কবিতা
আনন্দ সংবাদ
নয়ন আহমেদ
বেরিয়ে এলো সে ডিমের কুসুম থেকে;
চিঁউ চিঁউ ধ্বনি তুলে
তুলতুলে পাখনা মেলে
পা ফেলে ফেলে
সম্প্রচার করে দিলো অস্তিত্ব, আমিত্বের স্বর্ণকণাগুলো।
একটা মুরগিছানা এইভাবে লেখে আত্মজীবনী।
এভাবেও আমরা ভূগোল পরিচয় জানতে পারি।
আনন্দ সংবাদ ভেবে জানিয়ে দিচ্ছি এই প্রাণজ ইতিহাস।
একটি উচ্চমাধ্যমিক উচ্ছ্বাসে বলি, জিন্দাবাদ।
লালবাগ কেল্লা
নোমান সাদিক
লোহার বাম্পারে লেগে প্রতিদিন পলেস্তরা খসে
মানুষ জানে না কবে এ নগর গড়েছি কারা
বাজারের উর্ধ্বগতি টিকিট মিলছে তবু দশে
জুয়ারীর দখলে ছাদ, নেই রাতের পাহারা
দক্ষ ব্যবসায়ী ভাবে- ভেঙেচুরে মিনিসিটি হলে
বিপুল রাজস্ব আসে, পড়ে আছে সস্তা আবেগে
আমার জানালা দিয়ে আমি তাকে চোখ ভরে দেখি
সময় উল্টো ঘুরে ইতিহাস যদি উঠতো জেগে
কি অবাক দেখি জেগে উঠছে মুঘলের ফুলবাগ
নষ্ট ফোয়রাগুলো আগেকার উচ্ছল গতীতে
সকালের নহবত, মাঝরাতে সঙ্গীতের রাগ
রাশটানে গাড়োয়ান, ঘোড়া থামে অপূর্ব ভঙ্গিতে
নামছেন শায়েস্তা খাঁ, বুড়িগঙ্গা সচ্ছ-ধারায়
কারা যেন ইতিহাস সোনার কালিতে লিখে যায়।
কবিতার ঘোর
শাহিদ উল ইসলাম
ঘোরে ঘোরে কেটে যায় দিন মাস বছর
ঘোর কাটে না!
কবিতা তোমার পথেই চেয়ে থাকি
অথচ তুমি আসো না!
তোমার অপেক্ষায় কাল কেটে যায়
যুগ ঢুকে পড়ে যুগের অন্তরে
ঘুণ ধরে দেহে; কবিতা তাও
ফেলে না নোঙ্গর মন মন্দিরে।
তোমাকে স্বাগত জানাতে
শূককীট যত মূককীট হয়ে
রাঙ্গায় তার ডানা ;
কলি'রা সব ফুল হয়ে
সৌরভ ছড়ায়
শুনে না কারো মানা।
তোমার অপেক্ষায় কবি পঙক্তি সাজায়
শব্দে শব্দে গাঁথে মালা
তোমার অনলে পুড়ে কবি ছাই হয়
মিটে না তথাপিও জ্বালা।
কবিতা তুমি ভুল করে হলেও
একবার দাও দেখা
ঘোর কেটে যাক দোর খুলে যাক
পাক ফিরে প্রাণ লেখা।
প্রার্থনা
রাজু ইসলাম
দু’হাতে জড়ায়ে ধরে প্রেমের অঞ্জলি
হাঁটু গেড়ে বসেছি তোমার সম্মুখে
যে ভুলে ভুলেছি তোমার প্রতিদানের অর্ঘ্য
নিমেষে তা হারায়ে ব্যাকুল এ হৃদয়
জানি না কখন কবে হারিয়েছি তোমার-
ফুলেল অনুকম্পা, আর তোমার হৃদ্যতা
হাজারো ব্যথার প্রতিশোধ ভুলে
বুকে তুলেছিলে এ অধমেরে
জানি না আজ কোন ভুলের মাশুলে
পুড়ি বিষম ব্যথার ন্যায় চিন্তার অনলে
নতজানু এ হৃদয়ে যত ছিল অর্চনা
দয়ার হস্তে বুলাতে পিষ্ট; দিতে অনন্ত সরোবর
আজ যত কাঁদি, যত চাহি কৃপা তোমার
কঠোর চিত্তে লহ মুখ ফিরায়ে তোমার
প্রতি পদে প্রতি দমে তাই নিগ্রহ এতো!
তবু দুয়ারে তোমার ভিখ মাঁগি শত সহস্রবার
দিও না ফিরায়ে এ হাত; অনুসূচনার মুখখানি
ক্ষমা করো এই গোলামেরে ওহে পরোয়ারদেগার।
শকুনে বিলাস
তাসনীম মাহমুদ
লাশের গন্ধ পাওনা বারুদে? শকুনের যা বিলাস!
শুকে দেখো,
প্রতিটি বারুদের উড়ে যাওয়া ধোঁয়ায় মিশে থাকবে
আমার নিঃশ্বাস; আমার স্বদেশ।...
প্রতিটি নিঃশ্বাসে থাকবে একেকটি বিপ্লব!
একেকটি বিপ্লবে থাকবে অসংখ্য লাশের মিছিল!
মিছিলের কণ্ঠে যে স্বপ্নভোরের শ্লোগান
সেখানে তোমার মুষ্ঠিবদ্ধ দৃঢ় হাতখানি কোথায়?
মুঠোয় মুঠোয় ফিরুক তোমার-আমার কফিন
লালসালাম; লালকাফন; তারপর সবুজ জমিন।...
শপথ করে বলছি বন্ধু, যদি তোমার ঘুম ভাঙ্গে
শকুনি ঠোঁট খুবলে খেয়ে কর্পূর শরীর; উদারময়ে ক্লান্ত হবে।
একে একে ইচ্ছার নখর তুলে পালাবে
দূর ইতিহাসের নগ্ন ডাস্টবিনে।
নীল দহন
শাহীন আরা আনওয়ারী
সাগরের নীল জল
বেদনায় টলমল।
সাদা ফেনায় রক্ত ঝরে
তবুও মুক্তো বোনে।
দিনরাতি ঝলমল।
হৃদয় গহীনে কত যে উত্তাল সাগর
সময় অসময়ে আছড়ে পড়ে ঢেউ তার।
খবর কে রাখে তার।
প্রেমিকা বাতাসের হাতে হাত অবিচল।
আকাশ রঙের জন্য পাতে বুক
সকাল বিকেল
চোখখানা টলমল
সাগরের এত রূপ
তবুও হাজার চাপ
ফসিলের তলে।
হীরক হয়ে জ্বলে।
দেখে না দহন কেউ।
গভীরে আরেক মহাদেশ।
দেখতে পেলেই প্রেম হবে শেষ।
যদি পাই তোমার ভালোবাসা
সাকী মাহবুব
যদি এই বুকের কেবিনে কারো নাম লিখতে হয়
তবে তোমার নামই লিখব
যদি কোন দিন কারো জন্য কাঁদতে হয়
তবে তোমার জন্যই কাঁদব
যদি মনের ক্যানভাসে কারো ছবি আকঁতে হয়
তবে তোমার ছবিই আঁকব
যদি কারো জন্য নির্ঘুম রাত জাগতে হয়
তবে তোমার জন্যই জাগব
হে রাসূল (সা:) আমি তোমার জন্য
সবকিছু করতেই সদা প্রস্তুত
যদি পাই তোমার একবিন্দু ভালোবাসা।