম সবাই জানে, ১৫০-২০০ টাকা। শুধুমাত্র কালার পছন্দ করে নিলেই হলো। তবে, ঢাকায় শীত কম পড়ায় তেমন জমেনি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রোম বা শপিংমলগুলো। সেখানে স্বাভাবিক কেনা-বেচা চলছে।  ওয়ারীর ব্র্যান্ডশপ আড়ংয়ের বিক্রয় কর্মকর্তা কামাল আহমেদ জানান, আমাদের এখানে শীতের কাপড়ের কাস্টমার তেমন নেই। এখনও শীতের কাপড় বিক্রি সেভাবে শুরুই হয়নি। যাদের দেখছেন, তারা নিয়মিত ক্রেতা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে তাদের শীতের কাপড়ের চাহিদা বাড়তে পারে বলেও জানান কামাল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ