শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দল বেঁধে ভোট কেন্দ্রে যাবেন ধানের শীষের বিজয় হবেই হবে

গতকাল বুধবার কুমিল্লার চান্দিনায় সুয়াগাজী ফুলতলী মাঠে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

# জনগণ এবার কানো ষড়যন্ত্রই কাজে আসতে দেবেনা -মির্জা ফখরুল
# ৩০ ডিসেম্বর পুলিশ আর অস্ত্র দিয়ে জয় পাওয়া যাবে না -কাদের সিদ্দিকী
মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, কুমিল্লা থেকে: ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের লক্ষ্যে ৩০ ডিসেম্বর দল বেঁধে ভোট কেন্দ্রে যাবার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। তারা বলেছেন, দল বেঁধে ভোট কেন্দ্রে যাবেন, ভোট দেবেন এবং ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র ছাড়বেন না। ভোট কেন্দ্র পাহারা দেবেন। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এবার সব ষড়যন্ত্রকেই শেষ করে দেবে। কোনো প্রকার হুমকি ধামকি এমনকি গণগ্রেফতার করেও সরকার পতন ঠেকানা যাবে না। গতকাল বুধবার কুমিল্লার দুটি পথসভা এবং একটি জনসভায় তারা এসব কথা বলেন।
লাঠি-বৈঠা, গ্রেফতার এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না মন্তব্য করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এবার ভয়ভীতি, হামলা-মামলা এবং গ্রেফতার করে কোনো লাভ হবে না। এবার দেশের জনগণ গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার এবং তাদের অধিকার ফিরে পেতে ধানের শীষকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের একটা ভোট বেগম খালেদা জিয়া এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে। ৩০ ডিসেম্বর দল বেঁধে আপনারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন। নির্ভয়ে ভোট দিবেন। ভোট কেন্দ্র পাহারা দিবেন। ভোট শেষে ফলাফল নিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করবেন। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। নিজেদের অধিকার রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুন্দর দেশ উপহার দিতে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এসময় তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে তার সরকার কি করবে সেগুলোও তুলে ধরেন।
ঐক্যফ্রন্টের আরেক শীর্ষ নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তির দিন। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী আরেকবার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে মানুষ খুন করছে। এদের কাছে কোনো দয়ামায়া নেই। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের হানাদার বাহিনী কিছু করতে পারেনি। এই সরকারও কিছু করতে পারবে না। ৩০ ডিসেম্বর এই সরকার কিছুই করতে পারবে না। তিনি বলেন, ভয় পাবেন না। পুলিশ আর অস্ত্র দিয়ে জয় পাওয়া যাবে না। জয় ধানের শীর্ষ প্রতীকেরই হবে ইনশাআল্লাহ।
পথসভা: পূর্বঘোষিক কুমিল্লার পথসভা ও জনসভায় যোগ দিতে গতকাল সকাল ১০টায় গুলশান চেয়ারপার্সনের কার্যালয় থেকে সড়ক পথে রওয়ানা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক শীর্ষ নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। তাদের সাথে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা গাড়িবহরে যোগ দেন।
চান্দিনার আগে দাউদকান্দি বাসস্ট্যান্ডের সামনে কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনের দলের প্রার্থী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতা-কর্মীরা সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে শ্লোগান দেয়। নেতা-কর্মীদের হাতে ধানের ছড়া ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিলো। খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে ব্যারিস্টার খন্দকার মারুফ হোসেন বিএনপি মহাসচিবকে অভ্যর্থনা জানান। সেখানে হ্যান্ড মাইকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকলকে ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে ভোট দেবার আহবান জানান। তিনি বলেণ, এবারের ভোট হচ্ছে গণতন্ত্র এবং বেগম জিয়াকে মুক্ত করার নির্বাচন। এই নির্বাচনে সবাইকে ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সকাল সকাল কেন্দ্রে যেতে হবে। তাহলেই আমরা বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে পারবো। একইসাথে আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে আনতে পারবো।
এরপর দুপুরে কুমিল্লার চান্দিনায় এক নির্বাচনী সভায় বিএনপি মহাসচিব প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। এসময় স্থানীয় নেতা-কর্মী সমর্থকদের প্রতি তিনি বলেন, ভোটের দিন দল  বেঁধে কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন। বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আপনাদের একটি ভোটে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আসবে, দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। ৩০ ডিসেম্বর আপনারা দল বেঁধে ভোট কেন্দ্রে যাবেন, ভোট দেবেন এবং ভোট গণণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র ছাড়বেন না। ভোট কেন্দ্র পাহারা দেবেন।
কুমিল্লা-৭ আসনে ( চান্দিনা) ধানের শীষের প্রার্থী রেদোয়ান আহমদকে ভোট দেবার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহবান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেই কমিশনের একজন কমিশনার বলেছেন নির্বাচনে লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড নাই। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন না না সব ঠিক আছে। এ সময়ে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ শ্লোগান দিতে থাকে। নেতা-কর্মীদের সাথে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ভুয়া, সরকার ভুয়া। তারা এক সাথে মিলে গণতন্ত্রকে জবাই করছে। আমরা বলতে চাই, জনগন তা মেনে নেবে না।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, এ নির্বাচনে কোনো নিরপেক্ষতা নেই। এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হতে যাচ্ছে। দেশের মানুষ এসব সব বুঝে। আমি বলতে চাই, জনগনের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠায় সরকারের সব ষড়যন্ত্র ও কলাকৌশল ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সরকার ‘অন্যায়ভাবে’ কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগও করেন বিএনপি মহাসচিব।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন, নারী শিক্ষা, কৃষিখাত, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবাসহ বিএনপির ইশতেহারে নানা বিষয় তুলে ধরে বিএনপি তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিময় ও সৌহার্দপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি চাই না। শুধু তাই নয়, আমরা ক্ষমতায় গেলে সকল মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করবো। হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টাণসহ সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের কথা বলেছি। আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ মুসলমান তারা দাঁড়ি রাখেন। এখন দাঁড়ি রাখলে জঙ্গি বলা হয়। দাঁড়ি রাখার আমাদের কৃষ্টি ও ঐহিত্য।
চান্দিনা ড. রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে এই নির্বাচনী সভা হয়। সভার শেষ দিকে কুমিল্লা-৭ আসনে রেদোয়ান আহমেদ ও কুমিল্লা-৩ আসনে কাজী মুজিবুল হকের হাতে ধানের শীষ তুলে দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এই নির্বাচন দেশবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূণ। এই নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবেনা। এই নির্বাচনেই প্র্রমাণ হবে আমরা কি গণতান্ত্রিক দেশে বাস করবো নাকি স্বৈরচারের অধীনে থাকবো। এই নির্বাচনই ঠিক করবে আমাদের স্বাধীনতা থাকবে কি থাকবে না। আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা থাকবে কিনা সেটি এই নির্বাচনে প্রমাণ হবে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পর এই সরকার যেভাবে জোর করে আবারো ক্ষমতা ধরে রেখেছে এবারো সেটি তারা করতে চায়। কিন্তু আপনারা কি সেটি হতে দিবেন? তিনি বলেন, এই সরকার আমাদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এরা স্বাধীনতার পর যত অর্জন সব কিছুই শেষ করে দিয়েছে। এরা শুধু ক্ষমতায় থাকতে পুলিশ ও প্রশাসনকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করছে। এবারের নির্বাচনে আপনারা এসবের বিুরদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
তিনি বলেন, এরমধ্যে এটা স্পষ্ট যে এই নির্বাচন একটা প্রহসনে পরিণত হতে যােিচ্ছ। কোথাও কোনো নিরপেক্ষতা নেই। কিন্তু এবার জনগণকে আর বোকা বানানো যাবেনা। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবার সব ষড়যন্ত্রকেই শেষ করে দেবে।
সব ধর্মের মানুষের প্রতি সহানুভূতি সমান উল্লেখ তিনি বিএনেপি মহাসচিব বলেন, ৯৫ শতাংশ মুসলমানের দেশে ধর্মীয় অণুভূতিতে আঘাত সহ্য করা হবেনা। দাড়ি টুপি দেখলেই বলা জঙ্গি। এটা ঠিক নয়। এটা আমাদের ধমীয় কৃষ্টি কালচার।
সুয়াগাজির জনসভা: চান্দিনার পথ সভা শেষে কুমিল্লা সুয়াগাজী আসার পথে মিয়াবাজারের সড়কে কুমিল্লার মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর নেতৃত্বে জেলা নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা বিএনপি মহাসচিবকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানায়। কুমিল্লা-১০ আসনের প্রবেশ পথে মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা সহকারে মির্জা ফখরুলের গাড়ি নিয়ে আসে সোয়াগাজীর চৌয়ারায় মনিরুল হক চৌধুরীর বাসায়। সেখান দুপুরে খাবার খেয়ে নির্বাচনী সভায় আসেন। সোয়াগাজীর চৌয়ারায় রাস্তার দুই পাশে মনিরুল হক চৌধুরীর ছবি সম্বলিত পোস্টার দেখা গেছে। এরকম পোস্টার চান্দিনায় ধানের শীষের প্রার্থী রেদোয়ান আহমেদের নির্বাচনী এলাকা দেখা গেছে।
বিকেলে কুমিল্লার সুয়াগাজি পুরাতন হেলিপ্যাড মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। এসময় কুমিল্লা ১০ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষে ভোট চাইতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব একরকম আবেগ প্রবণ হয়ে কাঁদলেন। মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌসকে পাশে রেখে এরকম পরিস্থিতি পুরো মাঠের নেতা-কর্মীদের অনেকে কাঁদতে দেখা যায়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই যে আমার মেয়ে শাম্মী। এতো কথা বলেছে কার জন্যে? তার তো আজকে জনসভায় কথা বলার কথা নয়। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা তার গবেষণা করার কথা, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর কথা। বাবার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছে। আমি আজকে আপনাদের সকলের কাছে একটা করে ভোট ভিক্ষা চাইব। আমার হৃদয়ের বন্ধু মনিরুল হক চৌধুরী মুক্তির জন্য একটা ভোট ভিক্ষা চাচ্ছি, আমি একটা ভোট ভিক্ষা চাচ্ছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য, আমি ভোট চাচ্ছি কারাবন্দি নেতা গফুর ভুঁইয়া ও মোবাশ্বের আলী ভুঁইয়ার মুক্তির জন্য।
কান্নাসজল কন্ঠে তিনি বলেন, আপনাদের যে ভাইরা এখানে সামনে যে ছোট ছোট ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে অনেকে ঢাকায় রিকসা চালায়। এদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা পালিয়ে থাকে, ছেলেরা হকারি করে। এটা কী আমাদের স্বাধীনতার আশা-আকাংখা, এটা কী স্বপ্ন। আমাদের স্বাধীনতার সমস্ত স্বপ্নকে চূরমান করে খান খান করে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ।
কুমিল্লা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিকল্পনা মন্ত্রী লোটাস কামালের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হুমকি দিয়ে বলে এখানে (কুমিল্লা-১০) ২৭ তারিখ থেকে নাঙ্গলকোর্টে আর কোনো বিএনপি থাকবে না। আমি বলি আপনি কে? আপনি কি জমিদার? আপনি কী রাজা? এই কথা বলার আপনি কে? এই মাটি আমাদের, এই দেশ আমাদের। এখানে সবাই থাকব। ভোট দেবো ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষে ভোট দিয়ে মনিরুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করে আপনাকে এখান থেকে বিদায় করবো।
তিনি বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছি এই আওয়ামী লীগকে সরিয়ে দেবো। আমরা এদেশে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন আজকে তারা এক হয়েছেন। আজকে বুঝতে হবে,জানতে হবে এখানে ধানের শীষকে জয়ী করতে না পারি তাহলে মনিরুল হক চৌধুরী বের হবেন না, গফুর ভুঁইয়া বের হবেন না, মোবাশ্বের আলী ভুঁইয়া বের হবেন না, হাজারো নেতা-কর্মী যাদের মিথ্যা মামলায় জেলে রেখে তারা কেউ বের হবেন না। সবচেয়ে বড় আমাদের গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। ফিরিয়ে আনতে পারবো না আমাদের নেতা তারেক রহমানকে। সেজন্য জোটবদ্ধভাবে সাহস করে আমাদের দাঁড়াতে হবে। যতই বিপদ আসুক, যতই ভয় দেখাক, হুমকি দেখাক, যতই গ্রেপ্তার করা হোক কোনো কিছুর কাছে আমরা মাথানত করবো না। ৩০ তারিখ পর্য্ন্ত জনগনের ঘরে ঘরে যান, ভোট চান।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তির দিন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর মানুষের মুক্তির দিন। একজন এই সময়ে বললেন আপনি বঙ্গবন্ধুকে মনে করে রাজনীতি করেন। বঙ্গবন্ধুর কণ্যা একটা ভোটের জন্য মানুষকে মারে। আপনাদের বলতে চাই, আলেমের ঘরেও জালেম হয়। আপনারা শৃঙ্খলা রাখতে পারেন, উস্কানির মধ্যেও যদি শৃঙ্খলা রাখতে পারেন আমি বিশ্বাস করি একাত্তর সালে যেভাবে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী পারেনি, আগামী ৩০ ডিসেম্বরও এই সরকার পারবে না। দারোগা-পুলিশ দিয়ে যাই হোক নির্বাচনে জয়লাভ করা যায় না। ইনশাল্লাহ আপনারা যদি আপনাদের নেত্রীর মুক্তি চান তাহলে ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষের ভোট দিতে হবে। মনে রাখতে হবে সারাদেশে ধানের শীষের প্রার্থী একই জনই। তিনি হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। মনিরুল হক চৌধুরী, আমাদের মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকীর এরা ধানের প্রতীক মাত্র।
 শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, তারা বলে তারা নাকী স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। আমি বলছি, আমরা স্বাধীনতার পক্ষে নয়, আমরাই স্বাধীনতা। যেখানে জিয়াউর রহমান আছে, যেখানে ড. কামাল হোসেন আছেন, যেখানে আসম আবদুর রব আছেন, যেখানে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আছেন, যেখানে মান্না আছে সেখানে কী পক্ষ লাগে। আমরাই স্বাধীনতা। আপনাদের বলব, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে, রাতে গ্রেপ্তার করছে, অত্যাচার করছে- এদিকে তাকাবেন না। আমার মনে হয়, এ সরকার ও তাদের পুলিশ ভয় পেয়েছে। তাই তারা আক্রমণ করছে। আমরা ভয় পাবো না। ভোটের দিন সকলে ভোট কেন্দ্রে যাবেন।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খান সরকারি দলের পক্ষ অবলম্বন করে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ এনে অবিলম্বে তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানান ফখরুল।
কারাগারে দীর্ঘ ১১ ধরে অনশনে থাকা মনিরুল হক চৌধুরীর প্রতি বিনীত আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, মনিরুল হক চৌধুরী জেলখানায় ১২দিন ধরে অনশন করছেন। কেনো? তাকে তার নেতা-কর্মীদের সাথে দেখা করতে দেয় না। তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, নির্বাচনে কোনো সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। আমি এই মঞ্চ থেকে আহবান জানাতে চাই, আপনি কার কাছে দাবি জানাবেন। এদের তো কানে মোহর দিয়ে দিয়েছে আল্লাহ। এরা কিছু শুনতে পায় না, বধির। এদের বুকের মধ্যে কোনো দয়া-মায়া নেই, মানুষের জন্য মন কাঁদে না।। আমি বলছি এখানে লাখো মানুষ অনুরোধ জানাচ্ছে দয়া করে আপনি অনশন ভঙ্গ করুন, এদেশের মানুষের জন্য আপনি বেঁচে থাকুন।
অশ্রুসজল কন্ঠে মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে ড. চৌধুরী সায়মা বলেন, আমার বাবা মনিরুল হক চৌধুরীকে অন্যায়ভাবে  কারাগারে নেয়া হয়েছে। ৩০ তারিখ এর জবাব দিতে হবে ধানের শীষে ভোট দিয়ে। কুমিল্লার ছেলেরা মার খাচ্ছে তাদের মুক্তির দাবিতে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হউন। ৩০ তারিখ এক সঙ্গে ভোট দিতে প্রস্তুতি নিন। আমি আপনাদের পাশে থাকব।
এই নির্বাচনী সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, মিয়া মোস্তাক আহমেদ, আবদুল আউয়াল খান, শামসুদ্দিন দিদার, মইনুল ইসলাম বাবুল, শহিদুজ্জামান মজুমদার প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সুয়াগাজির জনসভা শেষ করে বিএনপি মহাসচিব দাউদকান্দিতে কুমিল্লা ১ ও ২ আসনের প্রার্থী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাথে তার বাসায় দেখা করেন। সেখানে রাতের খাবার শেষে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন বলে জানান বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ