শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সিরাজগঞ্জের ব্যস্ত সড়কে পরিবহনের অবৈধ স্ট্যান্ড

 শাহজাহান তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) থেকে: সিরাজগঞ্জ শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক বাজার স্টেশন মোড়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ৬টি সড়কের সংযোগস্থল এ মোড়ে রয়েছে স্বাধীনতা স্কয়ার, মুক্তির সোপান এবং যুদ্ধকালীন সংগঠক আব্দুল লতিফ মির্জার স্মৃতিস্তম্ভ। মোড়ের মাঝখানে পৌরসভার দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। অথচ বাজার স্টেশন সংলগ্ন পূর্বদিকে নিউ ঢাকা রোডের ওপর উভয় দিকে যথেচ্ছভাবে রয়েছে ঢাকা লাইন, এসআই পরিবহন, অভি পরিবহন, ইউনিক পরিবহন ও স্টারলিট পরিবহনসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটের বেশকিছু পাবলিক সার্ভিস বাসের কাউন্টার। কাউন্টারগুলোর পাশে জিআরপি থানার সামনে একটি মিনি ট্রাকস্ট্যান্ড। প্রতিদিন এসব কাউন্টার থেকে ব্যস্ত সড়কের ওপর অর্ধশত বাস এসে থামছে। যাত্রী উঠাচ্ছে। এতে বাড়ছে যানজট, পথচারীদের ভোগান্তি। অথচ এ সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। 

মুক্তির সোপানের চারদিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার বেশকিছু স্ট্যান্ডও গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধভাবে। স্বাধীনতা স্কয়ারের সঙ্গে এবং উল্টোদিকে রেলস্টেশনের পাশে ব্যস্ততম এ মোড়ে জেলার কাজীপুর ও বেলকুচি-এনায়েতপুর রুটের লোকাল বাসের অস্থায়ী বাসস্টপ থাকায় তাও বিড়ম্বনার কারণ হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে শতাধিক মুদি, ফল ও বিড়ি-সিগারেটসহ অন্যান্য সামগ্রীর অবৈধ দোকানপাট। ফলে গাড়ির হর্ন, ভিড়, ধাক্কাধাক্কি, হকার ও বাস কন্ডাক্টরদের হাঁকডাক- সব মিলে পুরো এলাকা যেন এক নরককু-ে পরিণত হয়েছে। 

অবৈধভাবে রাস্তার ওপর রাখা যানবাহনের কারণে চার রাস্তার গোশালা রেলগেট মোড়ে প্রতিদিন যানজট রয়েছে। 

জেলা শহরে এমএ মতিন ও মিরপুর বাস টার্মিনাল থাকা সত্ত্বেও পৌরসভার নির্ধারিত স্ট্যান্ডের বাইরে বাজার স্টেশন, গোশালা রেলগেট ও কবরস্থানের পাশে পাবলিক বাস, ট্রাক, অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদে নেই কোনো পদক্ষেপ। 

সড়কের ওপর যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা ও তা থেকে অবৈধভাবে টোল আদায়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন ও উচ্চ আদালতের নিষেধ থাকলেও সিরাজগঞ্জ শহরে এর তোয়াক্কা নেই। 

গণমাধ্যমকর্মীরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে 'এটা আমার একার দায়িত্ব নয়' এমন মন্তব্য করেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। 

জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাদি আলমাজি জিন্নাহ এসব পরিবহন স্ট্যান্ডকে অবৈধ বলতেই নারাজ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'বাজার স্টেশনে বাস, ট্রাক ও অটোরিকশার বৈধ স্ট্যান্ড না থাকলে পৌরসভার টোল আদায় করা হচ্ছে কীভাবে?'

জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (অ্যাডমিন) আহসান হাবিব চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'দায় চাপানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রশাসন সত্যিকার অর্থে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আন্তরিক হলে পুরো এলাকার পরিবেশ বদলে যেত। শৃঙ্খলা ফিরে আসত এবং যানজটের কারণে নষ্ট হতো না মূল্যবান কর্মঘণ্টা। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের এসব দেখা উচিত।'

সড়ক ও জনপথ (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী ডক্টর আহাদ উল্লাহ বলেন, গোশালা রেলগেটে মাইক্রোবাস ও ট্রাকের অবৈধ স্ট্যান্ড সম্প্রতি দখলমুক্ত করা হলেও ফের তা দখল হয়ে যায়। জেলা প্রশাসনের এটি দেখা উচিত। 

এদিকে জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা বলেন, 'এসব সমস্যা দীর্ঘদিনের। আমার একার পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়।' কথা হলো পৌর মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তার সঙ্গেও। 

তিনি বলেন, 'এসব নিয়ে আমি একধিকবার জেলা আইনশৃঙ্খলা ও মাসিক উন্নয়ন সভায় উত্থাপন করেছি। তবে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। পৌরসভা, পুলিশ, জেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় করেই অবৈধ স্ট্যান্ডগুলো সরাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ