শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রাজধানীতে বাসচাপায় দুই নারী গার্মেন্ট শ্রমিক নিহত

গতকাল মঙ্গলবার বাস চাপায় শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে মালিবাগে দু’টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্রমিকরা -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর মালিবাগে যাত্রীবাহী বাসচাপায় দুইজন নারী পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন তাদের সহকর্মীরা। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে দু’টি বাসে। এ সময় পুলিশের সাথে বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হলে তৎসন্নিহিত এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে, দোকান-পাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়ে। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হলে যাত্রীসহ পথচারীদের ভাগ্যে দুর্ভোগ নেমে আসে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় শ্রমিকদের ছোড়া ইট-পাটকেলে ডিএমপির মতিঝিল জোনের এডিসি নাজমুন নাহার আহত হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মালিবাগ আবুল হোটেল সংলগ্ন ড্রাগন গার্মেন্টের সামনে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় ওই দুই নারী পোশাক শ্রমিক নিহত হন। মৃত দুইজন হলেন- নাহিদ পারভিন পলি (১৯) ও মোছা. মিম (১৪)। তারা মালিবাগের এমএইচ গার্মেন্টে কাজ করতেন। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর আশপাশের কয়েকটি গার্মেন্টের কয়েকশ পোশাক শ্রমিক মালিবাগ-রামপুরা সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তারা অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুরসহ দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেন। ঘটনার পর ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে যান চলাচল আবার শুরু হয়।
জানা গেছে, মৃত পলির গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুরে। মীমের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলায়। তার বাবা সোনা মিয়াসহ মগবাজারের পূর্ব নয়াটোলায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তাদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের রামপুরা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) লুবনা মোস্তফা বলেন, সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস ফ্লাইওভার দিয়ে নেমে রামপুরার দিকে যাচ্ছিল। বাসটি ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় সড়ক পারাপাররত দুই নারীকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। আর হাসপাতালে নেওয়ার পথে অপরজনের মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই বাসটি জব্দসহ এর চালককে আটক করা হয়েছে। তবে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও বাসের কাগজপত্রও ঠিক আছে। কিন্তু সহকর্মীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর আশপাশের অন্যান্য পোশাক কারখানার শ্রমিকরা মালিবাগ-রামপুরার প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে অনন্ত ২০টি যানবাহন ভাঙচুরসহ দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। পরে পুলিশ পরিষ্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরো জানান, শ্রমিকদের ছোড়া ইটে মতিঝিল জোনের এডিসি নাজমুন নাহার আহত হয়েছেন। তার চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথমে তাকে খিলগাঁওয়ের খিদমাহ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে নেয়া হয়েছে।  
ঢামেক হাসপাতালে নাহিদার সহকর্মী সুমি জানান, দুপুরের খাবার শেষে ডিউটিতে যাওয়ার পথে বাসচাপায় নাহিদা মারা যান। খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন তিনি।
হাতিরঝিল থানার ওসি আবু মো. ফজলুল করিম জানান, ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় প্রথমে নাহিদকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মিম নামে আরও এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নারী গার্মেন্ট শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সড়কে নেমে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন তাদের সহকর্মীরা। দুটি বাসে আগুনও দেওয়া হয়েছে। দুপুর দেড়টার দিকে মালিবাগ রেলগেট থেকে আবুল হোটেলের মাঝামাঝি জায়গায় ‘সুপ্রভাত’ পরিবহনের একটি বাসের চাপায় ওই দুই নারী নিহত হন বলে রামপুরা থানার ওসি এনামুল হক জানান। দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যুর খবর শুনে গার্মেন্ট শ্রমিকরা মালিবাগের আবুল হোটেলের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন। আশপাশের কয়েকটি গার্মেন্টের কয়েকশ শ্রমিক রাস্তায় নেমে মালিবাগ থেকে রামপুরা অভিমুখী সড়কে অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর এবং দু’টি বাসে আগুন দিয়েছেন।
বিকাল ৫টার দিকে ঘটনাস্থল গিয়ে দেখা যায়, মালিবাগ থেকে রামপুরার দিকে সড়কে একের পর এক ভাঙা গাড়ি পড়ে আছে। মৌচাক রেল ক্রসিং থেকে রামপুরা টিভি ভবন পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। নিহত নাহিদ পারভীন পলি (১৯) ও মীম (১৩) মালিবাগের পদ্মা সিনেমা হলের বিপরীতে এমএইচ গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করতেন। পলির গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায়, মীমের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলায়। মগবাজারের পূর্ব নয়াটোলায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকতেন তারা,জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
যানবাহন ভাঙচুরের খবরে সায়েদাবাদ থেকে উত্তরা-টঙ্গীগামী যানবাহনের পথ আটকে দেয়া হয় খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ির সামনে। এ সময় পুলিশ একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান দিয়ে রাজপথ আটকে দিলে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। যানবাহনগুলো উল্টো ঘুরিয়ে বিকল্প পথে চলাচল করে। যাত্রীসাধারণসহ পথচারীরা পায়ে হেটে মালিবাগ মোড় পর্যন্ত আসে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ